খুলনায় পথশিশুদের মেহমানখানা

খুলনা নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়ের অভিজাত রেস্টুরেন্ট ‘জেসকো কাবাব’। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম এই নগরীরর বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে বিত্তবান মানুষেরা খাবারের জন্য আসেন। এতে রেস্টুরেন্টে সবসময় ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে এই রেস্টুরেন্ট পরিণত হয় পথশিশুদের মিলনমেলায়।

এমনই এক রাত ছিল গত শনিবার। রাত ৯টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, রেস্টুরেন্টে খেতে আসা বিত্তশালীরা অবাক হয়ে দেখছে, তাদের পাশের টেবিলে বসে একই খাবার খাচ্ছে একদল শিশু। মলিন পোশাক, উস্ক-খুস্ক চুল, তেল চিট চিটে মুখ। দেখে বুঝতে কারোই অসুবিধা হচ্ছে না এরা সবাই পথশিশু।

তবে অন্যদের এই উৎসুক দৃষ্টিতে মোটেই ভ্রæক্ষেপ ছিলো না শিশুদের। সবাই নিজের মনের মতো করে খাবার খাচ্ছে। গ্রিল চিকেনের সঙ্গে সার্ভিস বয়কে কেউ পরোটা দিতে বলছে, আবার কেউ বলছে পানি দিতে। কিছুটা বিরক্ত মুখে সার্ভিস বয়রা খাবার এগিয়ে দিচ্ছে। খাবার দিতে দেরি হওয়ায় বিরক্ত প্রকাশ করছে শিশুদের কেউ কেউ।

সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ‘জেসকো কাবাব’ রেস্টুরেন্টের নামের নিচে আরেকটি ব্যানার ঝোলানো হয়েছে। তাতে একরাতের জন্য লেখা রয়েছে, একরাতের জন্য ‘পথশিশুদের মেহমান খানা’। বাস্তবায়নে খুলনা ফুড ব্যাংকিং কল্যাণ সংস্থা। রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ানো একদল স্বেচ্ছাসেবক।

সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির মেঘ বলেন, আজকে রাতের জন্য রেস্টুরেন্টটি পথশিশুদের মেহমান খানা হিসেবে ভাড়া নেয়া হয়েছে। শিশুরা নিজেদের পছন্দমতো যেটা খুশি খাবে। তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক গ্রাহকের মতোই ব্যবহার করবে রেস্টুরেন্টের সবাই। শিশুরা একপাশে এবং বাইরে থেকে আসা গ্রাহকরা অন্যপাশে বসবে। শিশুরা যেন এটা বুঝতে পারে যে, তারা আলাদা কেউ না।

নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার আনন্দ স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র রিয়াজ জানায়, রাস্তা দিয়ে যেতে অনেক দিন এই রেস্টুরেন্ট দেখেছি। কোনদিন ঢুকিনি। ভেতরটা সুন্দর। খাবারও ভালো। এখানে খেতে কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, খুব ভালো লাগছে। একই স্কুলের লাবণী আকতার টুকটুকি বললো, বড়লোকদের রেস্টুরেন্টে আমাগি খাওয়াবে শুনে বুঝতি পারিনি এখানে নিয়ে আসবে। খুব ভালো লাগছে।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে রেস্টুরেন্টের অধিকাংশ টেবিল শিশুদের পদচারণায় ভরে ওঠে। রেস্টুরেন্টে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সব শিশুর চোখেমুখে বিষ্ময় ফুটে ওঠে। অন্য বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটির পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় তারা। সবার সামনে পর্যাপ্ত খাবার, এরপরও খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি, হাসাহাসিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো রেস্টুরেন্ট। এই চিত্র দেখে আনন্দের ফুলকি ছোটে আয়োজকদের মুখে।


ফুড ব্যাংকিং খুলনা কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন মৃধা বলেন, শনিবার রাতে মোট ৫০ জন শিশু খাবার খেয়েছে। পুরো অর্থ আমরা নিজেরা দিয়েছি। ওদের চোখে-মুখে যে আনন্দ দেখেছি, তাতেই আমাদের প্রশান্তি।

 

টাইমস/এসই/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক দেখে বিএনপির মাথা খারাপ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী May 18, 2024
img
কেন্দ্র দখলতো দূরের কথা, একটি জাল ভোট পড়লেও কেন্দ্র বন্ধ : ইসি হাবিব May 18, 2024
img
আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম May 18, 2024
img
ইন্টারনেট ব্যবহারে এশিয়ায় বেশি পিছিয়ে বাংলাদেশের নারীরা May 18, 2024
img
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা নেই : খুরশিদ আলম May 18, 2024
img
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের May 18, 2024
img
দুই জেলায় বজ্রপাতে ৫ জনের মৃত্যু May 18, 2024
img
স্বাধীনতাবিরোধীরা সুযোগ পেলেই ছোবল মারতে চায় : রাষ্ট্রপতি May 18, 2024
img
সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে : কাদের May 18, 2024
img
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল ঝড়ে সাতজনের প্রাণহানি May 18, 2024