প্রযুক্তির কল্যাণে চোখের ইশারায় ছবি আঁকছেন ইজেকিয়েল

লন্ডনে বসবাসরত শিল্পী সারা ইজেকিয়েল তার আঁকা ছবিতে জীবনযাপনের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছেন। তবে আর দশজন ছবি আঁকিয়ের মতো হাতে রং-তুলি নিয়ে ছবি আঁকতে পারেন না তিনি। প্রযুক্তির কল্যাণে এই কাজটি করছেন চোখের ইশারায়।

অসুস্থতার কারণে হাত নাড়াতে পারেন না ইজেকিয়েল, তাই ছবি আঁকতে প্রয়োজন এই বিশেষ প্রযুক্তির। তার চোখের নড়াচড়া থেকে প্রযুক্তির কল্যাণে নির্দেশ পৌঁছে যায় কম্পিউটারে, এভাবেই ছবি আঁকেন তিনি।

মোটর নিউরন ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে জীবনের উপর সকল আশা হারিয়ে ফেলতে বসেছিলেন ইজেকিয়েলের। এই আই ট্র্যাকিং প্রযুক্তির কল্যাণে আবারো তিনি তার শৈল্পিক ভাবনার প্রকাশ ঘটাতে পারছেন, আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। 

৩৪ বছর বয়স অবধি তিনি সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন। কিন্তু ২০০০ সালে দ্বিতীয় সন্তান যখন তার গর্ভে ছিল তখন হঠাৎ করেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।

কথা জড়িয়ে আসতে থাকে তার, হাত ক্রমশ অবশ হয়ে যেতে থাকে। চিকিৎসা করেও তেমন কোন উন্নতি হয়নি, কারণ এখন পর্যন্ত মোটর নিউরন ডিজিজের কার্যকর কোন চিকিৎসা নেই।

এ বিষয়ে ইজেকিয়েল বলেন, “আমি সন্তানদের দেখাশুনা করতাম, রান্না করতাম, ঘর পরিষ্কার করতাম এবং নিয়মিত জিমে যেতাম। কিন্তু অসুস্থ হবার পর থেকে আমি খুব নিঃসঙ্গ অনুভব করতে থাকি, তবে প্রযুক্তি আমার জীবনকে আবারো মূল্যবান করে তুলেছে।”

টোবি ডাইনাভক্সের তৈরি “আই গ্যাজ” নামের একটি বিশেষ সিস্টেম ব্যবহার করেন ইজেকিয়েল। আই গ্যাজ প্রযুক্তিটি স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগে অক্ষম লোকদের যোগাযোগ করতে সহায়তা করে।

এর প্রযুক্তিটি প্রজেক্টর, ক্যামেরা এবং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর চোখের মনির গতিবিধি ট্র্যাক করে এবং এর মাধ্যমে স্ক্রিনের কার্সার নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে চোখের ইশারাতে কার্সার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ছবি আঁকতে পারেন। ‘আই গ্যাজ’ বাজারে বিদ্যমান অনেকগুলো যোগাযোগ সহায়ক প্রযুক্তির মধ্যে একটি।

‘পিসফুল ওয়ারিয়র’

ইজেকিয়েল, তরুণ বয়সে আর্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। ২০১২ সালে আই গ্যাজ ডিভাইসটি ব্যবহার করে চিত্রাঙ্কন শুরু করেন, তার প্রথম শিল্পকর্ম “পিসফুল ওয়ারিয়র”। তার বিভিন্ন কাজ যুক্তরাজ্য জুড়ে এবং কাতারে প্রদর্শিত হয়েছে।

তিনি বলেন, “যখন আমি ছবি আঁকি, আমি সম্পূর্ণরূপে আমার কাজে মনোনিবেশ করি। আমার সমস্ত সমস্যা তখন অদৃশ্য হয়ে যায়। আমার চোখের দৃষ্টিতে করা কাজগুলো আমার হাতের কাজগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।”

ইজেকিয়েল আরো বলেন, “আমি বছরের পর বছর ধরে যা করতে পারিনি এই দুর্দান্ত প্রযুক্তিটি তা আবারো সম্ভব করে তুলেছে। প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পী হিসেবে জীবন সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে।”

উল্লেখ্য, প্রয়াত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মোটর নিউরন ডিজিজে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি তার তার চশমাতে লাগানো ইনফ্রারেড সেন্সরের মাধ্যমে যোগাযোগ সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন।

 

টাইমস/এনজে

Share this news on:

সর্বশেষ