নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার পেঁয়াজ, আলু, ভোজ্য তেল ও ডিমের দাম বেঁধে দিলেও তা কার্যকর হওয়ার কোনো চিত্র চোখে পড়েনি রাজধানীর বাজারগুলোতে।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন দামের নির্দেশনা ব্যবসায়ীরা পেলেও তা কেউই মানছে না। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রায়েরবাগ, খিলক্ষেত এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের নির্ধারণ করা দামে আমরা কিনেও আনতে পারিনি, তাহলে ওই দামে বিক্রি করব কীভাবে।
গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। আলুর কেজি ৩৫-৩৬ টাকা, পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা দামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খোলা চিনি প্রতি কেজি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা এবং প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা, খোলা তেল ১৪৯ টাকা ও পাম তেল ১২৪ টাকায় বিক্রি হবে। কিন্তু বাজারে ঘুরে উল্লিখিত দামে কোথাও এসব পণ্য বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
এর আগেও সরকার থেকে নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করার পর তা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে খোলা চিনি ১০৭ থেকে কমিয়ে ১০৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১১২ থেকে কমিয়ে ১০৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু সেই দাম ব্যবসায়ীরা মানেননি। তখন বাজারে চিনি ১১২ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
খিলক্ষেত বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা, ডিম প্রতিটি ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১৩ টাকা, খোলা চিনি ১৪০ টাকা কেজি, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকার পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও কেন বেশি দামে বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরাই পাইকারি বাজার থেকে ৮০ টাকায় পেঁয়াজ কিনে আনি। তার পর যাতায়াত খরচ আছে। কাজেই ৯০ টাকার কমে পোষায় না।
আলমগীর নামে এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন বলেন, আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। সরকার নির্ধারিত নতুন দাম ৩৬-৩৭ টাকা কেজির কথা বললে তিনি বলেন, কাঁচামাল আসলে দাম নির্ধারণ করে ধরে রাখা যায় না। এটা কাল নির্ধারিত হয়েছে। নতুন মাল এলে দাম কমবে। আমি তো বেশি দামে কিনেছি। মেমো আছে।
ডিম বিক্রি করছিলেন আমেনা বেগম। তিনি জানান, তাদের প্রতি ডজন ডিম ১৪৭ টাকার ওপরে কেনা পড়েছে। বিক্রি করতেছেন ১৫০ টাকা ডজন দরে।
এই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মাইজুদ্দিন দোকানে দামের তালিকা ঝুলিয়ে রেখেছেন। তিনি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৬৫ টাকা কেজি এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৮০ টাকা কেজি দরে। দাম কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ সৎ হলে দাম কমবে।
বাজারে দেশি আদা ২৬০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার আদা ২৮০-৩০০ টাকা, চায়না রসুন ২০০, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, দেশি আদা ৪০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ান আদা ২০-৪০ টাকা ও দেশি রসুন ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
নির্ধারিত দামে বিক্রি না করা নিয়ে খিলক্ষেত কাঁচাবাজারে আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা রাসেল বলেন, আমি গতকাল রাতে আলু কিনেছি। আমি তো কম দামে কিনতে পারিনি, বিক্রি করবো কীভাবে। আমার কেনা পড়েছে ৪২ টাকা, তারপর ভাড়া, নষ্ট আলু বাদ দিয়ে ৫০ টাকাতেই বিক্রি করতে হয়।
সবজির বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেপের কেজি ৪০ টাকা, লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতিটি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। ছোট বাঁধাকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ছোট আকারের ফুলকপি ৪০ টাকা, মুলার কেজি ৪০ টাকা, শিম ২০০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও গাজর ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।