জঙ্গি সংগঠনের চার সদস্য গ্রেফতার

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৩।শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মিডিয়া উয়িং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান। 


র‌্যাব জানায়,রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৩ ঠাকুরগাঁও সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ মহসীন আলীর ছেলে মোঃ ইয়াছিন (১৭), গ্রেফতার করে।পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিনাজপুর সদর ও বিরল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেরামত আলী ছেলে মুনতাসির বিল্লাহ (৩৬), ও তার সহযোগী রিয়াজুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মালেক (৩৩) এবং মৃত আব্দুস সালামের ছেলে সাব্বির হোসেন (২০)কে গ্রেফতার করে। 

এসময় তাদের কাছে থাকা বিভিন্ন দাওয়াতী বই (হার্ড কপি এবং পিডিএফ কপি), ০৪টি মোবাইল ও ০৪টি সীমকার্ড জব্দ করে র‌্যাব।

র‌্যাব আরো জানায়,তরুনদের ব্রেইন ওয়াশ করা সহজ তাই তারা তরুণদের টার্গেট করে বিভিন্ন ভাবে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছিল।

 এদিকে গ্রেফতার মুনতাসীর বিল্লাহ সংগঠনটির উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি টেক্সটাইল বিষয়ে অধ্যয়নরত থাকাকালীন ০৬ মাস অধ্যয়নের পর পড়া বাদ দিয়ে এলাকায় হিজামার ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি এলাকায় প্রাইভেটও পড়াতেন। তিনি ২০২১ সালে "আনসার আল ইসলাম" সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগ দেন ও উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি উত্তরাঞ্চলে দাওয়াতী কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি অদ্যাবধি ১৫ এর অধিক ব্যক্তিকে সংগঠনে যুক্ত করে বলে জানা যায়। তিনি নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। সে ঠাকুরগাও, দিনাজপুর, ঢাকা, লক্ষীপুর, ভোলা এবং খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফর ও সভায় অংশগ্রহণ করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও তিনি পাশ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতেন। তিনি সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও এবং বিভিন্ন 
উগ্রবাদী পুস্তিকা সরবরাহ করতেন। 

এদিকে গ্রেফতার ইয়াছিন এসএসসি পাশ করে ঠাকুরগাঁও এলাকায় মধুর ব্যবসা করতো। সে ২০২২ সালে গ্রেফতারকৃত মুনতাসির এর মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। সে সরাসরি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতো বলে জানা যায়। সে তার এলাকার ০৬ জনকে উদ্বুদ্ধ করে সংগঠনে যোগদান করিয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও 
সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রুপে সংগঠনের সদস্যদের সাথে সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতো। সে তার মধু ব্যবসার অর্থ এবং ঠাকুরগাও এলাকার সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের নিকট হতে চাঁদা সংগ্রহ করে গ্রেফতারকৃত মুনতাসিরকে দিত বলে জানা যায়। সে ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত রিপন এর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতো ও রিপনকে তথাকথিত হিজরতের জন্য পাশ্ববর্তী দেশে গমনের উদ্দেশ্য মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করেছে বলে জানা যায়।

 গ্রেফতারকৃত আরেক আসামী আব্দুল মালেক পূর্বে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে একটি রেস্টুরেন্টে কুক হিসেবে কর্মরত ছিল। পরবর্তীতে সে ০৩ বছর পূর্বে দিনাজপুরে ফিরে এসে দিনাজপুর শহরে চাংপাই চাইনিজ নামে একটি ফুড কার্ড এর ব্যবসা শুরু করে। ২০২১ সালে গ্রেফতারকৃত মুনতাসির এর সাথে তার পরিচয় হয় এবং আনসার আল ইসলাম এর 
মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। সে অদ্যাবধি ৪/৫ জনকে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করিয়েছে বলে জানা যায়। সে সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করতো। এছাড়াও সে গ্রেফতারকৃত মুনতাসীরের সাথে দিনাজপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের সভায় অংশ নিয়েছে বলে জানা যায়।

 গ্রেফতার সাব্বির মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে দিনাজপুরের বিরলে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতো। সে 
২০২২ সালে গ্রেফতারকৃত মুনতাসির এর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগদান করে। সে তার নিজ এলাকা দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল এবং ৩/৪ জনকে সংগঠনে যোগদান করিয়েছে বলে জানা যায়। সে গ্রেফতারকৃত মুনতাসীরের সাথে উত্তরাঞ্চল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের মিটিং এ অংশগ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। সে সংগঠনের কাজে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করতো এবং অন্যান্য সদস্যদের নিকট হতে চাঁদা সংগ্রহ করে গ্রেফতারকৃত মুনতাসীরের নিকট প্রদান করতো বলে জানা যায়।

র‌্যাব আরো জানায়,প্রাথমিক ভাবে তারা জঙ্গি সংগঠনে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে এবং গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Share this news on: