অশ্বগন্ধা একটি বিস্ময়কর ভেষজের নাম। প্রাচীনকাল হতেই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে অশ্বগন্ধার ব্যবহার হয়ে আসছে। ভারতবর্ষীয় ভেষজ চিকিৎসায় ঐতিহ্যগত ভেষজ হিসেবে এর ব্যাপক সমাদর রয়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে এডাপ্টোজেন বা মানসিক চাপ মুক্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দেহ ও মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে অশ্বগন্ধা খুবই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এটি রক্তে শর্করা ও কার্টিজলের পরিমাণ হ্রাস করে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি কর এবং উদ্বেগ ও হতাশা জনিত উপসর্গগুলো দূর করে।
এছাড়াও অশ্বগন্ধা এফরোডাইসিয়াক শ্রেণীভুক্ত ভেষজ, অর্থাৎ এটি দীর্ঘ মেয়াদে যৌন স্বাস্থ্যর উন্নতি সাধন করে। তাই এটি একইসঙ্গে ইন্ডিয়ান জিনসেং হিসেবেও পরিচিত। এছাড়াও এর রয়ছে নানা ওষুধি গুণ।
রক্তের শর্করা কমায়
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অশ্বগন্ধা রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও বেশ কার্যকর।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ওপর স্বল্প পরিসরে করা গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে ৩০ দিনেই রক্তের শর্করা এতটাই নিয়ন্ত্রণে আসে যে আলাদা কোনো ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না। গবেষণা পত্রটি আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের পাবমেড জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান
পাবমেড প্রকাশিত গবেষণাটিতে আরও জানা যায় যে, অশ্বগন্ধা দেহে অ্যাপোপটোসিস উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ক্যান্সার কোষগুলিকে হত্যা করতে সক্ষম।
ধারণা করা হয় যে, এটি একইসঙ্গে নতুন কোষের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। প্রথমত এটি ক্যান্সার কোষের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে এর অভ্যন্তরে রিঅ্যাক্টিভ অক্সিজেন স্পেসিজ বা আরওএস তৈরিতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত, এটি অ্যাপোপটোসিসের বিরুদ্ধে ক্যান্সার কোষের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়।
রক্তের কোর্টিজলের পরিমাণ হ্রাস করে
আমরা যখন মানসিক চাপে থাকি তখন আমাদের দেহ কোর্টিজল নামক এক ধরণের স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ ঘটায়। কোর্টিজলের পরিমাণ বেড়ে গেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তলপেটে চর্বি জমে যেতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অশ্বগন্ধা কোর্টিজলের পরিমাণ হ্রাস করতে খুবই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়
মানসিক চাপ হ্রাস করবার ওষুধ হিসেবে অশ্বগন্ধা সর্বাধিক পরিচিত ও সমাদৃত। এটি উদ্বেগ ও হতাশা জনিত অবসাদ এবং এর অন্যান্য উপসর্গগুলি দূর করে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপে ভোগা ৬৪ জন লোকের উপর ৬০ দিন ধরে চালানো এক পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, এটি উদ্বেগ ও নিদ্রাহীনতা দূর করতে খুবই উপকারী।
বিষণ্ণতা দূর করে
বিষণ্ণতা হতে মুক্তি পেতে অশ্বগন্ধা বেশ কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৬০০ এমজি (উচ্চমাত্রায়) অশ্বগন্ধা গ্রহণের ফলে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি ঘটে এবং এক্ষেত্রে সফলতার হার প্রায় ৭৯ শতাংশ।
যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
নিয়মিত অশ্বগন্ধা গ্রহণ করলে দেহের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রভাবিত হয় এবং জন্মদানে অক্ষম পুরুষের উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
পাবমেডে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, ৭৫ জন সন্তান জন্মদানে অক্ষম পুরুষের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যে, অশ্বগন্ধা গ্রহণের ফলে স্পার্ম কাউন্ট বেড়ে যায়।
এছাড়াও অশ্বগন্ধা ব্যবহারের ফলে উল্লেখযোগ্যভাবে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি পায়, যা পুরুষের দেহে কামোদ্দীপনা সৃষ্টি করে থাকে। দেহে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে গেলে যৌন অক্ষমতা দেখা দেয়।
পেশী বৃদ্ধি ঘটায় ও শক্তিশালী করে
অশ্বগন্ধার শেকড় চূর্ণ সেবন করলে পেশীর বৃদ্ধি ঘটে এবং তা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। প্রতিদিন ৭৫০-১২৫০ মি.গ্রা. পরিমাণে সেবন করলে এক মাসেই ফলাফল বুঝতে পারা যায়। এছাড়াও এটি দেহের চর্বি কমাতেও বেশ কার্যকর।
কোলেস্টেরল কমায়
রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসেরাইড কম করার মধ্য দিয়ে অশ্বগন্ধা হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি রক্ত থেকে প্রায় ৫৩% অব্দি কোলেস্টেরল হ্রাস করে এবং ট্রাইগ্লিসেরাইড হ্রাস করে প্রায় ৪৫%।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বিভিন্ন প্রাণী ওপর চালানো গবেষণায় জানা গেছে, অশ্বগন্ধা দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট মস্তিষ্ক ও স্মৃতি সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সমাধানেও খুব কার্যকরী।
এটি নিয়মিত গ্রহণের ফলে সৃষ্ট অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সক্রিয়তা আমাদের নার্ভের কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়।
অধিকাংশ লোকের জন্যই অশ্বগন্ধা গ্রহণ নিরাপদ
নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর, তরুণ কিংবা বৃদ্ধ প্রায় সব ধরণের লোক অশ্বগন্ধা সেবন করতে পারেন।
তবে গর্ভবতী নারী ও যেসব নারীরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তাদের জন্য অশ্বগন্ধা নিরাপদ নয়। তথ্যসূত্র: হেলথলাইনডটকম
টাইমস/এনজে/জিএস