সন্তানের বন্ধু হয়ে উঠার ৭ উপায়

সন্তানের জীবনে বাবা-মা যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বাবা-মায়ের জীবনে সন্তান। এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া যেমন একটি বিশাল দায়িত্ব, তেমনি এটি বিশেষ গর্ব ও আনন্দেরও।

সন্তানের সঙ্গে কিছু কাজ করার মাধ্যমে বাবা-মা শিশুর মনোভাব ও আচরণে ইতিবাচক পার্থক্য তৈরি করতে পারেন, গড়ে তুলতে পারেন বন্ধুত্ব।

শিশুর কথা শুনুন

শিশুরা আবেগপ্রবণ। ছোট ছোট জিনিসও তাদের কাছে খুব জরুরি ও গুরুত্বের বিষয় হতে পারে। তাদের উদ্বেগগুলো আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হলেও সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ছোট ছোট জিনিস হঠাৎ করেই বড় কিছুতে পরিণত হয় এবং বাবা-মা নিশ্চয়ই সবসময় চাইবেন সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগের দরজা যাতে খোলা থাকে।

ঘুমানোর সময় কথোপকথন সন্তানের সঙ্গে বন্ধন স্থাপনের জন্য একটি দারুণ উপলক্ষ। অবশ্য যে কোনো সময়ই তাদের মতো হয়ে, তাদের চোখে চোখ রেখে তাদের সব ধরনের কথা শোনা যেতে পারে।

জড়িয়ে ধরুন

আলিঙ্গন মস্তিষ্কের বিকাশে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে, অক্সিটোসিন ও সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ায়, শিশুদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশের উন্নতি ঘটায়, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও আচরণকে উৎসাহিত করে। যে শিশুরা বেশি আলিঙ্গন পায় তারা নিরাপদ বোধ করে এবং দেখা যায়, পরবর্তী বয়সে তারা বিভিন্ন আবেগ আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।

পারিবারিক জীবন

বর্তমান বিশ্ব খুব দ্রুতগতির এবং এখানে কাজ ছাড়া কোনো গতি নেই। তবে এর মধ্যেই সময় খুঁজে নিতে হবে। কাজের পর সন্তানের সঙ্গে খুব ভালো কিছু মুহূর্ত কাটাতে পারেন। এতে শিশুর মধ্যে আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়।

সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিলে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অনুভূতি জাগ্রত হয়, পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। শুধু তাই নয়, এটি বাচ্চাদেরকে সারাদিন কাজের পর একটু বিশ্রাম নেওয়া ও নিজেকে সময় দেওয়ার শিক্ষাও দেয়।

একসঙ্গে কিছু পড়ুন

একসঙ্গে কোনো কিছু পড়া সহজেই বাচ্চাদের সঙ্গে বন্ধন তৈরির অন্যতম সেরা উপায়। সন্তানকে একটি ভাল বই পড়ে শোনানোটা শুধু বিশ্রামের একটি দুর্দান্ত উপায় নয়, এটি বাচ্চাদের এই বার্তাও দেয় যে, বাবা-মা তাদের সঙ্গে সময় কাটানো উপভোগ করে। একসঙ্গে বই পড়া সন্তানের সঙ্গে নতুন কথোপকথনকে উৎসাহিত করে, সৃজনশীলতা তৈরি করে এবং বাবা-মা ও সন্তান সবার জন্য একটি ভালো সময় কাটানোর উপলক্ষ হতে পারে।

একসঙ্গে গেম খেলুন

প্রতিটি শিশুই আলাদা এবং তাদের সময় কাটানোর প্রক্রিয়াও আলাদা। গতানুগতিক ধাঁধা ও অন্যান্য খেলার চেয়ে তারা কোন খেলটি পছন্দ করে সেটি খেলুন এবং তাদের সৃজনশীলতাকে অনন্য উচ্চতায় নিতে সাহায্য করুন।

আপনি রোল-প্লে করতে পারেন, মজার কোনো পোশাক পরতে পারেন কিংবা অভিনব কিছু করতে পারেন। তাদের পছন্দ অনুসারে ছোট সারপ্রাইজ পার্টিও দিতে পারেন।

ইতিবাচক অনুপ্রেরণা

সব বাবা-মাই তাদের সন্তানকে বড় হতে এবং জীবনে সফল হতে দেখতে পছন্দ করেন। সফল হতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। সন্তানকে কঠোর পরিশ্রমের জন্য চাপ দিতে গিয়ে বাবা-মায়েরা অনেক সময় মৌখিকভাবে উৎসাহ দেওয়া এবং অনুপ্রেরণার শক্তি সম্পর্কে ভুলে যান।

সন্তান যখন তাদের বাবা-মার কাছ থেকে শোনে যে সে সাহসী, দয়ালু ও কোমল হৃদয়ের মানুষ, তখন এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে তার ওপর। সুতরাং সন্তানদেরকে আপনি কতটা ভালবাসেন এবং তাদের জন্য কতটা গর্বিত, তা তাদেরকে বলতে কার্পণ্য করবেন না।

সত্যি বলুন

বাবা-মাও মানুষ এবং তাদেরও ভুল হতে পারে। কোনো ভুল হলে সেটি না লুকিয়ে সন্তানের সঙ্গে খোলামেলাভাবে কথা বলুন। আপনার সীমাবদ্ধতার কথা তাদেরকে জানান। এটি তাদের মধ্যে সম্মানিত ও মূল্যবান হওয়ার বোধ জাগিয়ে তুলবে এবং পরবর্তী জীবনে বাড়তি প্রত্যাশা এড়াতে সহায়তা করবে।



Share this news on: