পেশাগত জীবনে ‘মিটিং’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আপনি চাকুরীজীবী কিংবা ব্যবসায়ী যাই হোন না কেন, কর্মজীবনের সাথে ‘মিটিং’ বিষয়টি জুড়ে থাকবেই। ফোর্বসের দেয়া তথ্যমতে গড় হিসাবে উচ্চপদস্থ একজন ব্যবস্থাপক তার মোট অফিস সময়ের প্রায় অর্ধেক সময় বিভিন্ন মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন।
আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ‘মিটিং’ নিঃসন্দেহে একটি অতিপ্রয়োজনীয় অধ্যায়। কিন্তু একথাও সত্যি যে মিটিংয়ের কথা শুনলেই অধিকাংশ সাধারণ কর্মচারীর মনে আতঙ্কের সঞ্চার ঘটে।
গবেষকদের মতে এর অন্যতম কারণ, অধিকাংশ ব্যবস্থাপক কার্যকর মিটিং পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেন না এবং ফলস্বরূপ অফিসিয়াল মিটিংগুলি প্রায়শই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ১৮২ জন সিনিয়র ম্যানেজারদের মধ্যে ৭০% মনে করেন অফিসিয়াল মিটিংগুলি আদতে অনুৎপাদনশীল এবং ফলাফল শূন্য।
বাস্তবতার প্রেক্ষিতে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ অফিসিয়াল মিটিং আসলে সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু না। কিন্তু কিভাবে এই অচলাবস্থার নিরসন এবং অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর মিটিং আয়োজনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করা যেতে পারে?
মিটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা নির্ণয়
মিটিং আয়োজনের পূর্বে এর প্রয়োজনীয়তা কতটা তা নির্ধারণ করা একান্ত জরুরি, নাহলে তা কর্মক্ষেত্রে সময় অপচয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অনেক সময় দেখা যায় যে, মিটিংয়ের পরিবর্তে ব্যক্তিগত ভাবে সহকর্মীর সাথে কথা বলে, ইমেইল প্রেরণ করে, কনফারেন্স কলের মাধ্যমে বা অন্য উপায়ে একই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় মিটিং সমূহ এড়ানো যেতে পারে।
উদ্দেশ্য এবং ফলাফল
একটি কার্যকর মিটিং আয়োজনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর উদ্দেশ্য এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং মিটিং শুরুর আগেই তা অংশগ্রহণকারীদের জানানো। এর ফলে অংশগ্রহণকারীরা সকলেই আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকে, যা অংশগ্রহণমূলক মিটিংয়ের জন্য সহায়ক। এছাড়াও গৃহীত পদক্ষেপ ও আলোচনার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট সংখ্যক হওয়া প্রয়োজন, এতে করে একটি মিটিং নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যেতে পারে।
সময় সম্পর্কে সচেতনতা অবলম্বন
নির্দিষ্ট সময়ে মিটিং শুরু করা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা শেষ করা উচিত। মিটিংয়ের দৈর্ঘ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ঠিক যতটুকু সময় প্রয়োজন ততটুকুই বরাদ্দ করতে হবে। একটি মিটিংয়ে সকল কর্মচারীর অংশগ্রহণ সব সময় প্রয়োজনীয় নাও হতে পারে, সেক্ষেত্রে যাদের অংশগ্রহণ অপ্রয়োজনীয় তাদেরকে আমন্ত্রণ না জানানো বা তাদের অংশগ্রহণ ঐচ্ছিক করে দেয়া যেতে পারে। এছাড়া অসময়ে মিটিং আহ্বান থেকে বিরত থাকা উচিত, যেমন একটি বড় বা গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের মাঝপথে আহূত মিটিং মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতায় বিঘ্নের কারণ হতে পারে।
সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা
একটি অংশগ্রহণমূলক মিটিং তুলনামূলক ভাবে বেশি কার্যকর এবং সফল। তাই মিটিংয়ে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। সেক্ষেত্রে সহকর্মীদের মধ্যে জড়তা বা ভয়ের পরিবেশ দূর করতে মানবিক দিকগুলি তুলে ধরা যেতে পারে। অনেক সময় ব্যক্তিগত জীবনের সামান্য খোঁজ-খবর ও হালকা রসিকতা মিটিংয়ের পরিবেশ সহজ করে তোলে। প্রতিষ্ঠানের মানবিক দিক কর্মচারীর মধ্যে তুলে ধরা প্রয়োজন, এটি কর্ম স্পৃহা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আগে আলোচনা করা
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি প্রথমেই আলোচনা করে নেয়া উচিত। এতে করে কোন কারণে মিটিংয়ের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও মূল বিষয়টি বাদ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। তাছাড়া যেকোনো আলোচনার শুরুর দিকে সাধারণত মানুষের মনোযোগ বেশি থাকে।
প্রত্যেকটি বিষয়ের সারাংশ উল্লেখ করা
প্রত্যেকটি বিষয় আলোচনা শেষে এর সারাংশ উল্লেখ করে সে বিষয়ে আলোচনার সমাপ্তি করা জরুরি। প্রতিটি বিষয় শেষ করার আগে সে বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তও উল্লেখ করতে হবে।
দায়িত্ব অর্পণ ও সময়সীমা নির্ধারণ
আপনি যদি আলোচিত বিষয়গুলির উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন তাহলে প্রত্যাশিত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দায়িত্ব অর্পণ ও কাজ সম্পন্নের সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। অন্যথায় এটি শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে এবং মিটিংয়ের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
নোট সংগ্রহ
একটি মিটিং কার্যকর করে তুলতে হলে প্রয়োজনীয় বিষয় সমূহ লিপিবদ্ধ করে রাখা বা নোট সংগ্রহ অত্যন্ত জরুরি। এর মধ্য দিয়ে মিটিংয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজ হয়।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস, ব্রায়ানট্রাসি , বিজনেস.কম, ও হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ।
টাইমস/এনজে