প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কীভাবে সাহায্য করবেন?

প্যানিক অ্যাটাক হলো এমন একটি রোগ যার কারণে একজন মানুষ হঠাৎ অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে যায় এবং ভয় অনুভব করে। এটি খুব কম সময়ের জন্য হলেও এর তীব্রতা ব্যাপক।

প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণগুলো হলো:

তীব্র ভয় পাওয়া,
খারাপ বা ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে চলেছে এমন অনুভূতি,
ঘেমে যাওয়া বা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া,
কাঁপুনি,
হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা হৃদকম্পন,
শ্বাস কষ্ট,
মাথা এবং বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়া।

সাধারণ ভয়ের থেকে প্যানিক অ্যাটাক আলাদা কারণ এখানে বাস্তবিক অর্থে কোন হুমকির সম্পর্ক থাকে না। ওয়াশিংটনের জিগ হারবারের উদ্বেগ বা ভয় বিশেষজ্ঞ এবং ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মী সাদি বিঙ্গহাম এ বিষয়ে বলেন, “দেহ বলছে বিপদ আছে, কিন্তু বাস্তবে তা নেই। অর্থাৎ কোন ব্যাহিক কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে।”

প্যানিক অ্যাটাকের ট্রিগার শনাক্ত করা সব সময় সহজ নয়, তবে যারা একবার প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন তারা একধরনের আতঙ্কে থাকেন। বিশেষ করে জনসম্মুখে আবারও এটি হতে পারে তাদের মধ্যে এমন আতঙ্ক কাজ করে।

প্যানিক অ্যাটাকগুলো খুব অস্বস্তিকর এবং এটি যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে এ অস্বস্তিকে হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কোন প্রাণঘাতী ঝুঁকি বলে মনে করে থাকেন।

পরিচিত কারো প্যানিক অ্যাটাক হলে কী করবেন?

আপনার পরিচিত কারো যদি এ সমস্যা থেকে থাকে তাদের সাহায্য করতে কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে পারেন।

শান্ত থাকুন
এ সময় শান্ত থাকা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সেরা উপায়। প্যানিক অ্যাটাক সাধারণত দীর্ঘ স্থায়ী হয় না। বিঙ্গহাম এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন, “খুব তীব্র অ্যাটাক হলে ৫-১০ মিনিটের মাঝে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।”

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রমণের শিকার ব্যক্তির তখন সময় সম্পর্কে খুব একটা সচেতনতা থাকে না। তারা প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে যায় কিংবা ভাবে যে তারা মারা যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে আপনিও যদি কিছুটা ভয় পেয়ে যান, তবুও এ পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। শান্ত গলায় আশ্বাসের স্বরে তাদের সাথে কথা বলুন।

আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন তা রোগীকে জিজ্ঞাসা করুন

প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত বা অন্য ধরণের উদ্বেগে আক্রান্ত ব্যক্তির এই অ্যাটাক সামাল দেওয়ার নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। আপনি যখন সাহায্য করতে চাইবেন, তখন মনে রাখবেন কোন বিষয়টি সব থেকে বেশি সহায়তা করবে সেটি আপনার প্রিয়জন (আক্রান্ত ব্যক্তি) সব থেকে ভাল জানেন।

তবে প্যানিক অ্যাটাকের সময় তাদের পক্ষে এই বিষয়টি আপনাকে জানানো কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। আপনি যদি তখন তাদের আশেপাশে থাকেন তাহলে কিভাবে তাদেরকে সহায়তা করতে পারেন তা আগে থেকেই জেনে রাখার চেষ্টা করুন।

বিঙ্গহামের মতে, এ পরিস্থিতির সাথে টিকে থাকার লড়াই রোগীদের যৌক্তিক ভাবে চিন্তাভাবনা ও আচরণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তার পরামর্শ হলো, “আপনি এ সময় নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করুন, তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে নেবেন না।”

লক্ষণগুলো জেনে রাখুন

আপনি যদি প্যানিক অ্যাটাকের রোগী না হন তাহলে একটু সময় নিয়ে অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর সাথে পরিচিত হয়ে নিতে পারেন।

প্যানিক অ্যাটাকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য-

উদ্বেগ বা আতঙ্কের অনুভূতি, হাইপারভেণ্টিলেশন বা শ্বাস কষ্ট, শ্বাস রোধের অনুভূতি, একটি তীব্র হৃদকম্পন, মাথা ঘোরা, কাঁপুনি ইত্যাদি।

সবাই একইরকম প্যানিক অ্যাটাক অনুভব করে না, তাই তারা কোন ধরণের উপসর্গ অনুভব করেন তা জিজ্ঞাসা করে নেয়া ভাল।

যত তাড়াতাড়ি প্যানিক অ্যাটাকের পরিস্থিতি বুঝতে পারবেন তত তাড়াতাড়ি রোগীকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিন যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

কথার থেকে কাজে বেশি মনোযোগ দিন

কথার থেকে কাজে বেশি মনোযোগ দিন। পরিচিত স্বস্তিদায়ক কণ্ঠস্বর ব্যক্তি বিশেষে স্বস্তি দিতে পারে। তবে বারবার “চিন্তা করবেন না” বলা বা সব ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞাসা করা থেকে বিরত থাকুন। এ পরিস্থিতিতে আপনার দেওয়া সান্ত্বনায় কাজ নাও হতে পারে। তারা এ নিয়ে আরও বেশি চিন্তিত হয়ে যেতে পারে।

বুঝতে চেষ্টা করুন রোগীর ‘ভয়’ আপনার অর্থপূর্ণ মনে নাও হতে পারে

প্যানিক অ্যাটাক বিভ্রান্তিকর এবং পাশাপাশি এটি ভয়ংকরও হতে পারে। সাধারণত আগে থেকেই প্যানিক অ্যাটাক অনুমান করা শক্ত। প্রায়শই এর পেছনে উল্লেখযোগ্য কোন কারণ থাকে না। ভীষণ ক্লান্তিতে প্যানিক অ্যাটাক আসতে পারে, এমন কি ঘুমের মাঝেও প্যানিক অ্যাটাক আসতে পারে।

এ পরিস্থিতিতে রোগীকে ভয় পাওয়ার মত কিছু না বলাই ভাল। তারা নিজেরাও সচেতন যে প্যানিক অ্যাটাকে জীবনের তেমন কোন ঝুঁকি নেই।

প্যানিক অ্যাটাক অনেক বেশি বিভ্রান্তিকর। কারণ এর প্রতিক্রিয়াগুলো ভয়ের সৃষ্টি করে কিন্তু এতে ভয়ের তেমন কোন কারণ নেই। তাই এরকম তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্য বিব্রত হওয়া বা লজ্জা বোধ করা সাধারণ ব্যাপার বলে মনে করেন বিঙ্গহাম। তবে একজন বিশ্বস্ত সহচর প্যানিক অ্যাটাকের পর স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসতে অনেক সহায়তা করতে পারেন।

প্যানিক অ্যাটাক রোগটিকে স্বাভাবিক ভাবে নিন

লোকেদের পক্ষে মানসিক স্বাস্থ্যের জটিলতা, যেমন প্যানিক অ্যাটাকের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

অনেকে মানসিক জটিলতা নিয়ে কথা বলতে চায় না, কারণ তারা বিশ্বাস করে বাকীদের পক্ষে তাদের পরিস্থিতি বোঝা কঠিন। অন্যদের পক্ষে প্যানিক অ্যাটাকের কারণে সৃষ্ট এই ভয় বোঝা কঠিন আবার অনেকের কাছে এটি অযৌক্তিক মনে হতে পারে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রতিক্রিয়াটি আসলেই ভয়াবহ, আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই আপনার আমার দায়িত্ব তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন


টাইমস/তরী/এনজে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মস্কো উৎসবে বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতল বাংলাদেশি সিনেমা ‘নির্বাণ’ Apr 27, 2024
img
রোববার ৫ নির্দেশনায় খুলছে স্কুল-কলেজ, , বন্ধ থাকবে প্রাক-প্রাথমিক Apr 27, 2024
img
দুই বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিলো আবহাওয়া অফিস Apr 27, 2024
img
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে ইসরায়েল : হামাস Apr 27, 2024
img
গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের পদত্যাগ Apr 27, 2024
img
বাগেরহাটে ট্রাক-ভ্যান মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৩ Apr 27, 2024
img
বিএনপি দাসত্ব করে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য : ওবায়দুল কাদের Apr 27, 2024
img
আজ ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না রাজধানীর যেসব এলাকায় Apr 27, 2024
img
গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা শুরু আজ, কেন্দ্রে থাকবে পানি ও চিকিৎসা ব্যবস্থা Apr 27, 2024
img
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা Apr 27, 2024