দেশের রাজনীতি আরও অনেক সুন্দর হবে বলে দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে প্রত্যাশা রেখেছেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বলেছেন, তিনি আর প্রত্যক্ষ রাজনীতি করবেন না। তাঁর পরিকল্পনা রয়েছে লেখালেখি করেই অবসর জীবন পার করবেন।
দুই মেয়াদে টানা ১০ বছরের অধ্যায় শেষে সোমবার দুপুরে বঙ্গভবন ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি একথা বলেন।
আবদুল হামিদ জানান, তিনি সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। মানুষের বাইরে আমার কোনো চিন্তা ছিল না। দেশের সকল রাজনীতিবিদদের মানুষের জন্য রাজনীতি করার পরামর্শ দেন তিনি।
বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একটি কথাই বলবো রাজনীতিবিদরা যেন এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে রাজনীতি করে। তাহলেই রাজনীতি আরও অনেক সুন্দর হবে। আর এটা দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে আমার একই প্রত্যাশা।’
এর আগে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে তাঁর কার্যালয়ের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেন। বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন।
এরপর বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদানসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। পরে মোটর শোভাযাত্রায় বঙ্গভবন থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর নিকুঞ্জে তার নিজের বাড়ি রাষ্ট্রপতি লজে।
এর আগে সাংবাদিকদের আবদুল হামিদ বলেন, ‘এখন আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে একটু ফ্রিলি (মুক্তভাবে) মুভ করতে পারবো। এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দের।’
নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে তার প্রত্যাশা বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নতুন রাষ্ট্রপতি যেন সাংবিধানিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন এটাই আমার এবং জাতির প্রত্যাশা।’
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বঙ্গভবনে দশ বছরের অধ্যায় নিয়ে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘এই উপমহাদেশে আমিই প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সবচেয়ে বেশি দিন দায়িত্ব পালন করেছি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১০ বছর ছাড়াও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আরও ৪১ দিন বেশি দায়িত্ব পালন করেছি। ভারত বা পাকিস্তানেও কেউ এত দিন দায়িত্ব পালন করেনি।’
অবসর জীবন নিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাড়িতে বসে হয়তো কিছু লেখালেখি করব। তবে প্রত্যক্ষ রাজনীতি করার পরিকল্পনা আমার নেই। কারণ দেশের মানুষ আমাকে এত বড় ইজ্জত দিয়েছে, দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি করেছে। তাই আবার আমি রাজনীতি করবো বা অন্য কোনো পদে যাবো এটা হবে না। এটা করলে মনে হবে আমি দেশের মানুষকে হেয় করবো।’
প্রসঙ্গেত, প্রবীন রাজনীতিক আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথম দফায় দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ২১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এর আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান বিদেশে চিকিৎসাধীন জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে আবদুল হামিদ কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে সাতবার আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এ সফল রাজনীতিবিদ।