মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণগুলোর একটি হচ্ছে প্লেগ। মধ্যযুগে প্লেগের কারণে ইউরোপে আনুমানিক ৫০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ফলে মানুষ এর নাম দিয়েছিল ব্ল্যাক ডেথ।
অত্যন্ত বিরল হলেও এই রোগটির অস্তিত্ব কিন্তু এখনো রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এই সপ্তাহে ১ জনের প্লেগ শনাক্ত হয়েছে। এই মাসের শুরুর দিকে নিউ মেক্সিকোয় ২০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্লেগে মারা গেছেন। এই বছর চীনেও প্লেগ সংক্রান্ত বেশ কিছু ঘটনার কথা জানা গেছে।
সাধারণত ‘রেট ফ্লি’ নামের ইঁদুর গোত্রের বিশেষ এক প্রাণীর মাধ্যমে রোগটি ছড়ায়। আক্রান্ত হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে।
লক্ষণ সমূহ-
সাম্প্রতিক সময়ের সংক্রমণের চিত্র
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৩,২৪৮টি প্লেগ আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ৫৮৪ জন মারা গেছে। সব থেকে বেশি প্লেগ সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, মাদাগাস্কার এবং পেরুতে।
সাধারণত তিন ধরণের প্লেগ রয়েছে- বুবোনিক, সেপটিসেমিক এবং নিউমোনিক প্লেগ। নিউমোনিক প্লেগ ফুসফুসকে প্রভাবিত করে, এটি মানুষের থেকে মানুষের মধ্যে সরাসরি সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৭ সালে মাদাগাস্কারে সর্ববৃহৎ প্রাদুর্ভাবের ঘটনা ঘটে। সেখানে ২,৩৪৮টি সংক্রমণের ঘটনা শনাক্ত হয় এবং এতে করে ২০২ জনের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট ম্যাথু ড্রাইডেন বলেন, “এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় প্লেগের অস্তিত্ব রয়েছে। মাঝে মধ্যেই এটি আক্রান্ত পশু বা মাছি থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়।”
প্লেগ সংক্রমণ ও মহামারীর ঝুঁকি কতটা?
এখন পর্যন্ত প্লেগ প্রতিরোধে কার্যকর কোন টিকা নেই। তবে এর চিকিৎসা ও প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ রয়েছে।
আধুনিক অ্যান্টিবায়োটিক স্ট্রেপ্টোমাইসিন দ্বারা রোগটির প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রয়োগ করা হলে এটি রোগীকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। তবে সম্প্রতি মাদাগাস্কারে একটি নতুন বুবোনিক প্লেগ স্ট্রেইন দেখা গেছে যেটির স্ট্রেপ্টোমাইসিন প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে।
ড্রাইডেন মনে করেন, “মধ্যযুগের মতো বর্তমান অ্যান্টিবায়োটিকের যুগে মানুষের মধ্যে প্লেগের মারাত্মক সংক্রমণ এবং বিস্ফোরক প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি খুব কম। কারণ জীবাণুজনিত প্লেগটি এখনো এন্টিবায়োটিক চিকিৎসাক্ষেত্রে সংবেদনশীল।”
সচেতনতামূলক পদক্ষেপ কী হতে পারে?
যেহেতু রোগটি প্রধানত ইঁদুর ও মাছির মাধ্যমে ছড়ায় তাই আমাদের নিজেদেরকে স্ব-উদ্যোগে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। সেইসাথে আমাদের গৃহ পালিত কোন প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়লে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।
টাইমস/এনজে