নানা উপায়ে কিডনিতে বা মূত্রনালিতে পাথর হতে পারে। প্রস্রাবে অক্সালেট বা ফসফরাস জাতীয় রাসায়নিকের সাথে ক্যালসিয়ামের সংমিশ্রণ ঘটে এটি হতে পারে। এই পদার্থগুলো জমে শক্ত হয়ে গেলে তখন তা কিডনিতে পাথরের সৃষ্টি করে।
আবার ইউরিক অ্যাসিড জমা হয়েও কিডনিতে পাথর তৈরি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত আমিষের বিপাকজনিত কারণে ইউরিক অ্যাসিড নিঃসরণ বৃদ্ধি ঘটে।
আমাদের মূত্রনালির কঠিন পদার্থ নিষ্কাশনের মতো করে তৈরি নয়, তাই কিডনিতে পাথর হলে অসহ্য যন্ত্রণা হওয়া স্বাভাবিক। তবে আশার কথা হলো নির্দিষ্ট কিছু খাদ্য গ্রহণ এবং বর্জনের মধ্য দিয়ে এটি এড়ানো যেতে পারে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
তরল, বিশেষত পানি কিডনিতে পাথর গঠনের রাসায়নিকগুলোকে হ্রাস করতে সহায়তা করে। দিনে কমপক্ষে ১২ গ্লাস পানি পানের চেষ্টা করুন।
সাইট্রাস জাতীয় ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
প্রাকৃতিকভাবে নিঃসরিত সাইট্রেটের কারণে কিডনিতে পাথর গঠন প্রক্রিয়া হ্রাস করতে বা আটকাতে সাইট্রাস জাতীয় ফল এবং এর রস কার্যকর ভাবে সহায়তা করে। সাইট্রাসের সমৃদ্ধ উৎসগুলির মধ্যে লেবু, কমলা এবং জাম্বুরা অন্তর্ভুক্ত।
পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন
ক্যালসিয়াম গ্রহণ কম হলে তা অক্সালেটের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেহেতু এগুলো কিডনিতে পাথর গঠনের সাথে সম্পর্কযুক্ত তাই প্রাকৃতিক উৎস থেকেই ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। দুধ, দই, পনির এবং বিভিন্ন ধরণের চিজ ক্যালসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস।
এছাড়াও শিমের বীজ, গাঁড় সবুজ শাকসবজি, বীজ এবং বাদামেও ক্যালসিয়াম রয়েছে। আপনি যদি গরুর দুধ খেতে পছন্দ না করেন তাহলে ল্যাকটোজ মুক্ত দুধ, সয়া মিল্ক বা ছাগলের দুধ খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
এছাড়াও প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। ভিটামিন ডি শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে। চর্বিযুক্ত মাছ যেমন সলোমন, ডিমের কুসুম এবং পনির ভিটামিন ডি এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমাতে যেসব খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে-
লবণ খাওয়া কমিয়ে আনুন
শরীরে উচ্চ সোডিয়াম মাত্রার কারণে প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম জমা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। তাই খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
অতিরিক্ত সোডিয়াম রয়েছে এমন প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এছাড়াও আপনি কী পান করছেন সে সম্পর্কেও খেয়াল লক্ষ্য রাখুন, কারণ কিছু কিছু সবজির রসে অধিক মাত্রায় সোডিয়াম থাকে।
প্রাণীজ চর্বি গ্রহণ সীমিত করুন
প্রাণীজ আমিষের উৎস যেমন গরু বা খাসীর মাংস, হাঁস-মুরগি, মাছ এবং ডিম আপনার দেহে উৎপাদিত ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে আমিষযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে প্রস্রাবে সাইট্রেট নামক রাসায়নিকের পরিমাণ হ্রাস পায়। সাইট্রেটের কাজ কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়া রোধ করা।
অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন
অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার কিডনিতে পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। ইতিমধ্যে আপনার কিডনিতে পাথর হয়ে থাকলে এ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
অক্সালেটের সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে- চকোলেট, বীট, বাদাম, চা, পালং শাক, মিষ্টি আলু প্রভৃতি।
কোলা জাতীয় পানীয় পান করবেন না
কোলা জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন। কোলায় অতিরিক্ত ফসফেটে রয়েছে, এটি এমন একটি রাসায়নিক যা কিডনিতে পাথর গঠনে সহায়তা করে।
অ্যাডেড সুগার গ্রহণের পরিমাণ হ্রাস করুন
অ্যাডেড সুগার বলতে সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়তে যুক্ত করা চিনি এবং সিরাপ বোঝানো হয়। অ্যাডেড সুক্রোজ এবং অ্যাডেড ফ্রুক্টোজ কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন কেক, কোমল পানীয় এবং জুস থেকে আপনি কী পরিমাণ চিনি গ্রহণ করছেন সেদিকে খেয়াল রাখুন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আমাদেরকে কিডনিতে পাথরসহ বিভিন্ন ধরণের রোগ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে। তবে এটি প্রচলিত চিকিৎসার বিকল্প নয়। তাই যেকোনো জটিলতায় ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন
টাইমস/এনজে