কোভিড-১৯ রোগে কেউ সংক্রমিত হলে চিকিৎসা করাচ্ছেন দেশসেরা হাসপাতালে, কেউ বা আবার সরকারি হাসপাতালে ঠাঁই না পেয়ে ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে। কেউ সংক্রমিত হলে তাকে হাসপাতালে নিতে একাধিক মানুষ এগিয়ে আসছেন, কেউ আবার নিঃসঙ্গ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন। করোনাকালে বাংলাদেশের এমন সামাজিক বৈষম্য হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
টেলিগ্রাফের এশিয়ান অঞ্চলের লেখক সুসন্নাহ সেভেজ তার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ‘ভঙ্গুর’ বলে মন্তব্য করেছেন।
সামাজিক বৈষম্যকে চিত্রায়ন করতে লেখার শুরুতে তিনি সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়- “বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে বহনকারী হেলিকপ্টার ঢাকায় নামতেই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ছোট একটা জটলা লেগে যায়। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এই সদস্যকে তড়িঘড়ি করে নেয়া হয় বাংলাদেশের প্রিমিয়ার স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা থাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)।”
এতে বলা হয়, “বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে পারছেন। এর ঠিক কয়েক মাইল দূরে অনেক হতভাগ্য ভুক্তভোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকছেন।’
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “মহামারীর আঘাত ১৭ কোটি জনসংখ্যার ঘনবসতিপূর্ণ দেশটির ‘ভঙ্গুর’ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ফাটলগুলো যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা এমিনেন্সের সিইও ড. শামীম তালুকদারকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা রোগী শনাক্ত করতে যে হারে দেশটিতে টেস্ট হচ্ছে সেটি ‘খুব কম’।
ঢাকার বাইরের শনাক্তকরণ মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে শামীম তালুকদার বলেন, “আমাদের সঠিক প্রশিক্ষণ নেই। প্রচুর ফলস নেগেটিভ আসছে।”
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সঠিকভাবে পরীক্ষা করতে পারলে সরকারি তালিকায় মৃতের সংখ্যাও বাড়বে। ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক জানান, স্বাভাবিক সময়ের চাইতে গত দুই মাসে প্রায় দ্বিগুণ কবর খনন করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে ঢাকার রায়েরবাজার কবরস্থান। সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক জানান, মে মাসের শেষ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন কোভিড রোগীকে সেখানে কবর দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কোভিডে মারা যাননি এমন মৃতদেহের সংখ্যা আগের তুলনায় এখন দিনে গড়ে ১০টি বেড়েছে।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরেও ধাক্কা আসতে শুরু করেছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন জানান, বাংলাদেশে একটা ফাঁকা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। চকচকে হাসপাতাল কখনও কখনও সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডের ভবনের মতো দেখালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভেতরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই, নেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী।
টাইমস/জিএস