ঘুরে আসুন ময়মনসিংহ জাদুঘর

বাংলাদেশের রয়েছে অতি প্রাচীন ইতিহাস। শতাব্দীর পর শতাব্দী এদেশ শাসন করেছে ভিনদেশীরা। ছিলো রাজা-মহারাজা ও জমিদারদের রাজত্ব। সেই শাসনভার একসময় এদেশের সাধারণ মানুষ নিজেদের কাঁধে তুলে নেন। এসব ইতিহাস আমরা  যেমন আমাদের পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি, তেমনি জানতে পারি সে সময়ে ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র ও নিদর্শন থেকেও। আর বর্তমানে ইতিহাসের এইসব নিদর্শন সংরক্ষিত আছে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরে। তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী জাদুঘর ময়মনসিংহ জাদুঘর। 

জাদুঘরটির অবস্থান ময়মনসিংহ জেলা শহরের পৌর ভবনের পাশে ১৭ অমৃতবাবু রোডে। এই জাদুঘরটি ময়মনসিংহ অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে সংরক্ষিত নিদর্শন গুলোর মাধ্যমে জানা যায় এই অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে।

১৯৬৯ সালে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলো ময়মনসিংহ পৌরসভা। ১৯৮৯ সালে এর দায়িত্ব পায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। পরে ১৯৯৫ সালে এটিকে সরকার গ্যাজেটের মাধ্যমে সরকারীকরণ করে। এই জাদুঘরে জায়গাটি পূর্বে ছিলো জমিদার মদনমোহন বাবুর বাগানবড়ি। 

জাদুঘরটিতে সংরক্ষিত আছে মুক্তাগাছা, গৌরিপুর ও আঠারো বাড়ির জমিদারদের ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র ও সামগ্রী। রয়েছে এই অঞ্চলের স্থাপত্য, হস্তশিল্প, মুর্তি লৌহের জিনিসপত্র, শিলালিপিসহ বহু পুরাতন নিদর্শন। যা ওই অঞ্চলের শিল্প সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দেয়। এই জাদুঘরে মোট তিনটি কক্ষ রয়েছে। যেখানে মোট ২১৪টি নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।

এখানে সংরক্ষিত রয়েছে পান্ডৃলিপি, বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা, ময়ূরের মমি, আলোকচিত্র, শ্বেত পাথরের টেবিল, পাথর, ফুলদানি, কম্পাস, মোমের ঘোড়া, অলঙ্কার, প্রাচীন ঘড়ি, মৃতশিল্প, লোহার তাক, বিভিন্ন ধরণের যুদ্ধাস্ত্র। এছাড়া খোদাই করা ভাস্কর্য সরস্বতী, বিষ্ণু, মাঘের মাথা, দুই হরিণের মাথা, বন্য ষাঁড়ের মাথা, হাতির মাথা, ইতালীয় মুর্তি, বিভিন্ন গ্রামীণ চিত্রকর্মসহ অসংখ্য নিদর্শন। 

প্রতিদিনিই জাদুঘরটি পরিদর্শনে আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী। জাদুঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে ১৫ টাকা প্রবেশ ফি দিতে হয়। 

কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহে আসতে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এনা, শামীম এন্টারপ্রাইজ, সৌখিনসহ কয়েকটি পরিবহন বাস রয়েছে। সময় লাগবে আড়াই থেকে চার ঘন্টা । এছাড়াও কমলাপুর, বিআরটিসি টার্মিনাল থেকে ঢাকা-নেত্রকোণা রুটের গাড়িতেও ময়মনসিংহে যেতে পারবেন। এনা ট্রান্সর্পোটে ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা। তাছাড়া সৌখনি পরবিহন-১৫০ টাকা। মাসাকান্দা বাসস্ট্যান্ডে অথবা শহরের ব্রীজ মোড়ে নেমে অটো বা রিক্সায় করে সহজেই পৌছে যাবেন জাদুঘরে। 

এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেন করেও যেতে পারেন। ঢাকা থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস (সকাল সাতটা বিশ), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (দুপুর দুইটা বিশ), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকাল চারটা চল্লিশ), অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস (সন্ধ্যা ছয়টা), হাওড় এক্সপ্রেস (রাত এগারোটা পনেরো) এ ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে ছাড়ে।  ভাড়া শ্রেণীভেদে ১০০ থেকে ৩৬০ টাকা। রেল স্টেশন থেকে অটো বা রিক্সায় যেতে পারবেন জাদুঘরে।

কোথায় থাকবেন: থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল।  উল্লখেযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- আমির ইন্টান্যাশনাল (০১৭১১১৬৭ ৯৪৮), হোটেল মুস্তাফিজ ইন্টারন্যাশলনাল (০১৭১৫১৩৩ ৫০৭),  হোটেল হেরা (০১৭১১১৬৭ ৮৮০) হোটেল সিলভার ক্যাসল (০৯১৬৬১৫০, ০১৭১০৮৫৭ ০৫৪), হোটেল খাঁন ইন্টারন্যাশনাল (০৯১৬৫৯৯৫) প্রভৃতি। 

খাওয়া দাওয়া: শহরের কেন্দ্রস্থল প্রেস ক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাওয়ের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। এছাড়া হোটেল সারিন্দা ও হোটেল ধানসিঁড়িও ভালো । এছাড়াও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে মাঝারি ও নিম্নমানের বেশ কিছু খাবার হোটেল।

 

 

 

Share this news on: