ভারতে কার্যক্রম স্থগিত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ভারত সরকার সংস্থাটির ব্যাংক একাউন্ট অবরুদ্ধ করায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যামনেস্টি।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ভারত সরকার যে সংস্থাটির ব্যাংক একাউন্ট অবরুদ্ধ করেছে, তা তারা ১০ সেপ্টেম্বর জানতে পারে। এর প্রভাবে ভারতে অসংখ্য কর্মীকে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি। এছাড়া অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মানবাধিকার সংক্রান্ত সব ধরণের কার্যক্রম থমকে গেছে।
সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জুলি ভেরার বলেছেন, ভারত সরকারের ভয়ঙ্কর ও লজ্জাজনক পদক্ষেপের ফলে সেখানে মানবাধিকার বিষয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আপাতত থমকে গেছে। তবে ভারতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অঙ্গীকার এবং সম্পৃক্ততার অবসান ঘটেনি। সামনের দিনগুলোতে আমরা ভারতে আরও দৃঢ় ভাবে কাজ শুরু করবো।
এ বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারতের ‘ফরেইন কন্ট্রিবিউশন অ্যাক্টের’ আওতায় নিবন্ধন নেয়নি বলে যুক্তি দেখিয়ে মোদি সরকার আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির ব্যাংক একাউন্ট অবরুদ্ধ করে। কারণ ভারতে কোনো এনজিওর বিদেশি তহবিল নিতে গেলে ওই আইনে নিবন্ধিত হতে হয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যামনেস্টি দাবি করেছে, ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সব নিয়ম মেনেই সংস্থাটি ভারতে কাজ করে আসছিল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অলীক অভিযোগের ভিত্তিতে ভারত সরকার মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে দমাতে চাইছে। অ্যামনেস্টি’র ব্যাংক একাউন্ট অবরুদ্ধ করা ভারত সরকারের নোংরামির শেষ উদাহরণ।
ছবি- দিল্লি দাঙ্গা
সংস্থাটির ভারতীয় অফিস বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির দাঙ্গায় মানবাধিকার লঙ্ঘনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে সোচ্চার ছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ ও উপত্যকায় বৈষম্যের ব্যাপার নিয়েও নিয়মিত কথা বলে আসছিলো সংস্থাটি। যে কারণে কট্টরপন্থী মোদি সরকার অ্যামনেস্টিকে মেনে নিতে পারেনি।
ভারতে নিযুক্ত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক অবিনাশ কুমার বলেছেন, অবিচারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হওয়া ছাড়া আমরা তেমন কিছুই করিনি। তারপরও সরকারের রোষানল থেকে রেহায় মিললো না।
এদিকে এব্যাপারে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অ্যামনেস্টি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকারে অর্থ নিয়েছে, যা ভারতীয় আইনে অলাভজনক কোনো প্রতিষ্ঠান নিতে পারেন না।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৭ সালেও একবার অ্যামনেস্টির ব্যাংক একাউন্ট অবরুদ্ধ করেছিল ভারত সরকার। সে সময় আদালতে গিয়ে অ্যামনেস্টি কার্যক্রম চালানোর অনুমতি পেলেও তাদের সেই ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়।
টাইমস/এসএন