ভোলা সরকারি কলেজে ত্রুটিপূর্ণ চারতলা ভবন নির্মাণে অনিয়মের ঘটনায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের কোন সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি।
ভোলা অঞ্চলের সাবেক এ নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রমাণ পায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। ফলে বিভাগীয় মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি তাকে অব্যাহতি দিয়ে বলেছে, তদন্ত চলাকালে তিনি (প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার) লিখিত বক্তব্য দাখিল করেছেন এবং বক্তব্যের সমর্থনের প্রমাণক সংযুক্ত করেছেন। এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যা ও প্রমাণকসমূহ সন্তোষজনক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এদিকে ইইডির মূল অফিসে প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নিজের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধিসহ নানা ইস্যুতে জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীসহ মাঠ পর্যায়ের দক্ষ প্রকৌশলীদের নানাভাবে হয়রানি ও কোণঠাসা করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতিষ্ঠানে কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ প্রকৌশলীদের।
কি আছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ভোলা সরকারি কলেজের ভবনটির পাঁচতলা ভিতবিশিষ্ট প্রথম তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন করে হস্তান্তর করা হয়। এরপরই ভবনটির নিম্নমানের নির্মাণ কাজ চিহ্নিত হয়। কাজে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ইইডি কর্তৃপক্ষ উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে। ওই বছর ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের চতুর্থ তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়। ইইডির পরিদর্শন ও তদন্ত কমিটি ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন জমা দেয়, যাতে নির্মাণ কাজে বড় ধরনের অনিয়ম শনাক্ত হয়।
জানা গেছে, ভোলা কলেজের ভবন নির্মাণের সময় ইইডির ‘ভোলা অঞ্চল’র নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক (ডিপি) মামলা করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে দেখা যায়, নিম্নমানের কাজের পেছনে সরাসরি সম্পৃক্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা জড়িত থাকলেও ইইডির প্রধান কার্যালয়ের একটি গ্রুপ নিজেদের স্বার্থে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে।
তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ভোলার এ ভবন নির্মাণের ঘটনায় চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারকে ফাঁসানের চেষ্টা করে। ইইডির বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শাহ নাইমূল কাদেরের বিরুদ্ধেও উঠেছে একই অভিযোগ। দপ্তরে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারকে কোণঠাাসা করতে একটি পক্ষ এখনো মন্ত্রণালয়ে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। যারা দপ্তরে প্রধান প্রকৌশলীর ‘কাছের লোক’ হিসেবে পরিচিত।
তবে এরই মধ্যে সামনে এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। ভোলার এ ভবন নিয়ে ইইডিতে নানা তৎপরতার প্রেক্ষাপটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-১) ড. জাকির হোসেন আকন্দকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছিল তদন্ত কমিটি। কমিটির অপর সদস্যরা ছিলেন যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-২) সরোজ কুমার নাথ, ইইডির নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিজাইন) মো: জয়নাল আবেদীন, ইইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মুয়াজ্জেম হোসেন, মাউশির পরিচালক প্রফেসর ড. একিউএম শফিউল আযম, মাউশির প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর মুহম্মদ নাসির উদ্দিন এবং ইইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সমীর কুমার রজক দাস।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মো: দেলোয়ার হোসেন নির্বাহী প্রকৌশলী পদে ১৯/০৭/২০১১ হতে ১১/১২/২০১৪ পর্যন্ত ভোলা জেলায় দায়িত্বরত ছিলেন। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার বিষয়ে তিনি সাইটে আনীত রড, সিমেন্ট, ইট, বালির ল্যাবরেটরি টেস্ট সম্পাদন করিয়েছেন। তার অগোচরে সংঘটিত মানহীন/ নিম্নমানের কোন কাজের দায়ভার সংশ্লিষ্ট উপসহকারী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের উপর বর্তায়। অধিদপ্তরের প্রকৌশলীবৃন্দের তদারকি ছাড়াও কলেজটির অধ্যক্ষ মহোদয়কে তদারকির জন্য একটি কমিটি গঠনের নিমিত্তে ২৮/১২/১২ খ্রি. তারিখে অনুরোধ করেন তিনি।’
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আলমগীর হোসেনকে এবং প্রকৌশলী (পরবর্তীতে মৃত) মোঃ হাবিবুর রহমানকে পত্রদ্বারা একাধিকবার অনুরোধ করেছিলেন প্রকৌশলী দোলায়ার হোসেন। সহকারী প্রকৌশলী নির্মাণ কাজটির সাইট পরিদর্শনে প্রায়শই অনীহা প্রকাশ করেছেন; যা তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মহোদয় আবদুল্লাহিল আজাদকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে ভোলা জেলায় দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন প্রকল্প/কর্মসূচির অধীনে ১২৮টি কাজ বাস্তবায়নাধীন ছিল। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীবৃন্দ ইস্যুকৃত পরিমাপ বহিতে বিভিন্ন আইটেমের সম্পাদিত কাজের বিস্তারিত ও পূর্ণাঙ্গ পরিমাপ (Measurement) ও পরিমাণ (Bill of Quantity) লিপিবন্ধ (Entry) করার পর বিল পরিশোধের জন্য সুপারিশ করেছেন।’