রিউম্যাটয়েড আর্থাইটিসকে বলা হয়ে থাকে অটোইমিউন ডিজিজ। এ রোগে আক্রান্ত হলে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর ফলে ওইসব অঞ্চলে ব্যথা অনুভূত হয়। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ।
রিম্যাটয়েড আর্থাইটিসে আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা বাঞ্ছনীয় এবং রোগীকে বেশ কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। আসুন জেনে নিই বেশ কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস সম্পর্কে যা রোগীকে সুস্থ জীবন যাপনে সহায়তা করবে।
খাবারের বিষয়ে সচেতন হোন
অস্থিসন্ধি কিংবা সম্পূর্ণ শরীরের জন্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি রিউম্যাটয়েড আর্থাইটিস (আরএ) নিরাময় করে না। আপনি এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে থাকলে প্রচুর পরিমাণে শস্য জাতীয় খাবার, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ এবং অন্যান্য ধরণের হালকা আমিষ গ্রহণ করতে হবে। কিছু কিছু খাদ্য ও পানীয় অস্থিসন্ধির ফোলা কমাতে সহায়তা করে, যেমন মাছের তেল, বাদাম এবং চা।
চিনি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। আপনার অস্থিসন্ধির জটিলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে এমন অন্য সব খাবার পরিহার করুন।
সক্রিয় থাকুন
শরীরচর্চা দেহের অস্থিসন্ধি সমূহকে ভালভাবে কাজ করতে সহায়তা করে এবং এর আশেপাশের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে। ওজন হ্রাস করার জন্যেও শরীরচর্চা খুবই ভাল।
ওজন কমে গেলে সন্ধির উপর চাপ কমে যাবে। এক্ষেত্রে ওজন কমাতে কার্ডিও, স্ট্রেংথ ট্রেইনিং ও ফ্লেক্সিবিলিটি এক্সারসাইজ সহায়ক হতে পারে। এক্ষেত্রে আরএ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে আপনার প্রয়োজনীয় শরীরচর্চার ধরণ ঠিক করুন।
প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিন
সুস্থ থাকতে হলে সক্রিয় থাকা যেমন প্রয়োজন তেমনি বিশ্রাম গ্রহণ করাও অত্যন্ত জরুরী। আরএ আক্রান্ত ব্যক্তিরা এমনিতেই অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করতে পারেন।
তাই সক্ষমতার বেশি পরিশ্রম করার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। রাতে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
ফিজিক্যাল থেরাপি নিতে পারেন
এমনকি মাত্র কয়েকটি সেশনের পরেও আপনি হয়তো পার্থক্য বুঝতে পারবেন। ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট আপনার হাড় শক্তিশালী করে তুলতে আপনাকে নিরাপদ অনুশীলন শিখিয়ে দিতে পারেন। এটি অবস্থার উন্নয়ন ও আর্থাইটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ সহায়ক। যাতে আপনি আরও ভালভাবে যেতে পারেন।
ধূমপান বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন
ধূমপান এবং মদ্যপান আপনার আরএ উপসর্গ সমূহকে আরও তীব্র করে তোলে এবং চিকিৎসার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এসব অভ্যাস ত্যাগ করার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ব্যথা কমাতে ঠাণ্ডা বা গরম থেরাপি দিতে পারেন
অস্থিসন্ধির ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ঠাণ্ডা বা গরম থেরাপি ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে মৃদু উষ্ণ পানিতে টাওয়াল বা গামছা ভিজিয়ে সেটি আক্রান্ত স্থানের উপর রাখতে পারেন। আবার আক্রান্ত স্থানে আইস প্যাক জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারেন।
ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করুন
চিকিৎসা আপনার ব্যথা, রোগের তীব্রতা এবং ক্লান্তি কমিয়ে দিতে পারে। তবে এটি রাতারাতি হবে না। চিকিৎসা কার্যকর হতে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
ওষুধ গ্রহণের সম্ভাব্য কতদিনের মধ্যে এর সুফল পাওয়া যেতে পারে। সে বিষয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। উক্ত সময়ের মধ্যে সুফল না পেলে ডাক্তারকে অবহিত করুন।
ডাক্তারের সাথে খোলামেলা পরামর্শ করুন
আপনার জটিলতা, ওষুধের কার্যকারিতা কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কি খাচ্ছেন, কি খাবেন, কোন ধরণের শরীরচর্চা করা উচিত প্রভৃতি বিষয়ে ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের সাথে খোলামেলা পরামর্শ করুন। সব তথ্য জানা থাকলে ডাক্তারের পক্ষে আপনাকে চিকিৎসা সেবা দেয়া, প্রয়োজনে ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করা প্রভৃতি সহজ হবে।
তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি
টাইমস/এনজে