গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে ৪৯টি কম্পিউটার চুরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া এক সহকারী রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে।
এছাড়া তদন্ত কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. নূরউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, গত ১৮ আগস্ট কমিটির সকল সদস্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশের মাধ্যমে সহকারী রেজিস্ট্রার মো. নজরুল ইসলামকে তদন্ত কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ১৯ আগস্ট নজরুল ইসলাম তার অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করে তদন্ত কমিটির প্রধানকে লিখিতভাবে তাকে অব্যাহতি দেয়ার কারণ জানাতে বলেন। এসময় তদন্ত কমিটির প্রধান জানান তিনি লিখিতভাবে কারণ জানাতে বাধ্য নন।
এরই প্রেক্ষিতে মো. নজরুল ইসলাম তদন্ত কমিটির সভাপতিসহ তদন্ত কমিটিকে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন।
পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্য মো. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. নূরউদ্দিন আহমেদের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।
হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, “আমি তদন্ত কমিটির কাউকে কখনোই হুমকি দেয়নি। বরং কম্পিউটার চোর ধরার ক্ষেত্রে আমি সবচেয়ে সক্রিয় থাকা এবং পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার পরও আমাকে তদন্ত কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। হতে পারে চোর ধরাকে বিঘ্নিত করতেই এমনটি করা হয়েছে।”
এদিকে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যকার আলোচনার দুইটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যার একটিতে দেখা যায় সহকারী রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম হিরা তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আব্দুল কুদ্দুস মিয়া, বশেমুরবিপ্রবির রেজিস্ট্রার ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. নূরউদ্দিন আহমেদ, বশেমুরবিপ্রবির প্রক্টর এবং তদন্ত কমিটির সদস্য ড. রাজিউর রহমানের সঙ্গে কথা বলছেন। সেখানে নজরুল ইসলাম তাকে অব্যাহতি দেয়া প্রসঙ্গে তাদের সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলাসহ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন।
অপর ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. নূরউদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান এবং তদন্ত কমিটি প্রধান মো. আব্দুল কুদ্দুস মিয়া কথা বলছেন। যেখানে চিঠির একটা বিষয় নিয়ে প্রক্টর কথা বলাকালীন রেজিস্ট্রার বিষয়টি নিয়ে অন্যভাবে কথা বলা শুরু করেন। এর প্রেক্ষিতে প্রক্টর রেজিস্ট্রারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘স্যার আপনি বেশি কথা বলেন।’
ইতোমধ্যে এই ভিডিওটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান রেজিস্ট্রার ড. নূরউদ্দিন আহমেদকে হুমকি দিয়েছেন এবং রেজিস্ট্রার ড. নূরউদ্দিন আহমেদ ঘটনার বিচার চেয়ে উপাচার্যের নিকট আবেদন করেছেন।
প্রক্টরের হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে রেজিস্ট্রার ড. নূরউদ্দিন আহমেদ জানান, প্রক্টরের একটি আচরণ আমার খারাপ লেগেছে এবং উপাচার্যকে শুধুমাত্র খারাপ লাগার বিষয়টি অবহিত করেছি। ইতিমধ্যে উপাচার্য বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রার স্যার আমার পিতৃতুল্য, আমি তাকে অত্যন্ত সম্মান করি এবং তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে কোনো কথা বলিনি। আমাদের তদন্ত কমিটির মিটিংয়ের প্রয়োজন ছিলো কিন্তু একটি বিষয় নিয়ে আলাপকালে স্যার আলোচনা দীর্ঘায়িত করছিলেন একারণে কথাটি বলেছিলাম।
তদন্তকাজকে বাঁধাগ্রস্ত করতেই একটি মহল বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহার ছুটিতে বশেমুরবিপ্রবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে ৪৯টি কম্পিউটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশ বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থী মাসরুল ইসলাম পনিসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত ১৮ জুলাই মো. নজরুল ইসলাম অভিযুক্ত পনিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করেছেন এবং পনিকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন মো. নজরুল ইসলাম পনিরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। যে কারণে সহকারী রেজিস্টার নজরুল ইসলামকে কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
টাইমস/এইচইউ