জল, স্থল কিংবা আকাশ পথে ভ্রমণের সময় অনেকের শরীর খারাপ লাগে, মাথা ঘুরায়, বমি বমি লাগে কিংবা বমি হয়। এই জাতীয় অসুস্থতাকে সাধারণত মোশন সিকনেস বা ট্রাভেল সিকনেস বলা হয়ে থাকে। তবে জলপথে ভ্রমণের সময় এরকম অসুস্থতা দেখা দিলে তাকে বলা হয় ‘সি সিকনেস’।
এমনটা কেন হয়?
মোশন বা গতি আমাদের অভ্যন্তরীণ কান, চোখ এবং দেহপৃষ্ঠের টিস্যুসহ বিভিন্ন স্নায়ুতন্ত্রের সাহায্যে মস্তিষ্কের দ্বারা অনুভূত হয়। যখন আমাদের দেহ ইচ্ছাকৃতভাবে সরানো হয় বা গতি লাভ করে (যেমন হাঁটার সময়) তখন সমস্ত কিছু মস্তিষ্কের মাধ্যমে সমন্বিত হয়।
কিন্তু যখন আমারা কোন যানবাহনের মাধ্যমে যাতায়াত করি তখন কার্যত আমরা বসে থাকি কিন্তু আমাদের দেহ গতি লাভ করে। এর ফলে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র একধরণের বিপরীত সংকেত লাভ করে এবং বিভ্রান্ত বোধ করতে শুরু করে।
উপসর্গ সমূহ
মোশন সিকনেসে বিভিন্ন উপসর্গের মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, বমি, ঘাম হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, মাথা ঘোরা, তন্দ্রা, অস্বস্তি প্রভৃতি।
চিকিৎসা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি মৃদু এবং মাঝারি মাত্রার হয়ে থাকে এবং ঘরোয়াভাবেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে মারাত্মক আকার ধারণ করলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। সেক্ষেত্রে কান, স্নায়ু ও নিয়ন্ত্রণ (ব্যাল্যান্স) বিষয়ক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
কিভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করবেন?
সাধারণত যাত্রাকালীন সময়েই এই ধরণের সমস্যা দেখা দেয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাত্রার কিছুক্ষণ পরেই এই উপসর্গগুলো এমনিতেই সেরে যায়। তবে অনেকের কাছেই এর ফলে যাত্রাকালীন সময়টা অসহ্যকর হয়ে ওঠে। বিভিন্ন উপায়ে মোশন সিকনেসের উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকুন
যাত্রাকালে চলন্ত গাড়ির জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতে পারেন, এক্ষেত্রে যে দিকে গাড়ি চলছে সেদিকের দিগন্তে দৃষ্টি রাখুন। এটি গতির ভিজ্যুয়াল পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের দৈহিক ভারসাম্যের অভ্যন্তরীণ অনুভূতি সামঞ্জস্য করতে সহায়তা করে।
চোখ বন্ধ করে থাকুন বা ঘুম দিন
রাতে বা জানালাবিহীন কোন জাহাজে বা জানালা বন্ধ গাড়িতে চোখ বন্ধ করে রাখলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। এটি চোখ এবং অভ্যন্তরীণ কানের মধ্যকার অনুভূতির বৈপরীত্য সমাধান করে।
কিছু চিবাতে পারেন
কোনো কিছু চিবালে এই গতি অসুস্থতা বা মোশন সিকনেস নিয়ন্ত্রণে থাকে। সাধারণ এবং হালকা মোশন সিকনেস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটি সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি হলো কোনো কিছু চিবানো। এক্ষেত্রে আপনি চুয়িংগাম চিবাতে পারেন।
বিশুদ্ধ বাতাস
টাটকা ও শীতল বাতাস মোশন সিকনেস কিছুটা উপশম করতে পারে। তবে দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস বমি বমি ভাব আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
আদা
আদা মোশন সিকনেস হ্রাস করতে সহায়তা করে। আপনি মোশন সিকনেসের উপসর্গ থেকে মুক্তি পেতে আদার তাজা বা শুকনো কাণ্ড চিবাতে পারেন। অনেক সময় যাত্রাপথে শুকনো আদা কিনতেও পাওয়া যায়।
আরো যা যা করতে পারেন
ওষুধ
ঘরোয়া প্রতিকার কার্যকর হলেও মোশন সিকনেস প্রতিরোধের একটি ভাল উপায় ওষুধ। সাধারণত ভ্রমণের আগে সেটি গ্রহণ করতে হয়।
স্কোপোলামাইন- মোশন সিকনেস নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত ওষুধ। ভ্রমণ শুরুর আগে এটি গ্রহণ করতে হয়।
প্রমিথাজাইন- ভ্রমণের ২ ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত। এর প্রভাব ৬-৮ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঘুম পেতে পারে এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাইক্লিজাইন- ভ্রমণের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে সেবন করলে সর্বাধিক কার্যকারিতা পাওয়া যায়। ৬ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের এটি খাওয়ানো উচিত নয়।
ডাইমেনহাইড্রিনেট– এই ওষুধটি ৪-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
ম্যাক্লাইজাইন (বনাইন)- ভ্রমণের ১ ঘণ্টা আগে খাওয়া হলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। তবে ১২ বছরের কম বয়সীদের এটি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে ঘুম ঘুম ভাব ও গলা শুকিয়ে যাওয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে
টাইমস/এনজে