ফিলিস্তিনের প্রতি নেতানিয়াহুর থেকেও কঠোর হতে পারেন বেনেট

নাটকীয় ভাবে কিছুদিন আগেই দীর্ঘ এক যুগ ইসরাইল শাসনের পর ক্ষমতাচ্যুত হলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটির নব্য গঠিত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী জামিনা পার্টির নাফতালি বেনেট। তিনি ইসরাইলের ১৩তম প্রধানমন্ত্রী।

কথায় আছে, যে যায় লঙ্কায় সে-ই হয় রাবণ। তাই ইসরাইলের নতুন প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনের সাথে শান্তি-প্রক্রিয়ায় যুগান্তকারী কোনও পরিবর্তন নিয়ে আসবেন সে আশা বোধহয় ফিলিস্তিনের কোনও অবুঝ শিশুর মনেও আসে নাই।

অনেকেই আশা করছেন বাইডেন প্রশাসনের চাপে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণে কিছুটা নমনীয় হতে পারেন ইসরাইলের নতুন এই প্রেসিডেন্ট। তবে এর উল্টোটা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে যথেষ্ট, ফিলিস্তিনের প্রতি নেতানিয়াহুর থেকেও কঠোর হতে পারেন কট্টরপন্থী বেনেট।

নীতিগত ভাবে বেনেট ইসরাইলের বসতি সম্প্রসারণ, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরাইলের সাথে একত্রীকরণের কঠোর সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। একইসাথে তিনি দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে দুই-রাষ্ট্র (স্বাধীন ফিলিস্তিন ও ইসরাইল) সমাধানের বিপক্ষে। তাই আপাত দৃষ্টিতে নেতানিয়াহু আর বেনেটের মধ্যে ফিলিস্তিন ইস্যুতে তেমন কোনও পার্থক্যই চোখে পড়ে না।

তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেনেট আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করেন খাইমার আবু সাদা। তিনি গাজা অঞ্চলে অবস্থিত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুষদের চেয়ারম্যান ও অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ও বেনেটের পার্থক্য হলো, আমরা যেমনটা দেখেছি, নেতানিয়াহুকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাছাড়া তিনি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় ছিলেন। কিন্তু বেনেটের অবস্থান অনেক বেশি (জায়নিস্ট) আদর্শ নির্ভর এবং কঠোর।”

রাজনীতিবিদ হিসেবে বেনেট ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের কট্টর সমর্থক হিসেবেই তার অবস্থান তৈরি করেছেন। তাই মধ্যপন্থী, বামপন্থী ও আরব দলগুলির সাথে জোট করায় অনেক ডানপন্থী ইসরাইলি তাকে ইতিমধ্যে বেঈমান হিসেবে আখ্যা দিতে শুরু করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় সমর্থকদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরও কঠোর হতে পারেন বেনেট।

প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ পলিটিকাল পার্টির প্রধান মুস্তফা বারঘৌতি মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের দৃষ্টিকোণ থেকে নেতানিয়াহুর থেকেও জঘন্য হবেন বেনেট। তার মতে, বেনেট ফিলিস্তিন অধ্যুষিত এড়িয়া ‘সি’ কে ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন। এটি অধিকৃত গাজা অঞ্চলের প্রায় ৬৮%। এড়িয়া ‘সি’ অঞ্চলে ইসরাইলি বসতি স্থাপন চালিয়া যাওয়া মানে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে হত্যা করা।

অন্যদিকে জোটের মধ্যপন্থী, বামপন্থী ও আরব দলগুলি থেকে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বেনেটকে তেমন কোন বাধা প্রধান করা হবে বলেও মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। তাদের মতে, জোট টিকিয়ে রাখার জন্যই এদেরকে বেশি সচেতন থাকতে হবে।

এ বিষয়ে উপসাগরীয় রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ যোয়েল জুজানস্কি বলেন, “আমরা এড়িয়া ‘সি’তে বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনার বিপক্ষে মোরেতেজ বা মধ্যপন্থী দলগুলির কাউকে বিরোধিতা করতে দেখলাম না। অথচ তারা নেসেটে উপস্থিত ছিল। এর একটাই মানে দাঁড়ায়- অবৈধ বসতি স্থাপন চলমান থাকবে। হয়তো আগের থেকেও আরও বেশি বল প্রয়োগ করে সেটি করা হবে।”

এই অবস্থায় ফিলিস্তিনের অনেকেই আশা করছেন, অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বেনেটের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়াবের বাইডেন। বাইডেন প্রশাসন ইতিমধ্যে পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তাছাড়া পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি কনস্যুলেট খোলার ঘোষণাও দিয়েছেন বাইডেন।

অন্যদিকে নেতানিয়াহুর পতন কিংবা বেনেটের উত্থানে ফিলিস্তিনিদের জন্য তেমন কোনও ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখছেন না ফিলিস্তিনের অধিবাসীরা। বরং আশঙ্কার কালো মেঘ ইতিমধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করেছে, নেতানিয়হুর থেকেও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন বেনেট।

 

মূল লেখা: আঁচল ভোরা, তথ্যসূত্র: আল জাজিরা।

Share this news on:

সর্বশেষ