ভাইকিংদের সাধারণত আমরা স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সমুদ্রচারী যোদ্ধা বা জলদস্যু হিসেবেই জানি। যারা ৮ম শতক থেকে ১১শ শতক পর্যন্ত ইউরোপের এক বিরাট এলাকা জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এদেরকে নর্সম্যান বা নর্থম্যানও বলা হয়।
নতুন একটি গবেষণার ফলে ধারণা করা হচ্ছে, এই ভাইকিংরাই ইউরোপ জুড়ে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে গুটি বসন্ত রোগটি ছড়িয়ে দিয়েছিল।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা উত্তর ইউরোপ থেকে আবিষ্কৃত ভাইকিং কঙ্কালের দাতে গুটি বসন্ত রোগের স্ট্রেইনের সন্ধান পেয়েছে। ফলে জানা যাচ্ছে, প্রায় ১৪০০ বছর ধরে রোগটি মানব জাতিকে আক্রান্ত করে চলেছে।
ছোঁয়াচে এই রোগটি সংক্রামক কণার মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়ায়। এই রোগে আক্রান্তদের মৃত্যু হার ৩০ শতাংশেরও বেশি এবং অন্য এক তৃতীয়াংশ এর ফলে স্থায়ী ক্ষত ও অন্ধত্বে শিকার হয়েছেন।
শুধুমাত্র বিংশ শতাব্দীতেই গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। তবে ১৯৮০ এর দশকে বিশ্বব্যাপী টিকা প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো রোগ হিসেবে গুটি বসন্তকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়।
উত্তর ইউরোপ থেকে প্রাপ্ত ভাইকিং কঙ্কালের দাঁত থেকে গুটি বসন্ত আবিষ্কারের পর এখন বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল ভাইরাসটির নতুন আবিষ্কৃত স্ট্রেইন সমূহের জিনোম সিকোয়েন্স করেছেন। গতমাসে ‘সাইন্স টুডে’ জার্নালে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজের অধ্যাপক এবং কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য লুন্ডবেক ফাউন্ডেশন জিওজেনটিক্স সেন্টারের পরিচালক এস্কে উইলার্সলেভ।
উইলার্সলেভ বলেন, “আমরা ভাইকিং কঙ্কালের দাঁত থেকে নতুন প্রজাতির গুটি বসন্তের সন্ধান পেয়েছি এবং এদের জিনগত গঠনটি বিংশ শতাব্দীতে নির্মূল হওয়া গুটি বসন্তের ভাইরাস থেকে আলাদা। আমরা জানি যে ভাইকিংরা ইউরোপ জুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছিল। ভ্রমণকারীরা যেমন বিশ্বব্যাপী দ্রুত কোভিড-১৯ ছড়িয়েছিল, তেমনি খুব সম্ভবত ভাইকিংরাও গুটি বসন্তে ছড়িয়ে দিয়েছিল।”
তিনি আরো বলেন, “এই কঙ্কালগুলো থেকে প্রাপ্ত ১৪০০ বছরের পুরানো জেনেটিক তথ্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি আমাদেরকে গুটি বসন্তের জন্য দায়ী ‘ভ্যারিওলা ভাইরাস’ এর বিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সাহায্য করছে।”
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অঞ্চল থেকেই গুটি বসন্ত নির্মূল করা হয়েছিল। তবে আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা জুড়েই এর অস্তিত্ব ছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৬৭ সালে গুটি বসন্ত নির্মূল কর্মসূচি গ্রহণ করে। তখন কন্টাক্ট ট্রেসিং কিংবা গণসচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচির মতো গণস্বাস্থ্য বান্ধব নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছিল। যা বর্তমানে করোনা ভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচীর মাধ্যমেই একে চূড়ান্ত ভাবে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছিল।
তথ্যসূত্র: সাইন্স ডেইলি।
টাইমস/এনজে