সিলেটের বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার খালেরমুখ বাজার থেকে তালতলা বাজার পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তা ১০ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই উপজেলার মোমিনপুর, মীরপুর, তালতলা, বশিরপুর, দৌলতপুর, বনগাও, জামালপুর, আজিজপুর ও নলজুড়সহ প্রায় ১০টি গ্রামের হাজারো সাধারণ মানুষকে এই ১ কিলোমিটার রাস্তা ব্যবহার করে বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও সিলেটে যাতায়াত করতে হয়। সবাইকে গ্রীষ্মে প্রচণ্ড ধুলাবালী আর বর্ষায় কাদাপানি মাড়িয়ে এই রাস্তা পাড়ি দিতে হয়।
এলাকাবাসী জানান, এই রাস্তা দিয়ে দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচল। কিন্তু ৩০ বছর যাবত রাস্তাটির বেহাল দশা। ফলে যাতায়াতের জন্য এক রকম যুদ্ধ করতে হচ্ছে স্থানীয় মানুষদের। দুই উপজেলার মধ্য দিয়ে রাস্তাটি গেলেও বালাগঞ্জ উপজেলার মধ্যে যে অংশ ছিল সে অংশ পাকাকরণ করা হয়েছে। কিন্তু ওসমানীনগর উপজেলার বাকী অংশ (এক কিলোমিটার) ইটসলিং কিংবা পাকাকরণ হয়নি। ফলে জনসাধারণকে গ্রীষ্মে ধুলাবালি আর বর্ষায় কাদাপানি মাড়িয়ে এই রাস্তা পাড়ি দিতে হয়।
জানা গেছে, কিন্ডার গার্টেন থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই রাস্তা ব্যবহার করে থাকেন। মোমিনপুর মহিলা মাদ্রাসা, সপ্তমৌজা তালতলা আজিজপুর মাদ্রাসা, মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রাইম একাডেমী আজিজপুর বাজার, আজিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়, নবগ্রাম হাজী মো. ছাইম উচ্চ বিদ্যালয়, মাদার বাজার এফইউ সিনিয়র আলিম মাদ্রাসাসহ স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা দিগুণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এলাকাবাসীরা বার বার রাস্তাটি সংস্কারের বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি করলেও বরাবরই আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাননি। এজন্য সবাই রীতিমত হতাশ।
আজিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামসুল ইসলাম বলে, প্রায়ই আমাদের ক্লাস কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে বেগ পোহাতে হয়। ধুলা-বালি অথবা পিচ্ছিল এই রাস্তায় চলাফেরা করতে আমাদের অনেক অসুবিধা হয়।
এ বিষয়ে মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কাইয়ূম জানান, ঝড় কিংবা বৃষ্টি হোক আমাদের প্রতিদিনই এ সড়ক ব্যবহার করে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি কর্দমাক্ত এবং বিভিন্ন জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়। যেখানে আমরা বড়দের চলাচল করতে অসুবিধা সেখানে আমার ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা কতটুকু ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করছে। তিনি এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলা যুবলীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পল্লী চিকিৎসক এনামুল হক জানান, অনেকদিন থেকেই রাস্তাটির অবস্থা খারাপ। অসুস্থ হলে গ্রামের লোকজন সেবা গ্রহণ করতে এই রাস্তা দিয়ে আসতে হয়। ফলে শারীরিকভাবে অসুস্থ লোকজন বিশেষ করে বয়স্কদের আরও বেশী অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এলাকার বেশীর ভাগ মানুষ কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী। তাই প্রতিনিয়ত কৃষিপণ্য এই রাস্তা দিয়ে বাজারজাত করা হয়। ফলে ব্যবসায়ীদের অনেক দুর্যোগ পোহাতে হয়। আমরা সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান এর কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি। এ ব্যাপারে তিনি রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি রাস্তাটি সংস্কারের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
উছমানপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. ময়নুল আজাদ ফারুক জানান, আমি আমার জায়গা থেকে অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি এখন পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। আদৌ এই সমস্যার সমাধান হবে কি-না আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নুল হক চৌধুরী বলেন, আমি সড়কটি দেখেছি। এলাকাবাসী যদি রাস্তার আইডি নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেন আমি ইনশাআল্লাহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ ব্যাপারে সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান জানান, এলাকাবাসী কয়েকদিনের মধ্যে যদি সড়কের বিষয়টি নিয়ে আমার সাথে কথা বলেন অবশ্যই আমি গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখব। আমি অতিদ্রুত একজন প্রকৌশলী নিয়ে সড়কটি পরিদর্শন করে আসব। রাস্তাটির সমস্যা অতিদ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
টাইমস/এইচইউ