অবৈধ বাল্কহেডের ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল

নৌপথে পণ্য বহনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাহনের নাম বাল্কহেড। প্রচলিত ভাষায় ‘ভলগেট’ হিসেবে পরিচিত এসব নৌযান। চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেল দিয়েই বাল্কহেড প্রবেশ করে কর্ণফুলী নদীতে। বর্তমানে লাইটার জাহাজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত পণ্যবাহী এ ধরনের তিন শতাধিক অবৈধ বাল্কহেড ঝুঁকিতে ফেলছে বন্দর চ্যানেলকে।

বাল্কহেডগুলো এমনভাবে তৈরি, পণ্যবোঝাই করলে নৌযানটি পানিতে প্রায় ডুবে যায়। বিশেষ করে বালুভর্তি বাল্কহেড চলাচল করলে সামান্য দূর থেকেও দেখা যায় না। একইভাবে বহির্নোঙর থেকে মাদার ভ্যাসেল থেকে কয়লা কিংবা পাথরবাহী বাল্কহেড সমুদ্রপথেই দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছে। বিশেষ করে পাথর নিয়ে রাজবাড়ি, মীরসরাই, কুতুবদিয়া, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে। আবার বন্দরের মধ্য দিয়ে সদরঘাট, জুট র‌্যালি, গ্যাস র‌্যালি ঘাটেও পাথর খালাস করে। মহেশখালী পাওয়ার হাব, কুতুবদিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের উন্নয়ন কাজের নির্মাণসামগ্রী বহনে বেশিরভাগ ব্যবহার হয় বাল্কহেড।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ভেল্লাপাড়া সেতু লাগোয়া দক্ষিণ পাশেই ‘আল মাহাদী’ নামের একটি বাল্কহেড থেকে পাথর আনলোড করে ট্রাকে ভর্তি করা হচ্ছে। এজন্য শিকলবাহা খালের পাড়ে ক্রেনবাহী বার্জ যুক্ত করা হয়েছে। বার্জের ক্রেন দিয়ে বাল্কহেড থেকে সরাসরি ট্রাকে পাথর আনলোড করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতে বহির্নোঙর অবস্থান করা মাদার ভ্যাসেল থেকে লোড করা হয় এ বাল্কহেড।

অভিযোগ উঠেছে, অবৈধ বাল্কহেড দিয়েই বহির্নোঙর হতে মাদারভ্যাসেল থেকে কয়লা, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য খালাস নিচ্ছে শিপ হ্যান্ডলিংয়ে জড়িত থাকা একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। আবার অবৈধ বাল্কহেডের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে শুধু জরিমানা করেই দায় সারছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বাল্কহেডকে লাইটারেজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বন্দর চ্যানেলকে নিরাপদ করতে এসব বাল্কহেডের চলাচলরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী নদী ঘিরে বালু ব্যবসায়ীরা মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলা থেকে অবৈধ বাল্কহেড সংগ্রহ করে বালুবোঝাই ও পরিবহন করে আসছে। কর্ণফুলী নদী থেকে বালুবোঝাই করে এসব বাল্কহেড শিকলবাহা খাল, ভেল্লাপাড়া, মুরালী খাল, সাঙ্গু নদী, চানখালী খাল, মিলিটারিপুল এলাকায় বালু বহন করে। আবার কয়েক বছর ধরে আমদানিকৃত কয়লা, পাথর, সারের মতো বাল্ক পণ্য লাইটারিংয়ের কাজেও এসব বাল্কহেড ব্যবহার করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের কারিগরি নকশা ছাড়াই মিস্ত্রি ও ওয়েল্ডারের পরিকল্পনায় এসব বাল্কহেড নির্মাণ করা হচ্ছে। যারা এ নৌযান তৈরির সঙ্গে জড়িত তাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও নেই। নির্মাণকারী ডকইয়ার্ডগুলোরও কোনো বৈধ অনুমতির কাগজপত্র নেই। এমনকি এসব নৌযানের কোনো হুইল থাকে না।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মিথিলা হাতে উঠলো ভারতের ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার May 04, 2024
img
আট দফা কমার পর বাড়লো স্বর্ণের দাম May 04, 2024
img
মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী May 04, 2024
img
সুন্দরবনের গহীনে ভয়াবহ আগুন May 04, 2024
img
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার May 04, 2024
img
আইপিএলে প্লে অফে ওঠার দৌড়ে এগিয়ে যারা May 04, 2024
img
শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে যাত্রীরা, ৬ ট্রেনের যাত্রা বাতিল May 04, 2024
img
সরকার গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করছে: প্রতিমন্ত্রী May 04, 2024
img
শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বাড়াতে কাজ করছে সরকার : শিক্ষামন্ত্রী May 04, 2024
img
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস May 04, 2024