স্বাস্থ্যবান লোকদের কিছু অভ্যাস

কথায় আছে “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল”। তাই হাসি-খুশি সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায় স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেয়া আমাদের সবার কর্তব্য। অনেকেই আছেন যারা অল্প খেলেও ওজন বাড়ে। আবার এমন অনেকেই আছেন যারা অনেক খেলেও রোগা-পটকাই থেকে যান।

যারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তারা এমন কি করেন, যা তাদের এই সাফল্যের চাবিকাঠি? বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কেউ জীবনাচরণে পরিবর্তন আনার মধ্য দিয়ে অর্থাৎ কিছু অভ্যাস বাদ দিয়ে নতুন কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে খুব সহজেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে উঠতে পারে।

চলুন স্বাস্থ্যকর কিছু অভ্যাস সম্পর্কে জেনে নিই-

প্রচুর পানি পান করুন
পানি পানের অনেক উপকারিতা। এটি আপনার দেহকে আদ্র রাখবে। তাছাড়া এটি আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করে। চিনিযুক্ত পানীয় স্থূলতা আর ডায়াবেটিস-২ রোগের কারণ। কিন্তু আপনি যদি সাধারণ খাবার পানি পান করতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন, তাহলে তাতে কমলা, লেবু, তরমুজ কিংবা শসার টুকরো ছেড়ে দিতে পারেন।

বাইরে থেকে ঘুরে আসুন
রোদে কিছুক্ষণ থাকলে দেহের ভিটামিন-ডি এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এটি আপনার হাড়, হৃদপিণ্ডসহ মেজাজের জন্য ভালো। এছাড়াও বাইরে থাকলে টিভি বা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার চেয়ে আপনার শরীরের নড়াচড়া বেশি হবে।

যদি সম্ভব হয় তবে রাস্তায় না হেঁটে প্রকৃতির মাঝে হাঁটতে চেষ্টা করুন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব লোক শহরের সবুজ স্থানে ঘোরাফেরা করেন তারা কৃত্রিম পরিবেশে ঘোরাফেরা করা লোকদের থেকে বেশি শান্ত থাকে।

সকালে নাস্তা করুন
সকালের নাস্তা আপনার মেটাবোলিজম বাড়িয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে অতিরিক্ত খাওয়ার চাহিদা রোধ করে। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক লোক সকালে স্বাস্থ্যকর নাস্তা করেন তারা কর্মক্ষেত্রে ভালো করেন এবং যেসব শিশু সকালের নাস্তা বাদ দেয় না তারা পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়।

যদি সকালে প্লেট ভর্তি খাবার আপনার পছন্দ না হয়, তবে হালকা কিছু খান, তাতে কিছু ফল রাখুন। কিন্তু কোনো মতেই সকালের খাবার বাদ দেবেন না।

ভারসাম্য ঠিক রাখুন
আপনি যদি তরুণ আর কর্মক্ষম হন, তাহলে সঠিক ভারসাম্য আপনাকে আঘাতের হাত থেকে রক্ষা করবে। আর যদি বয়স্ক হন তাহলে এটি আপনাকে দীর্ঘ সময় কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করবে এবং পড়ে গিয়ে হাড় ভাঙার সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে।

আপনার বয়স যাইহোক, সঠিক ভারসাম্য বলতে পেশির সবলতা, হৃদযন্ত্রের সুস্থতা এবং আত্মবিশ্বাসকে বোঝায়। যোগ ব্যায়াম ও থাই চি’র মাধ্যমে আপনি দেহের ভারসাম্য সঠিক রাখতে পারেন। অথবা এমন কিছু যা আপনাকে নড়াচড়া করায় ও হাটায়, সেগুলি এক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

পর্যাপ্ত ঘুমান
পর্যাপ্ত ঘুমানোর অনেক সুফল রয়েছে। রাতের ঘুম আপনার মেজাজ ভালো রাখে, স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ তীক্ষ্ণ করে এবং আপনাকে নতুন কিছু শিখতে সাহায্য করে।

দীর্ঘ মেয়াদে এটি আপনার হৃদরোগের সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে এবং ঝামেলামুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। রাতে নিয়মিত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানোর লক্ষ্য ঠিক করুন। প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে এবং ঘুম থেকে উঠতে চেষ্টা করুন।

খাবার নিয়ে পরিকল্পনা করে রাখুন
দীর্ঘ মেয়াদে এটি আপনাকে সময় ও অর্থ বাঁচাতে সাহায্য করবে। আপনার লক্ষ্য নির্দিষ্ট করুন। আপনি কি ওজন কমাতে চাইছেন? তাহলে চিনি, চর্বি, শর্করা প্রভৃতি খাবার কমিয়ে দিন। আমিষ ও ভিটামিন যোগ করুন।

খাবারের পরিকল্পনা আপনার দেহকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আপনি জানেন আপনি কি, কেন ও কখন খাচ্ছেন।

শরীরচর্চা
আরেক কাপ চা বা কফি হাতে তুলে না নিয়ে বরং উঠে দাঁড়ান আর নড়াচড়া শুরু করেন। শরীরচর্চা আপনার দেহ ও মনের জন্য ভালো। সপ্তাহে ৩০ মিনিটি করে পাঁচবার হাঁটলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। আপনি যদি একসঙ্গে এতক্ষণ হাঁটতে না পারেন, তবে ছোট ছোট হাঁটাও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

অফলাইনে চলে যান
আপনি কি খুব বেশি ইমেইল আর সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটতে থাকেন। এটা ঠিক যে আপনার বন্ধু আর পরিবারের সর্বশেষ খোঁজ খবর এক ক্লিক দূরে মাত্র, কিন্তু আপনার কি সত্যিই ভাই বা বন্ধুর সর্বশেষ খাবারের ছবি দেখার দরকার আছে? সকাল অব্দি এগুলোকে অপেক্ষা করতে দিন। একটি নির্দিষ্ট সময় লগ আউট করে মোবাইল ফোনটিকে দূরে সরিয়ে রাখুন। যখন আপনি ফোন থেকে দূরে থাকবেন, তখন অন্য কিছু করার জন্য সময় বাঁচবে। এ সময়ে আপনি একটু হেঁটে আসতে পারেন, একটি বই পড়তে পারেন অথবা অসাধারণ রাতের খাবার তৈরি করতে কিছু সবজি কাটতে পারেন।

নতুন কিছু শিখুন
নতুন কিছু শিখতে থাকলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। নাচের ক্লাসের জন্য নিবন্ধিত হতে পারেন অথবা সৃষ্টিশীল লেখার জন্য ওয়ার্কশপে যেতে পারেন। এর থেকেও ভালো, নতুন একটি ভাষা শিখে নিন। মানসিক কাজ আপনার বার্ধক্যের প্রভাব ধীর করে এবং এটি অ্যালঝেইমার রোগের প্রভাবকেও মন্থর করতে সক্ষম।

ধূমপান করবেন না
যদি ধূমপায়ী হন, তাহলে অবশ্যই তা বর্জন করুন। এটি সুস্বাস্থ্য অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আপনার দেহ খুব দ্রুত নিজের সংস্কার করে নিতে সক্ষম। আপনার শেষ সিগারেটটির ২০ মিনিটের মধ্যেই আপনার হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ কমে আসে।

 

পেশিগুলিকে প্রশিক্ষিত করুন
শক্ত সামর্থ্য হবার প্রশিক্ষণ আপনার শরীরের পেশির মজবুত করে গড়ে তোলে। যার অর্থ এসব কসরত আপনাকে পাতলা হতে, হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে এবং হাড় গঠনে সহায়তা করবে। পুশআপ, লাঞ্জ এবং ওজন ওঠানোর মত কসরত সপ্তাহে অন্তত দুই দিন করার চেষ্টা করুন। তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি.কম

 

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতে লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে Apr 26, 2024
img
৪৬তম বিসিএসের প্রিলি আজ, মানতে হবে যত নির্দেশনা Apr 26, 2024
img
পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকসহ আটক ৩ Apr 26, 2024
img
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য জানালেন সাকিব Apr 25, 2024
img
গাজায় ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেয়ার অভিযোগ Apr 25, 2024
img
দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রেকর্ড, কতদিন থাকবে জানাল অধিদপ্তর Apr 25, 2024
img
শিক্ষক নিয়োগ: পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে হাতে পৌঁছে যেত উত্তরপত্র Apr 25, 2024
img
বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকে তাকালে আমরা লজ্জা পাই: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী Apr 25, 2024
img
রবিবার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস Apr 25, 2024
img
এক দিনের ব্যবধানে আরও কমলো স্বর্ণের দাম Apr 25, 2024