ফুলবাড়িয়ার দৃষ্টিনন্দন অর্কিড বাগান

বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি যে কাউকে মুগ্ধ করে। চারপাশে সবুজ অর‌ণ্য আর বৃক্ষরাজি দ্বারা ঘেরা এ দেশের প্রকৃতি। এই প্রকৃতিকে আরও সৌন্দর্যমন্ডিত করতে কাজ করছে মানুষ। এই সবুজ প্রকৃতিতে যুক্ত হয়ে আছে ময়মনসিংহের অর্কিড বাগান।

অর্কিড বাগানটির অবস্থান ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের দুলমা গ্রামে। সর্ম্পূণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে সব মিলিয়ে প্রায় ২০ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে এই বাগানটি। এটি দেশের বৃহৎ অর্কিড বাগান। এটি দীপ্ত অর্কিড ফুলের বাগান নামেও পরিচিত। বর্তমানে এখানে বিশাল এলাকাজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে অর্কিডের উৎপাদন হচ্ছে।

২০০৩ সালে ইত্তেমাদ উদ দৌলা নামে এক ব্যক্তি তিন একর জমিতে অর্কিড চাষ শুরু করেন। দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে অর্কিডের উৎপাদন শুরু করে তিনি। থাইল্যান্ড থেকে আসা একজন বিশেষজ্ঞের সহায়তার মাধ্যমে এই বাগানের কাজ শুরু করা হয়।

সবুজ গাছগাছালি দ্বারা বিস্তীর্ণ লাল মাটির পাহাড়ি নির্জন নিভৃত এলাকায় গড়ে উঠেছে এই বাগানটি। এই সবুজের সমারোহে চোখে পড়বে লাল, হলুদ ও বেগুনি অর্কিডের সমাহার। নানা রঙের দেশি-বিদেশি ফুল ও ফলগাছ। অর্কিডের পাশাপাশি গোলাপ, জারবেরা ও সবজির বাগান রয়েছে। পুরো বাগানটিই দৃষ্টিনন্দন। সারি সারি অর্কিড রোপণ করা আছে। কোথাও লাল, কোথাও সাদা, কোথাও হলুদ; আবার কোথাও বেগুনি ফুলের গাছ। এর ফলে বাগানের অর্কিডের অংশটি দেখতে অনেকটা টিউলিপ বাগানের মতো মনে হয়।

এই অর্কিড বাগানে দুই শতাধিক প্রজাতির অর্কিডের চাষ হয়। এরমধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হলো ডেনড্রোবিয়াম সোনিয়া, ডেনড্রোবিয়াম হোয়াইট, ডেনড্রোবিয়াম সাকুলা পিংক, মোকারা নুরা ব্লু ও ডেনড্রোবিয়াম সাতু পিংক।

এ্ বাগান থেকেই ফুল সবরবরাহ করা হয় রাজধানীর শাহবাগ, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, দেশের বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা দেখা দেয় ভ্যালেন্টাইন ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে। এই বাগান থেকে প্রতিবছর ৪০-৫০ লাখ টাকার অর্কিডের চারা ও ফুল বিক্রি হয় ।

২০১৪ সালে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা পরিদর্শন করেন বাগানটি। বেশ কয়েক বছর এ বাগানের অর্কিড সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে রপ্তানি হয়েছিল।  

প্রতিদিনই এই বাগান পরিদর্শনে আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখতে পারেন যে কেউ।

কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহে আসতে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এনা, শামীম এন্টারপ্রাইজ, সৌখিনসহ কয়েকটি পরিবহন বাস রয়েছে। সময় লাগবে আড়াই থেকে চার ঘন্টা । এছাড়াও কমলাপুর বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-নেত্রকোণা রুটের গাড়িতেও ময়মনসিংহে যেতে পারবেন। এনা ট্রান্সর্পোটে ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা। তাছাড়া সৌখিন পরিবহন-১৫০ টাকা। তবে আলম এশিয়ায় গেলে সরাসরি ফুলবাড়ীয়া উপজেলা সদরে নামতে পারবেন। মাসাকান্দা বাসস্ট্যান্ডে অথবা শহরের ব্রিজ মোড়ে নেমে বাস বা সিএনজি অটোরিকশা করে যাওয়া যাবে অর্কিড বাগানে।

এছাড়া ঢাকা থেকে বাসে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা মোড়ে নামতে পারেন। ভরাডোবা থেকে কাহালগাঁও অর্কিড বাগান। সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। 

এছাড়া ঢাকা থেকে রেলপথে ট্রেন করেও যেতে পারেন। ঢাকা থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস (সকাল সাতটা বিশ), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (দুপুর দুইটা বিশ), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকাল চারটা চল্লিশ), অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস (সন্ধ্যা ছয়টা), হাওড় এক্সপ্রেস (রাত এগারোটা পনেরো) এ ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ভাড়া শ্রেণীভেদে ১০০ থেকে ৩৬০ টাকা। রেল স্টেশন থেকে বাস বা সিএনজি করে যেতে পারবেন অর্কিড বাগান।

কোথায় থাকবেন: পার্কেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন কর্টেজ ভাড়া হচ্ছে, এসি ডিলাক্স ৪ হাজার টাকা, এসি ৩ হাজার টাকা ও নন এসি ২ হাজার টাকা। পিকনিক প্যাকেজ হচ্ছে প্রবেশসহ সকল রাইডর্স ও দুপুরের খাবার কর্পোরেট বা ফ্যামিলি জনপ্রতি পাঁচশ টাকা। কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য জনপ্রতি চারশ টাকা। আর ১০ বছরের নীচে শিশুদের জন্য জন প্রতি ৩৫০টাকা।

এছাড়া ময়মনসিংহ শহরেও থাকতে পারেন। এজন্য রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- আমির ইন্টান্যাশনাল (০১৭১১১৬৭ ৯৪৮), হোটেল মুস্তাফিজ ইন্টারন্যাশলনাল (০১৭১৫১৩৩ ৫০৭), হোটেল হেরা (০১৭১১১৬৭ ৮৮০), হোটেল সিলভার ক্যাসল (০৯১৬৬১৫০, ০১৭১০৮৫৭ ০৫৪), হোটেল খাঁন ইন্টারন্যাশনাল (০৯১৬৫৯৯৫) প্রভৃতি।

খাওয়া: খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন আছিম বাজার, সোয়াইতপুর বাজার ও কাহালগাঁও বাজারের ছোট হোটেলগুলোতে। এছাড়া ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থল প্রেস ক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাওয়ের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। এছাড়া হোটেল সারিন্দা ও হোটেল ধানসিঁড়িও ভালো । এছাড়া শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে মাঝারি ও নিম্নমানের বেশ কিছু খাবার হোটেল। ফুলবাড়ীয়া সদরেও খাবার জন্য কিছু হোটেল পাওয়া যায়।

 

Share this news on: