গৌরীপুর লজের গল্প!

এক সময় ময়মনসিংহ অঞ্চলে ছিলো রাজা-মহারাজা ও জমিদারদের বসবাস। দীর্ঘ সময় ধরে ওই অঞ্চল শাসন করার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা। রাজা-মহারাজাদের শাসনামলে এ অঞ্চলে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। তেমনি একটি হচ্ছে গৌরীপুর লজ।

গৌরীপুর লজটি অবস্থিত ময়মনসিংহ জেলা শহরের ব্রহ্মপুত্র নদের অদূরে ঈশান চক্রবর্তী রোডে। দ্বিতল বিশিষ্ট স্থাপনাটি এই অঞ্চলের অন্যান্য স্থাপনা থেকে একটু ভিন্ন, কারণ এটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে লোহা, টিন ও কাঠ।

ধারণা করা হয়, তৎকালীন ময়মনসিংহের মহারাজা শশীকান্ত সেন গৌরীপুরের রামগোপালপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে এক টুকরো জমি দান করেন। কিন্তু শর্ত জুড়ে দেন যে, এই জমিতে কোনো দালান তোলা যাবে না।

পরবর্তীতে এই শর্ত মেনে ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় একটি কারুকাজ খচিত দ্বিতল বাড়ি নির্মাণ করেন। কিন্তু এতে ব্যবহার করেন সুদূর চীন থেকে আনা লোহা, টিন ও কাঠ। নির্মাণের পর তিনি এই বাড়ি উপহার হিসেবে তার জামাতাকে দান করেন। এবং নাম দেন গৌরীপুর লজ।

দ্বিতল এই বাড়িটিতে ব্যালকনি, ড্রইং, ডাইনিংসহ ছোট-বড় প্রায় ২০ টি রুম আছে। এক দশমিক ৩৬ একর জমির উপর নির্মিত বাড়িটির সামনে রয়েছে বিভিন্ন ফুল-ফলে সমৃদ্ধ একটি বাগান। রয়েছে শান-বাঁধানো পুকুরঘাট।

বাড়িটিতে এসেছিলেন আলাউদ্দিন আলী খাঁ, মুহম্মদ আলী খাঁ, হাফেজ আলী খাঁ, মুস্তফা খাঁসহ সঙ্গীত জগতের পুরোধা ব্যক্তিরা।

বর্তমানে এই বাড়িটি সোনালী ব্যাংক ময়মনসিংহ অঞ্চলের করেপোরেট অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহে আসতে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এনা, শামীম এন্টারপ্রাইজ, শৌখিন সহ কয়েকটি পরিবহন বাস রয়েছে। সময় লাগবে আড়াই থেকে চার ঘন্টা । এছাড়াও কমলাপুর, বিআরটিসি টার্মিনাল থেকে ঢাকা-নেত্রকোণা রুটের গাড়িতেও ময়মনসিংহে যেতে পারবেন। এনা ট্রান্সর্পোটে ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা। তাছাড়া সৌখনি পরবিহন-১৫০ টাকা। মাসাকান্দা বাসস্ট্যান্ডে অথবা শহরের ব্রীজ মোড়ে নেমে অটো বা রিক্সায় করে সহজেই পৌছে যাবেন গৌরীপুর লজে।

এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেন করেও যেতে পারেন। ঢাকা থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস (সকাল সাতটা বিশ), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (দুপুর দুইটা বিশ), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকাল চারটা চল্লিশ), অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস (সন্ধ্যা ছয়টা), হাওড় এক্সপ্রেস (রাত এগারোটা পনেরো) এ ময়মনসিংহ এর উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ভাড়া শ্রেণীভেদে ১০০ থেকে ৩৬০ টাকা। রেল স্টেশন থেকে অটো বা রিক্সায় যেতে পারবেন গৌরীপুর লজে।

কোথায় থাকবেন: থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল।  উল্লখেযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- আমির ইন্টান্যাশনাল (০১৭১১১৬৭ ৯৪৮), হোটেল মুস্তাফিজ ইন্টারন্যাশলনাল (০১৭১৫১৩৩ ৫০৭),  হোটেল হেরা (০১৭১১১৬৭ ৮৮০) হোটেল সিলভার ক্যাসল (০৯১৬৬১৫০, ০১৭১০৮৫৭ ০৫৪), হোটেল খাঁন ইন্টারন্যাশনাল (০৯১৬৫৯৯৫) প্রভৃতি।

খাওয়া দাওয়া: শহরের কেন্দ্রস্থল প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাওয়ের ব্যাপক সুনাম রয়েছে।এছাড়া হোটেল সারিন্দা ও হোটেল ধানসিঁড়িও ভালো । এছাড়াও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে বেশ কিছু খাবার হোটেল।

 

 

Share this news on:

সর্বশেষ