হার্ট সুস্থ রাখতে যা খাবেন

হৃদরোগ এক নীরব ঘাতক। প্রধানত হৃদসংবহন তন্ত্র, মস্তিষ্ক, বৃক্ক ও প্রান্তিক ধমনী সম্পর্কিত রোগকে হৃদ রোগ বলে। এ রোগে মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এ রোগ থেকে বাঁচতে হার্ট সুস্থ রাখার কোনো বিকল্প নেই। হার্ট সুস্থ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল যথাসম্ভব ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বর্জন করা।

তবে এমন কিছু খাদ্য উপাদান রয়েছে যা আমাদের হার্ট সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-

জই ও যব
জই ও যবে অধিক পরিমাণে ‌‌‘বেটা গ্লুকান’ নামে এক প্রকার দ্রবণীয় আঁশ রয়েছে, যা মানব দেহের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা যায়, বেটা গ্লুকান দেহের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া কোলেস্টেরল হ্রাস করার মাধ্যমে এটা হার্টকে সুস্থ রাখে। তাই কোলেস্টেরল সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন সকালের নাস্তার সঙ্গে জব বা জই খেতে পারেন। গবেষণা বলছে প্রতিদিন ৩ গ্রাম বেটা গ্লুকান খেলে কোলেস্টরেল ১০ ভাগ হ্রাস পাবে।

সামুদ্রিক মাছ
মাছের তেলে প্রচুর পরিমাণে ‘অমেগা-৩’ এসিড থাকে, যা সুস্থ হার্টের জন্য খুবই উপকারী। এজন্য লবস্টার, ওয়েস্টার, স্যামন, টুনা, ম্যাকরেল, সার্ডিন কিংবা এ জাতীয় সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। কারণ এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ এসিড রয়েছে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।

গাঢ় সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি
পুঁইশাক, পালং শাক, বাঁধা কপি, শিম, ইত্যাদি সবুজ পাতাজাতীয় শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ই, সি, কে ও অ্যান্টিওক্সিডেন্ট রয়েছে, যা দেহ থেকে টক্সিন বের করে দেয়। এছাড়া এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগ্নেসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে যার জন্য হার্ট সুস্থ রাখার শীর্ষ ১০ খাবারে এগুলো স্থান পেয়েছে। শাকসবজিতে থাকা আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে।

বাদাম ও শস্যদানা
গবেষণায় দেখা গেছে বাদাম ও শস্যদানা রক্তনালীর সংকোচন, হৃদকম্পন, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তাই হার্ট সুস্থ রাখতে খাদ্য তালিকায় আখরোট, কাজু বাদাম, তিসিসহ বিভিন্ন শস্যদানা থাকতে হবে।

বিট
হার্টের সুস্থতার জন্য খুব কার্যকর একটি উপাদান বিট। বিটে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রিক এসিড থাকে, যা রক্তনালী সম্প্রসারিত করে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৫০০ গ্রাম বিট জুস পান করলে ছয় ঘন্টার মধ্যেই সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। এছাড়া বিটে ‘বেটালিন’ নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিওক্সিডেন্ট রয়েছে যা আর্থাইটিস ও ক্যান্সার এমনকি হার্ট অ্যাটাকের মতো বিভিন্ন প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কমায়।

অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা উপকারী কোলেস্টেরলে বৃদ্ধি করে, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হ্রাস করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া মস্তিস্কের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ ও আয়ু বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে অলিভ অয়েল।

শিম ও মটরশুঁটি
শিম, ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় আঁশ রয়েছে যা কোলেস্টরেলের মাত্রা কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কারণ দ্রবণীয় আঁশ মানবদেহে অতিরিক্ত এলডিএল কোলেস্টেরলে পরিণত হয় ও আবর্জনা হিসেবে বের হয়ে যায়।

কম চর্বিযুক্ত খাবার
চর্বিযুক্ত খাবার কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। তাই খাদ্য তালিকায় বেশি করে দুগ্ধজাত খাবার যেমন- দুধ, দই, পনির ইত্যাদি রাখতে হবে। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

এছাড়া খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মানসিক চাপ হ্রাস ও ধুমপান বর্জনের মাধ্যমে হার্টের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

Share this news on: