যেভাবে মানবসেবায় অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র পরিচালক ও একজন মানবাধিকার কর্মী। বর্তমান বিশ্বের বিখ্যাত সেলিব্রেটিদের একজন। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি জাতিসংঘ শরনার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করেছেন।

জোলি ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মা দুজনই অভিনয়জগতের। তাই পরিবারের প্রভাবেই অভিনয় জগতে তার পথ চলা।

১১ বছর বয়সেই তিনি লি স্ট্রাসবার্গ থিয়েটার ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। এখান থেকেই তার অভিনয়জীবনের যাত্রা শুরু।

পরবর্তীতে তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম স্টাডিজ বিষয়ে পড়াশুনা করেন। ১৬ বছর বয়স থেকে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মডেলিং শুরু করেন এবং কিছু মিউজিক ভিডিও করেন।

তবে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর রমণী জোলির শৈশব সুখকর ছিল না। কারণ তিনি খুব চিকন ছিলেন এবং চশমা পরতেন বলে তার সহপাঠীরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করত।

তাছাড়া বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। তাই তার কৈশোর কেটেছে চরম হতাশায়।

১৯৯৩ সালে ‘সাইবর্গ ২’ ফিল্মে অভিনয়ের মাধ্যমে তার পেশাদার চলচ্চিত্রের কর্মজীবন শুরু হয়। এ সময় বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। তবে চলচ্চিত্রগুলো বাণিজ্যিকভাবে খুব একটা সফল না হওয়ায় তিনি তেমন খ্যাতি পাননি।

১৯৯৭ সালে তিনি ‘জর্জ ওয়ালেস’ মুভিতে অভিনয় করে বাজিমাত করেন। এ ছবিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী গভর্নর আলাবামার দ্বিতীয় স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার পান।

সেই থেকে হলিউডে জোলির জয়রথ শুরু। একে একে তিনি ‘গিয়া কারঙ্গি’ (১৯৯৮), ‘দ্য বোন কালেক্টর’ (১৯৯৮), ‘গার্ল ইন্টারাপ্টেড’সহ (১৯৯৯) বেশকিছু ছবিতে মূল অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করেন।

‘গার্ল ইন্টারাপ্টেড’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে তিনি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড ও অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসহ তিনটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেন।

অপরূপ সৌন্দর্য আর আবেদনময়ী চেহারার জন্য হলিউড ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

২০০০ সালে ‘লারা ক্রফট: টম্ব রাইডার’ ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন জোলি। এটি তার অভিনিত বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে সফল ছবি। ছবিটি ওই বছরে হলিউডের বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে সফল ছবির স্বীকৃতি পায়। এভাবে জোলি হয়ে ওঠেন হলিউডের সবচেয়ে দামি তারকাদের একজন। তিনি যে ছবিতেই অভিনয় করেছেন তা বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছে।

তার অভিনিত সফল চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে বেউলফ (২০০৭), ওয়ান্টেড (২০০৮), কুং ফু পান্ডা (২০০৮), সল্ট (২০১০), মেইলফিসেন্ট (২০১৪) ইত্যাদি।

এছাড়া ‘অ্যা প্লাস ইন টাইম’ (২০০৭), যুগোস্লাভ যুদ্ধ নিয়ে ‘ইন দ্য ল্যান্ড অফ ব্লাড এন্ড হানি’(২০১১) ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ‘আনব্রোকেন’সহ (২০১৪) বেশ কিছু ছবির সফল পরিচালনা করেছেন জোলি।

লারা ক্রাফট ছবিতে অভিনয়ের ফলে মানবসেবামূলক কাজের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’ এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে দায়িত্ব পান এবং এ কাজে তিনি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি ২০১২ সালে সাবেক হাইকমিশনার অ্যান্তনিয় গুতেরেসের বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করেছেন।

জোলি সুদানের দারফুর, সিয়েরালিওন ও আফগানিস্থানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন এবং মানবসেবায় তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে সুবিধা বঞ্চিত শরণার্থী শিশুদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন তিনি।

তিনি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন এবং শিশুদের জন্য শিক্ষানীতি প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছেন।

২০১১ সালে তিনি আইনজীবীদের নিয়ে ‘জোলি লিগ্যাল ফেলোশিপ’ নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি উন্নয়নশীল দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

জোলি তার সমস্ত আয়কে তিন ভাগ করেছেন। যার এক ভাগ ভবিষ্যত সঞ্চয়ের জন্য, আরেকভাগ ব্যক্তিগত খরচের জন্য এবং অবশিষ্ট এক ভাগ মানবসেবায় ব্যয় করার জন্য বরাদ্দ রেখেছেন।

এভাবেই পেশাগত জীবনের বাইরে গিয়ে বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তায় নিবেদিত হয়ে পড়েন হলিউডের সবচেয়ে সুন্দরী অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।

Share this news on:

সর্বশেষ