শুক্রগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে, ধারণা বিজ্ঞানীদের

গত সপ্তাহে জ্যোতির্বিদদের একটি আন্তর্জাতিক দল শুক্রগ্রহের মেঘের মধ্যে ফসফিনের একটি দুর্লভ অণু আবিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছেন। পৃথিবীতে এই গ্যাসটি কেবল শিল্প-কারখানায় এবং অক্সিজেনমুক্ত পরিবেশে বিকশিত হওয়া জীবাণু দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে অনুমান করে আসছিলেন যে শুক্রের উচ্চ মেঘগুলোতে অণুজীবের অস্তিত্ব থাকতে পারে। ফসফিনের উপস্থিতি এমন ধারণাকে আরও জোরালো করল।

যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম লিডার জেন গ্রিভস বলেন, “আমরা যখন প্রথমবার শুক্রগ্রহে ফসফিনের ইঙ্গিত পেয়েছি, তখন এটি আমাদের অবাক করেছে।” গ্রিভস সর্বপ্রথম জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল টেলিস্কোপের (জেসিএমটি) পর্যবেক্ষণে ফসফিনের লক্ষণ চিহ্নিত করেছিলেন।

তাদের এই আবিষ্কারটি আরও শক্তিশালী ও সংবেদনশীল দূরবীন  চিলির ৪৫ অ্যান্টেনা সংযুক্ত অ্যাটাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (এএলএমএ) ব্যবহার করে নিশ্চিত করা হয়েছে। যন্ত্র দু’টির সাহায্যে শুক্র গ্রহটিকে প্রায় ১ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। কেবলমাত্র উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন দূরবীনগুলো এটি কার্যকরভাবে শনাক্ত করতে পারে।

আন্তর্জাতিক দলটিতে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের গবেষকরা রয়েছেন। তাদের অনুমান শুক্রের মেঘে সামান্য ঘনত্বের ফসফিন বিদ্যমান, প্রতি বিলিয়নে যা প্রায় বিশটি রেণু।

এই গ্যাসটির উৎস খুঁজে পেতে তারা বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করেন। গ্রহটির কোন প্রাকৃতিক অ-জৈবিক প্রক্রিয়া থেকে এটি আসতে পারে কিনা তাও বিশ্লেষণ করে দেখা হয়।

সম্ভাব্য অজৈবিক উৎসের মধ্যে রয়েছে সূর্যের আলো, পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে উড়ে যাওয়া খনিজ, আগ্নেয়গিরি বা বজ্রপাত। তবে এগুলোর কোনটিই এসব ফসফিনের উৎস নয় বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

দলটির মতে ভেনাসে পরিলক্ষিত পরিমাণে ফসফিন (যা হাইড্রোজেন এবং ফসফরাস সমন্বয়ে গঠিত) তৈরি করতে, পার্থিব জীবকে কেবলমাত্র তাদের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতার ১০ শতাংশ কাজ করতে হবে। পৃথিবীর ব্যাকটেরিয়াগুলো ফসফিন তৈরি করতে খনিজ বা জৈবিক পদার্থ থেকে ফসফেট গ্রহণ করে, হাইড্রোজেন যুক্ত করে এবং শেষ পর্যন্ত ফসফিন নির্গমন করে।

শুক্রের যেকোন জীবই হয়তো পৃথিবীর জীবদের থেকে খুব আলাদা হবে। তবে তারাও বায়ুমণ্ডলে ফসফিনের উৎস হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

তথ্যসূত্র: সাইন্স ডেইলি

 

টাইমস/এনজে

Share this news on: