নেপালে জেন-জি বিক্ষোভে নিহত বেড়ে ২০

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন জি প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হওয়া বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ‍গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে আহত হয়েছেন আরও ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ।

দেশটির সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট বলছে, রাজধানী কাঠমান্ডুতে নিরাপত্তা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে সংসদ ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার লক্ষ্যে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।

স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ চত্বরে প্রবেশ করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিয়েছেন। এছাড়া দাঙ্গা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথরও নিক্ষেপ করেছেন বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক তরুণ ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘‘পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। পুলিশের ছোড়া একটি গুলি আমার পাশ দিয়ে চলে গেছে। সেই গুলি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের হাতে বিদ্ধ হয়েছে।’’

কাঠমান্ডু উপত্যকা পুলিশের কর্মকর্তা শেখর খানাল ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৮ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেককে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইতাহারিতে বিক্ষোভ সহিংস আকার ধারণ করেছে। সেখানে দু’জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। সোমবার সকাল থেকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ-সহিংসতার বিষয়ে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। সকাল থেকেই স্কুল ও কলেজের ইউনিফর্ম পরা হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন।

এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে নেপালের জাতীয় পতাকা ও ‘দুর্নীতি বন্ধ কর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়’, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দাও’, ‘যুব সমাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

আয়োজকরা দেশজুড়ে ডাক দেওয়া এই বিক্ষোভকে ‘জেন জি প্রজন্মের আন্দোলন’ বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন, এই আন্দোলন তরুণদের ক্ষোভের প্রতিফলন; যা সরকারের দুর্নীতি দমন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যর্থতার কারণে তৈরি হয়েছে।

• কারফিউ জারি, সেনা মোতায়েন
গত সপ্তাহে নেপালের ক্ষমতাসীন সরকার ফেসবুকসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করে। এসব প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। পাশাপাশি ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা, ভুয়া খবর এবং প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হতো বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

নেপালের প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যে কারণে দেশটিতে এই নিষেধাজ্ঞা ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

কাঠমান্ডুর জেলা কার্যালয়ের মুখপাত্র মুক্তিরাম রিজাল রয়টার্সকে বলেন, বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে জল কামান, লাঠিচার্জ এবং রাবার বুলেট ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংসদ ভবন এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সহিংসতার ঘটনায় সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে সিংহদরবার এলাকাতেও কারফিউ জারি করা হয়েছে। ওই এলাকায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা রয়েছে।

সন্ধ্যার পর সহিংসতা কমলেও বিক্ষোভকারীরা দেশটির সংসদ ভবনের বাইরের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। পুলিশ বলেছে, ক্ষিণ সমভূমির বিরাটনগর ও ভরতপুর এবং পশ্চিম নেপালের পোখরাতেও একই ধরনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

• দুর্নীতি নিয়ে অসন্তোষ
নেপালের অনেক জনগণ মনে করেন, দেশটিতে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। দেশটির বিভিন্ন বিরোধীদল অলি সরকারের দুর্নীতির তীব্র সমালোচনা করছে। সরকার দুর্নীতি দমন কিংবা অর্থনৈতিক সঙ্কটের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা।

প্রতিবছর নেপালের হাজার হাজার তরুণ-তরুণী কাজ ও পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। দেশটির সাবেক অর্থসচিব রামেশ্বর খানাল বলেন, কর্মসংস্থানের অভাব একটি সমস্যা হলেও ক্ষোভের মূল কারণ সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্নীতি এবং দুর্নীতি দমনে ব্যর্থতা।

নেপালের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে, যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে।

সমালোচকরা বলছেন, এসব পদক্ষেপ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বলছে, ভুয়া খবর, তথ্যের গোপনীয়তা, অনলাইন অপরাধ এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেশের তিন বিভাগে বজ্রবৃষ্টির আভাস Nov 03, 2025
img
ভোটের বাজারে এনসিপির কোনো অবস্থান নাই : মাসুদ কামাল Nov 03, 2025
img

বিয়ারিং প্যাড পড়েপথচারী নিহতের ঘটনা

জীবনের মূল্য হিসেবে নয়, তাৎক্ষণিক সাহায্য করা হয়েছে : ডিএমটিসিএল এমডি Nov 03, 2025
img
বিসিবির নতুন পরিচালক রুবাবা দৌলা Nov 03, 2025
img
এআই এখন মেটার উদ্বেগের বড় কারণ Nov 03, 2025
img

তাইওয়ান ইস্যুতে ট্রাম্পের কড়া বার্তা

আমি সবার কাছে সব কিছু বলি না, চীন কিছু করলে পরিণতি হবে ভয়াবহ Nov 03, 2025
img
বিশ্বকাপ জিতে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন স্মৃতি মান্ধানা Nov 03, 2025
img
ভারতে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেল ১৯ জনের Nov 03, 2025
img
খাগড়াছড়িতে ট্রাক উল্টে প্রাণ গেল ১ জনের, আহত ৩ Nov 03, 2025
img
এবার ফ্যান্টাসি অ্যাডভেঞ্চারে কার্তিক আরিয়ান Nov 03, 2025
img
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় সাক্ষীদের দ্বিতীয় দিনের জেরা আজ Nov 03, 2025
img
তেহরানের পানিসংকট, ২ সপ্তাহেই শুকিয়ে যেতে পারে প্রধান জলাধার Nov 03, 2025
img
টেস্ট প্রস্তুতির জন্য টি-টোয়েন্টি দল ছাড়লেন ট্রাভিস হেড ও কুলদিপ Nov 03, 2025
img
কে কি লিখছে, তাতে যায় আসে না : ভাবনা Nov 03, 2025
img
বাংলাদেশ ক্রিকেট কনফারেন্স আয়োজনের ঘোষণা বিসিবি সভাপতি বুলবুলের Nov 03, 2025
img
সিরিজ সেরা পুরস্কার বাবা-মাকে উৎসর্গ করলেন দীপ্তি শর্মা Nov 03, 2025
img
জেতার অভ্যাসটা নিয়মিত করতে হবে, বললেন ভারতের অধিনায়ক Nov 03, 2025
img
৪ মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব দিয়েছে সরকার Nov 03, 2025
img
ব্যক্তিজীবনের আভাসে আলোচনায় পল্লবী শর্মা! Nov 03, 2025
img
রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অবস্থান নিয়মিতই পরিবর্তন করছে : জিল্লুর রহমান Nov 03, 2025