রাতের বেলায় হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেশি হয় কেন?

কাশি এমনিতেই বিরক্তিকর। তার সঙ্গে যদি থাকে শ্বাসকষ্ট, তবে তো অসহ্য বটেই। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশির কারণে মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তো বিরক্তির সীমা থাকে না। কিন্তু হাঁপানি রোগীদের অনেকেই এরকম তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখায় যায় মোট হাঁপানি রোগীর প্রায় ৩০-৭০ শতাংশ রাতের হাঁপানি (নকটাল অ্যাজমা) বা রাত্রিকালীন অ্যাজমা অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে সব হাঁপানি রোগীর ক্ষেত্রে এটি ঘটে না।

যে সব কারণে রাতে হাঁপানি রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে-

অ্যালার্জেনের সংস্পর্শ

শোবার ঘরে ছারপোকা, ধূলিকণা কিংবা বিড়াল বা কুকুরের লোম থাকলে তা থেকে রাতের বেলায় হাঁপানির আক্রমণকে ঘটতে পারে। আমরা প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৯ ঘণ্টা বিছানায় অবস্থান করি; সম্ভাব্য অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসতে এটি যথেষ্ট সময়।

অনেকে অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর রাতে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া অনুভব করে। অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি বিকালে ফুলের রেণু বা পরাগের সংস্পর্শে থাকেন তাহলে ঘুমানোর সময় অ্যালার্জির বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া হিসেবে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

অ্যাসিড রিফ্লাক্স

আমরা যখন শুয়ে থাকি তখন অ্যাসিড খুব সহজে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করতে পারে, এর কিছু অংশ শ্বাসনালীতে প্রবেশ করতে পারে এবং এর ফলে খুসখুসে কাশি দেখা দিতে পারে। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ফলে অনেক সময় আমাদের শ্বাসনালী সংকুচিত হয়। যার ফলে শ্বাস নিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

নাকের জল বা পোস্টনাসাল ড্রিপ

রাতে ‘পোস্টনাসাল ড্রিপ’ বা নাকের জল অনেককেই বেশি সংবেদনশীল করে তোলে। কারণ সোজা হয়ে শুয়ে থাকলে খুব সহজে এই তরল আপনার গলায় নেমে যেতে পারে এবং এর ফলে কাশি সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও শুয়ে থাকার কারণে আমাদের দেহের বিভিন্ন তরল পা থেকে বুকে স্থানান্তরিত হতে পারে, যা শ্বাসনালীতে আটকে যেতে পারে এবং এটি শ্বাস প্রশ্বাসের রাস্তা সমূহকে সংকীর্ণ করতে সক্ষম। এর ফলে বিশেষত রাতে শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ফুসফুসের কার্যক্রমে সার্কেডিয়ান পরিবর্তন

সার্কেডিয়ান রিদম বা আমদের দেহ ঘড়ির কারণে রাতের বেলায় আমাদের ফুসফুস একটু ভিন্নভাবে কাজ করে। সম্ভবত যেহেতু ঐতিহাসিক ভাবে দিনের বেলাতে মানুষ সক্রিয় থাকতে বিকশিত হয়েছিল, তাই আমাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা দিনের বেলা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এর ফলে রাতে ফুসফুস কিছুটা কম সক্রিয় থাকে এবং আমদের শ্বাসনালীর প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তবে হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এর প্রভাব স্বাভাবিক ভাবেই বেশি লক্ষণীয়।

ওষুধ গ্রহণের সময়

যদি আপনার হাঁপানির ওষুধগুলি রাতের বেলা বন্ধ হয়ে যায়, আপনি সম্ভবত রাতে হাঁপানির সম্মুখীন হতে পারেন। আবার রাতে ওষুধ গ্রহণের পর সকাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের একটি বিরতি ঘটে, এর ফলেও ওষুদের কার্যক্রম রহিত হবার পর রাতে হাঁপানি দেখা দিতে পারে।

মানসিক চাপ

একটি গবেষণায় মানসিক চাপ এবং রাতের হাঁপানির মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া গেছে। মানসিক চাপে কারণে  দেহে  নিঃসরিত হরমোন সমূহ প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, তাই গবেষকরা তাত্ত্বিক ভাবে ধারণা করেন যে, মানসিক চাপের ফলে কারও কারও হাঁপানির আক্রমণ ঘটতে পারে।

প্রতিকার

ঘুমের মধ্যে হাঁপানির আক্রমণে জেগে উঠলে আপনার ইনহেলার ব্যবহার করুন। এটি আপনার বিছানার কাছেই রাখুন, যাতে জরুরি প্রয়োজনে সহজেই পেতে পারেন।

শোয়ার সময় শরীরের উপরের অংশ কিছুটা উপরে রাখার চেষ্টা করতে পারেন, এতে অনেকের উপর হয়েছে। আবার অনেকে কাশির সমস্যায় পানি পান করে সাময়িক উপশম পেয়েছেন।

আপনি যদি নিয়মিত রাতে হাঁপানির লক্ষণগুলি অনুভব করেন তবে সমস্যাটি সম্পর্কে আপনার স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন। তিনি আপনার হাঁপানির ওষুধ এবং সেটি গ্রহণের সময় সামঞ্জস্য করতে সহায়তা করতে পারেন।

এছাড়াও শরীরচর্চা রাতের হাঁপানি উপশম করতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে দু’বার শরীরচর্চা করেছে এমন শিশুদের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে রাতের হাঁপানির লক্ষণ হ্রাস পেয়েছে। ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের শরীরচর্চার ফলে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হাঁপানি সমস্যা এবং ঘুমের উন্নতি ঘটে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

 

টাইমস/এনজে/এসএন

Share this news on: