স্মৃতি বিজড়িত আলেকজান্ডার ক্যাসল

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জেলা ময়মনসিংহ। এই জেলার ইতহাস ও ঐতিহ্য নানার কারণে সমৃদ্ধ। প্রাচীন ও মধ্যযুগে এই এলাকাতে ছিলো বহু রাজা-মহারাজা ও জমিদারদের বসবাস। আর রাজা মহারাজারা বিভিন্ন প্রয়োজনে নির্মাণ করেছিলো বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। যা বর্তমানে আমাদের কাছে ইতিহাসের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তেমনি একটি প্রাচীন স্থাপনা ময়মনসিংহের আলেকজান্ডার ক্যাসল। 

ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি পুরাতন ও প্রাচীন স্থাপনা আলেকজান্ডার ক্যাসল। এটি মূলত ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত একটি প্রাসাদ। ময়মনসিংহ জেলা শহরের কোর্ট-কাঁচারি এলাকায় প্রাসাদটির অবস্থান।

১৭৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহ  জেলা। এর শতবর্ষ পালন করা হয় ১৮৮৭ সালে। ময়মনসিংহ জেলা শহরের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়। এটি নির্মাণ করেন ওই অঞ্চলের তৎকালীন মহারাজা সুকান্ত সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। তৎকালীন প্রাসাদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিলো পয়তাল্লিশ হাজার টাকা। 

ভবনটি নির্মাণ করতে প্রচুর লোহার ব্যবহার করা হয়েছিলো। যে কারণে স্থানীয়ভাবে এটি লোহা কুঠির নামেও পরিচিত। 

প্রাসাদটি নির্মাণের পর এটিকে মূলবান ও দৃষ্টিনন্দন আসবাব দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। ভবন চত্বরে রয়েছে বিভিন্ন ফুল ও ফল গাছে সমৃদ্ধ একটি বাগান। তার পাশেই রয়েছে একটি দীঘি। বর্তমানে এই প্রাসাদটি ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

এই প্রাসাদটিতে অবস্থান করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্ম গান্ধী, লর্ড কার্জন, চিত্তরঞ্জন দাস, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা, মৌলভী ওয়াজেদ আলী খান পন্নী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুসহ বহু বরেণ্য ব্যক্তি।

১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহ সফর করেন। তৎকালীন জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর আমন্ত্রণে আলেকজান্ডার ক্যাসলে আসেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ প্রাসাদটিতে ৪ দিন অবস্থান করেছিলেন। 

কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহে আসতে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এনা, শামীম এন্টারপ্রাইজ, সৌখিনসহ কয়েকটি পরিবহন বাস রয়েছে। সময় লাগবে আড়াই থেকে চার ঘন্টা । এছাড়াও কমলাপুর, বিআরটিসি টার্মিনাল থেকে ঢাকা-নেত্রকোণা রুটের গাড়িতেও ময়মনসিংহে যেতে পারবেন। এনা ট্রান্সর্পোটে ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা। তাছাড়া সৌখনি পরবিহন-১৫০ টাকা। মাসাকান্দা বাসস্ট্যান্ডে অথবা শহরের ব্রীজ মোড়ে নেমে অটো বা রিক্সায় করে সহজেই পৌছে যাবেন আলেকজান্ডার ক্যাসলে। 

এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেন করেও যেতে পারেন। ঢাকা থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস (সকাল সাতটা বিশ), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (দুপুর দুইটা বিশ), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকাল চারটা চল্লিশ), অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস (সন্ধ্যা ছয়টা), হাওড় এক্সপ্রেস ( রাত এগারোটা পনেরো) এ ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে ছাড়ে।  ভাড়া শ্রেণীভেদে ১০০ থেকে ৩৬০ টাকা। রেল স্টেশন থেকে অটো বা রিক্সায় যেতে পারবেন আলেকজান্ডার ক্যাসলে। 

কোথায় থাকবেন: থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল।  উল্লখেযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- আমির ইন্টান্যাশনাল (০১৭১১১৬৭ ৯৪৮), হোটেল মুস্তাফিজ ইন্টারন্যাশলনাল (০১৭১৫১৩৩ ৫০৭),  হোটেল হেরা (০১৭১১১৬৭ ৮৮০) হোটেল সিলভার ক্যাসল (০৯১৬৬১৫০, ০১৭১০৮৫৭ ০৫৪), হোটেল খাঁন ইন্টারন্যাশনাল (০৯১৬৫৯৯৫) প্রভৃতি। 

খাওয়া দাওয়া: শহরের কেন্দ্রস্থল প্রেস ক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাওয়ের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। এছাড়া হোটেল সারিন্দা ও হোটেল ধানসিঁড়িও ভালো । এছাড়াও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে মাঝারি ও নিম্নমানের বেশ কিছু খাবার হোটেল।

 

Share this news on: