সাব রেজিস্ট্রার অফিসে প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহন


 মসজিদের নামে চাঁদা আদায় করে সেই টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী আব্দুল হকের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,অফিস সহকারী আব্দুল হক জমি বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতি টিপসই বাবদ ৫০ টাকা করে নিচ্ছেন। আর কেউ টাকা দিতে অপারগতা জানালে তার টিপসই নিতে গড়িমসি করছেন এই কর্মচারী।এদিকে কেউ টাকা না দিয়ে বের হয়ে গেলে টাকা চাইতেও শোনা যায় তাকে।যেন নিজের পাওনা টাকা চাইছেন এই কর্মচারী।

এদিকে ওই অফিসের ভিতরে মুঠোফোন ব্যবহারেও আছে নিষেধাজ্ঞা, কেউ ব্যবহার করতে চাইলে তার উপর অনেকটা চড়াও হন এখানকার কর্মচারীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, প্রতিবাদ করলে জমির কাগজপত্রে নানান জটিলতা সৃষ্টি করেন এখানকার কর্মচারীরা।

ঘুষের বিষয়ে আব্দুল হক বলেন,এই টাকা গংগাচড়া উপজেলা জামে মসজিদে দেয়া হয়।তবে নিজের কাছেও কিছু টাকা চা নাস্তার জন্য রাখেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,এখানে অনেক ফাংশন আছে,অনেকেই টাকার ভাগ পান।
নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে তিনি অফিস কক্ষে গিয়ে মসজিদে জমা দেয়া কয়েকটি রশিদ দেখান কিন্তু সেই রশিদ ছিল গত বছরের। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন,গত (জানুয়ারি)মাসে মসজিদের চাঁদা বাবদ তিনি ৪২০০ (চারহাজার দুইশত) টাকা দিয়েছেন। কিন্তু মসজিদ কমিটি এখনো তাকে সে রশিদ দেয়নি।এছাড়া প্রতি মাসেই তিনি এভাবে টাকা দিয়ে থাকেন।

ওই সহকারীর তথ্য অনুযায়ী,প্রতি মাসে এই অফিসে দলিল সম্পাদনা করা হয় মোট ২৫০ টি। আর প্রতিটা দলিল সম্পাদনে তিনি নেন ৫০ টাকা করে চাঁদা।গত মাসে(জানুয়ারি) দলিল সম্পাদন হয়েছে প্রায় ২০০টি।আর তাতে তিনি মসজিদের নামে চাঁদা নিয়েছেন সর্বনিম্ন ১০০০০(দশ হাজার টাকা) তিনি মসজিদ সংশ্লিষ্টকে জমা দিয়েছেন ৪২০০(চারহাজার দুইশত)টাকা বাকি ৫৮০০ (পাঁচ হাজার আটশত)টাকা কোথায়?এর উত্তর দিতে পারেননি সহকারী আব্দুল হক। 

এসব বিষয়ে জানতে গংগাচড়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার ফজলে রাব্বির খাস কামরায় গিয়ে দেখা যায় তিনি ধূমপান করছেন।চাঁদার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি চড়াও হয়ে বলেন,এসব আমার জানা নেই।এটি সরকারি কোন নির্দেশনা নয়।তবে ইউএনও স্যার বিষয়টি জানেন।আর ওই অফিস সহকারী মসজিদের জন্য চাঁদা আদায় করেন যা ঘুষ নয়।

পরে ওই খাস কামরায় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে ডেকে নিয়ে আসেন সাব রেজিস্ট্রার ফজলে রাব্বি। তারা এসে জানান জমি বিক্রেতারা খুশি মনে ২০/৩০ টাকা দিয়ে থাকেন মসজিদের দানের জন্য কিন্তু কারো উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়না।
এদিকে সাব রেজিস্ট্রারের বক্তব্য চাইলে দলিল লেখক সমিতির ওই নেতারা রেগে যান।তারা একসময় মারমুখী হলে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন এই প্রতিবেদক।এছাড়া অফিস বন্ধের হুমকি দিয়ে দলিল লেখক সমিতির সেক্রেটারি বলেন,মসজিদের চাঁদা বন্ধ করলে টিপসই নেয়া বন্ধ করে দেয়া হবে সেই সাথে অফিস বন্ধ করে দেয়া হবে।

 উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না মুঠোফোনে জানান,সাব রেজিস্ট্রার অফিসে মসজিদের নামে চাঁদা নেবার বিষয়টি তিনি অবগত নন।এছাড়া এই বিষয়ে কোন নির্দেশনা তিনি দেননি।

শুধু অফিস সহকারী নয় এই অফিসের বিভিন্ন কর্মচারীর বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। দলিল পাশ করিয়ে আনতে পেশকারকেও খুশি করতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। 



Share this news on: