জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিপ্লব (৫১) মারা গেছেন নৌকা ডুবিতে। এমনটাই বলছে পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এদিকে, দুরন্তের পরিবার পুলিশের তদন্তের সঙ্গে একমত নন। তারা দাবি করছেন, তাকে খুন করা হতে পারে।
দুরন্তের মৃত্যু বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তের সবশেষ অগ্রগতি বলছে, মর্নিং সান-৫ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিপ্লব (৫১) মারা গেছেন। লঞ্চটির তিনজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে রয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, নৌপুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এর একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাফিন মাহমুদও জানিয়েছেন, দুরন্ত বিপ্লব নৌকাডুবিতে নিহত হয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুরন্ত বিপ্লব গত ৭ নভেম্বর বিকেল ৪টা ৪৭ মিনিটে কেরানীগঞ্জের বড় বাকতার নিজের খামার থেকে বের হয়ে ৫টা ১৭ মিনিটে জিঞ্জিরা ফেরিঘাটে যান। ফেরিঘাটে নেমে তিনি হেটে বটতলা ঘাটের দিকে আসেন। বটতলা ঘাট থেকে তিনি শামসু মাঝি (৬৫) নামে একজনের নৌকায় ওঠেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, দুরন্ত বিপ্লবের মৃতদেহ উদ্ধারের সময় খালি পা ছিল। শামসু মাঝিকে ঢাকায় নিয়ে আসার পর তার নৌকা থেকে দুরন্তর জুতা উদ্ধার করা হয়েছে। জুতাটি দুরন্ত বিপ্লবের ছোট বোন শনাক্তও করেছেন।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) পর্যন্ত পুলিশের তদন্তকারী সংস্থারগুলো যখন এমন বক্তব্য দিচ্ছেন তখন দুরন্তের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের গত রোববারের (১৩ নভেম্বর) বক্তব্য ছিল এর থেকে ভিন্ন। নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শেখ ফরহাদ সাংবাদিকদের সেসময় ময়নাতদন্ত শেষে বলেছিলেন, বিপ্লবকে মাথায় ও বুকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথার পেছনে প্লেইন কোনো সারফেস দিয়ে আঘাত করার আলামত পেয়েছি আমরা।
ময়নাতদন্তের চিকিৎসক যখন বলছেন এমন কথা তখন পুলিশের তদন্তের গতি প্রকৃতি মানতে নারাজ দুরন্তের পরিবার। নৌকা ডুবির ঘটনায় ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে তা বিশ্বাস করতে চান না দুরন্তের ছোট বোন শ্বাশতী বিপ্লব। তিনি বলেন, যেখানে নৌকা ডুবেছে সেখানে আমার ভাই কোনোদিনই যাওয়ার কথা নয়।
এ ব্যাপারে দুরন্তের মা রোকেয়া আক্তার বলেন, ৮ নভেম্বর আমার কাছে আসার আসার কথা ছিল দুরন্তের। কিন্তু সে আসলো লাশ হয়ে। এভাবে আমি আমার ছেলেকে চাইনি। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।
এদিকে, শনিবার (১৯ নভেম্বর) ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক জিএস দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু নিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রোববার (২০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন।
দুরন্ত বিপ্লব ১৯৯৪ সালে জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
৭ নভেম্বর কেরানীগঞ্জের বাসা থেকে বের হয় বিপ্লব। এরপর থেকেই তার মুঠোফোন বন্ধ ছিল। ৯ নভেম্বর এই ঘটনায় ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বোন শ্বাশত বিপ্লব। ১২ নভেম্বর বুড়িগঙ্গার পানগাঁও এলাকায় এক অজ্ঞাত মরদেহ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে পরিবার গিয়ে তার মৃতদেহ শনাক্ত করে।