সৌন্দর্যের লীলাভূমি ফয়’স লেক

সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশের সবুজ সমারোহ মুগ্ধ করে আমাদের মনকে। তাইতো কবি বলেছেন “সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে, সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে”। বাংলাদেশের এই সৌন্দর্যের খানিক অংশীদার চট্টগ্রামের ফয়’স লেক।

ফয়’স লেক মানবসৃষ্ট একটি লেক। চট্টগ্রামের পাহাড়তলি রেলস্টেশনের অদূরে খুলশী এলাকায় এর অবস্থান। ১৯২৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে খনন করা হয় লেকটি। তখন এর নাম ছিল পাহাড়তলী লেক। পরবর্তীতে ইংরেজ রেল প্রকৌশলী ফয়-এর নামে ফয়’স লেক নামকরণ করা হয়। ৩৩৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই লেকটি পাহাড়ের এক শীর্ষ থেকে আরেক শীর্ষের মধ্যবর্তী একটি সংকীর্ণ উপত্যকায় আড়াআড়িভাবে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সৃষ্ট।

যা দেখতে পাবেন
ফয়’স লেক বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র। এখানে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ বিদেশী ও দেশীয় পর্যটক ঘুরতে আসেন। এই লেকে দেখার মতো রয়েছে অনেক কিছু। শিশুদের জন্য যেমন নানা রকম রাইডের ব্যবস্থা আছে তেমনি বড়রাও খুঁজে পাবেন লেক, পাহাড় সব মিলে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এই লেক অঞ্চলের চারদিকে পাহাড় আর মাঝখানে রয়েছে অরুনাময়ী, গোধূলি, আকাশমণি, মন্দাকিনী, দক্ষিনী, অলকানন্দা নামের হৃদ। হ্রদের পাড়ে যেতেই দেখা মিলবে সারি সারি নৌকা। নৌকায় যেতে মিনিট দশেক লাগবে। তার পরই দেখা মিলবে চমৎকার রিসোর্ট। রিসোর্টের দুই দিকে সবুজ পাহাড়, মাঝে মধ্যে দু-একটি বক এবং নাম না জানা হরেক রকম পাখি। এর সাথে রয়েছে মনোরম পরিবেশে হরিণ বিচরণ স্থান। পর্যটক আকর্ষণ করার জন্য ফয়’স লেকের প্রবেশদ্বারে একটি ছোট চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হয়েছে। তবে ফয়’স লেকের মূল আকর্ষণ নিঃসন্দেহে লেকের সৌন্দর্য ও তার পার্শ্ববর্তী পাহাড়।

বর্তমানে লেকটিকে কেন্দ্র করে একটি চিত্তবিনোদন পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। চিত্তবিনোদন পার্কটি কনকর্ড গ্রুপ দ্বারা নকশা করা। লেকে নৌকা ভ্রমণ, ল্যান্ডস্কেপিং, রেস্টুরেন্ট, ভাসমান ধাপ কনসার্ট, নাটুকে হাটার পথ এবং অন্যান্য অনেক মজার ও উপভোগের জিনিস রয়েছে। দর্শনার্থীরা লেকটির রোমহর্ষক দৃশ্য উপভোগের জন্য নৌকাভ্রমণে যেতে পারেন। চিত্তবিনোদন পার্কে ২টি উচ্চ স্লাইড আছে আর সেগুলো হলো উচ্চ গতির রোলার কোষ্টার ও বাম্পার বোট। এখানে একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র আছে, যেখানে বিভিন্ন বয়সী ও রুচির মানুষের জন্য কিছু না কিছু আছে। ‘সী ওয়ার্ল্ড’ হচ্ছে ফয়’স লেকের একটি জল থিম পার্ক। স্প্লাশ পুল, ওয়াটার কোষ্টার রাইডার এবং বিশ্বমানের থিম পার্ক হিসেবে যা যা আশা করা যায় তার সবই সী ওয়ার্ল্ডে আছে।

ফয়’স লেকের পাশেই অবস্থিত চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানা। এছাড়াও দর্শনার্থীরা ইচ্ছা করলে কটেজ ভাড়া করে থাকতে পারেন। ফয়’স লেকের আশেপাশের মনোরম পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে এখানে প্রতিবছর দেশি বিদেশী বহু পর্যটক ছুটে আসেন।

লেকে প্রবেশ ফি ২৫০ টাকা। প্রতিদিন সকাল সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে লেক খুলে দেয়া হয়। শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

যাওয়ার উপায়:

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহরে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের যে কোনো জায়গা থেকে খুব সহজেই ফয়’স লেক যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে সড়কপথে টি আর ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, গ্রিনলাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজের এসি বাস যায় চট্টগ্রামে। ভাড়া ৯৫০ থেকে ১,২৫০ টাকা। এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের সাধারণ মানের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

রেল পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ২০ মিনিটে, মহানগর গোধুলী ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩ টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ছাড়ে রাত এগারোটায়। শ্রেণি ভেদে ভাড়া ১৩৫ থেকে ১,০৯৩ ভাড়া।

এছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা এয়ালাইন্স, নভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও ইউনাইটেড এয়ারের বিমান যায় চট্টগ্রামে।

থাকার ব্যবস্থা: থাকার জন্য চট্টগ্রামে রয়েছে বেশ কিছু ভালোমানের আবাসিক হোটেল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- হোটেল গোল্ডেন ইন (০৩১-৮১৩৫৯৮/৭২৭২৯৯), হোটেল টাওয়ার ইন ইন্টা: লি (০৩১-৮৪২৬৯১-২), হোটেল লর্ডস ইন প্রা: লি (০৩১-২৫৫২৬৭১-৪), হোটেল সিলমুন প্রা: লি (০৩১-৬২৮৩০২/৮৪০৭৫৫), সেঞ্চুরি পার্ক লি (০৩১-২৫৫০৩১৩)। 

 

টাইমস/এসআর/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ