আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের সম্ভাব্য শাসক কে হতে যাচ্ছে?

আমেরিকান হামলার মুখে ২০০১ সালে দেশ ছেড়েছিলেন এই ব্যক্তি। ২০ বছর পর সেই ব্যক্তি এখন আফগানিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হয়েছেন। 

তার নেতৃত্বেই ক্ষমতা দখল করেছে তালেবান। 

২০ বছর আগে মার্কিন হামলার মুখে পাকিস্তানে পালিয়েছিলেন বারাদার। এরপর সন্ত্রাসের মামলায় আট বছর পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন। 

শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছরের নির্বাসিত জীবন আর কারাবাসের পর  বিজয়ীর বেশে এখন তিনি আফগানিস্তানে ফিরেছেন। 

তার নেতৃত্বে আফগানিস্তানে নতুন সরকারের ঘোষণা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।


যদিও হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তালেবানের আমির বা শীর্ষ নেতা, কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ইঙ্গিত তা হলো কাবুলে আসন্ন সরকারের প্রধান হতে চলেছেন তার ডেপুটি এই মোল্লাহ বারাদার। 

রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পর রোববার দোহায় বসে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ে তালেবানের সাদা পতাকা সামনে নিয়ে মি. বারাদারই যুদ্ধে বিজয়ের ঘোষণা দেন। 


তরুণ বয়স থেকেই একজন যুদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পান বারাদার। প্রথমে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে, তারপর সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পর ছড়িয়ে পড়া গৃহযুদ্ধে অন্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের নথি অনুযায়ী, মোল্লাহ বারাদারের জন্ম আফগানিস্তানের উরুযগান প্রদেশের উইটমাক নামে একটি গ্রামে। তবে তিনি বড় হন আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারে। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। 

জাতিগত পশতুন বারাদার ১৯৭০ ও ৮০-র দশকে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্যদের তাড়াতে ১০ বছর যুদ্ধ করেন। 

এরপর আফগান গৃহযুদ্ধ চলার সময় মোল্লাহ মোহাম্মদ ওমরের নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে যে কয়েকজন পশতুন মুজাহিদীন তালেবান প্রতিষ্ঠা করেন, মোল্লাহ বারাদার ছিলেন তাদের অন্যতম। 

মোল্লাহ ওমরের ডান হাত ছিলেন তিনি। জানা যায়, তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কও ছিল। মোল্লাহ ওমরের বোনকে বিয়ে করেন বারাদার। 

১৯৯৬ সালে যখন তালেবান কাবুল দখল করে, তখন সেই সরকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন মোল্লাহ বারাদার। ২০০১ সালে আমেরিকার হামলায় তালেবান ক্ষমতা হারানোর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরে উপমন্ত্রী। 

কিন্তু সেই সময আমেরিকানদের তাড়া খেয়ে অন্য অনেক তালেবান নেতার সাথে তিনিও পালিয়ে যান পাকিস্তানে। 

আমেরিকানরা যে ক'জন তালেবান এবং আল-কায়েদা নেতাকে ধরার তালিকা করেছিল, সেই তালিকায় মোল্লাহ বারাদারও ছিলেন। 

২০১০ সালে করাচীতে পাকিস্তানের পুলিশ মোল্লাহ বারাদারকে আটক করে। সে সময় পত্র-পত্রিকায় যে ছবি ছাপা হয়েছিল, তাদে দেখা যায় তাকে লোহার চেন দিয়ে হাত বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


সন্ত্রাসের মামলায় আট বছর পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন মোল্লাহ বারাদার। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

২০১৯ সালে দোহায় গিয়ে তালেবানের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব নেন মি. বারাদার। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকার সাথে চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে তিনিই সই করেন। 

গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তালেবানের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মোল্লাহ বারাদারকেই সারা বিশ্বের লোকজন দেখেছে। 

এখন তিনি হবেন আফগানিস্তানের পরবর্তী প্রধান এমন গুঞ্জন সত্য হচ্ছে অল্প কিছু সময় পরে।

Share this news on: