ভুয়া এনআইডি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি চক্র গ্রেফতার

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা শিক্ষা সনদ; গুরুত্বপূর্ণ এসব কাগজের যেটাই প্রয়োজন পড়ুক, মুহূর্তেই ‘বানিয়ে দিতো’ একটি চক্র। তবে এগুলোর কোনোটাই আসল নয়, জাল। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে এ ধরনের জালিয়াতি করে আসছিল চক্রটি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মিয়ানমারের বেশ কিছু বাস্তুচ্যুত নাগরিক (রোহিঙ্গা) এক শ্রেণির অসাধু চক্রের মাধ্যমে ভুয়া এনআইডি কার্ড পায়। এছাড়া কয়েকজন জঙ্গি সদস্য আত্মগোপনে থেকে নিজেরে নাম পরিচয় পরিবর্তন করে এনআইডি কার্ড নেয়। সেই কার্ড ব্যবহার করে তারা পাসপোর্ট তৈরি করে বিভিন্ন দেশে যাওয়ারও চেষ্টা করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই জালিয়াত চক্রকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।’

সোমবার (২১ মার্চ) র‌্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর মালিবাগ, বাসাবো, শাহজাহানপুর ও কোতয়ালী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এই প্রতারণা চক্রের মূলহোতা মো. গোলাম মোস্তফা (৬০) এবং তার সহযোগী মো. জালাল বাশার (৫৪), মো. মুসলিম উদ্দিন (৬৫), মো. মিনারুল ইসলাম (মিন্নি) (২২)ও মো. তারেক মৃধাকে (২১) গ্রেফতার করা হয়।

এসময় তাদের কাছ থেকে দুটি কম্পিউটার, ২ হাজার ৪৬০টি বিআরটিএ’র জাল রশিদ, ২৬টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি ল্যাপটপ, একটি ক্যামেরা, ১৮টি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৮০টি সাদা রঙের প্লাস্টিকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির ব্ল্যাংক কার্ড, ৫০টি স্বচ্ছ কার্ড হোল্ডার, দুই রিল সিকিউরিটি লেমিনেটিং পেপার, একটি কার্ড প্রিন্টার, চারটি সফ্টওয়্যারের সিডি, চারটি পেনড্রাইভ, পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং নগদ ২ হাজার ৮শ টাকা উদ্ধার করা হয় বলেও জানায় র‌্যাব।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতারকৃতরা ৫-৭ জনের একটি চক্র। তারা গত ৮-১০ বছর ধরে ভুয়া এনআইডি কার্ড, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য জাল নথিপত্র তৈরি করে আসছে। গ্রেফতারকৃত মোস্তফা এই চক্রের মূলহোতা বাকীরা তার সহযোগী।

চক্রটির কাজের বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন নির্বাচন অফিস ও বিআরটিএ অফিসের সামনে অবস্থান করে গ্রাহকদের টার্গেট করতো। পরবর্তী সময়ে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়ে প্রতারণা করতো। বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জনে তারা হুবহু জাল প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ও মানি রিসিট বিআরটিএ ও বিভিন্ন ব্যাংকসহ ভুয়া সীল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহককে প্রদান করতো। একইভাবে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপেও চটকদার বিজ্ঞাপন পোস্ট করতো।

তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলমান বলেও জানান তিনি।

Share this news on:

সর্বশেষ