মেদ বৃদ্ধির জন্য জিনগত বৈশিষ্ট্য দায়ী

অধিকাংশ লোকেরই ধারণা দেহের মেদ, ওজন ও স্থূলতা বৃদ্ধির জন্য খাদ্যাভ্যাস দায়ী। কিন্তু দেখা যায় যে, অনেকেই পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস নিয়মিত অনুশীলন করার পরও দেহের ওজন ও স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কিন্তু কেন?

গবেষণা বলছে, কেবল খাদ্যাভ্যাসের কারণেই নয়, জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণেও দেহের ওজন, মেদ ও স্থূলতা বৃদ্ধি পায়।

গবেষণায় দেখা যায়, মানবদেহের ডিএনএতে বিশেষ একধরণের জিন রয়েছে, যা ব্যক্তিকে চিকন ও হালকা-পাতলা রাখে। বিশেষ এই জিনগত বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি চিকন লোকদের মধ্যে কম এবং মোটা লোকদের মধ্যে বেশি।

সম্প্রতি ‘পিএলওএস জেনেটিক্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। ওজনের সঙ্গে জিনের সম্পর্ক উদঘাটন করতে এই গবেষণায় ১৪ হাজার লোকের ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয়।

গবেষণা দলের প্রধান ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদাফ ফারুকি বলেন, গবেষণায় কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে, যা মানুষের চিকন হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।

‘গবেষণাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল যারা দেহের ওজন ও স্থূলতা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছেন তাদের সাহায্য করা। কিন্তু দেখা যায়, দেহের ওজন ও স্থূলতার উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ খুবই কম’ বলেছেন প্রফেসর ফারুকি।

তিনি বলেন, মানুষের ওজন নির্ধারণে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ ভূমিকা রাখে জিন, যা আমদের ধারণা থেকেও অনেক বেশি।

তবে এই গবেষণার অন্যতম একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে এটি নির্দিষ্ট করে বলেনি যে, কোন জিন দেহের ওজন, মেদ ও স্থূলতার উপর প্রভাব রাখে। ‘তাই গবেষণাদলের পরবর্তী কাজ হচ্ছে বিশেষ ধরণের জিন আবিষ্কার করা, যা ওজন ও স্থূলতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে’ বলেছেন প্রফেসর ফারুকি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিকাংশ দেশে তিন ভাগের এক ভাগ লোক অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত থাকার পরও চিকন ও হালকা-পাতলা হয়। এদের কিছু অংশ জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে এমন হয়।

তবে ব্যক্তিবিশেষ জীবনযাপনের ভিন্নতাসহ অন্যান্য উপাদানের জন্যও এটা হতে পারে বলে জানান কিংস কলেজ লন্ডন এর জেনেটিক এপিডেমোলোজি বিভাগের অধ্যাপক টিম স্পেক্টর।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অফ জিপি’স এর অনারারি ট্রেজারার ডা. স্টিভ মোলে সিএনএনকে বলেন, মেদবহুল লোকেরা সাধারণত অলস প্রকৃতির হয়। অনেকের এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে এই নতুন গবেষণা। তবে আমরা জানি যে, জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের চেয়ে অন্যান্য উপাদানগুলো যেমন খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম এক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রাখে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, দেহের স্থূলতা বৃদ্ধির জন্য জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন সমানভাবে দায়ী।

তাই ওজন ও স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করতে সুষম খাদ্য খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পান সীমিত করা, ধূমপান না করা এবং পর্যাপ্ত ঘুমানোর পাশাপাশি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন ডা. স্টিভ।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ