ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে নানা কারোণেই আলোচনায় এসেছেন ভিপি প্রার্থী শামীম। তাঁর বিরুদ্ধে জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও ওঠে। অবশেষে এ বিষয়ে নিজেই ব্যখ্যা দিলেন এই প্রার্থী। ফেসবুকে ফেসবুকে ছবি ও স্ক্রিনশট প্রকাশ করে নিজের অবস্থার জানান দিলেন।
একইসঙ্গে বললেন, যদি রাজনীতি করতে হয় তাহলে ছাত্রদল বা ছাত্রলীগ করতেন তিনি।
একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, BCL , BSL এবং জাসদ ছাত্রলীগবিভ্রাট এবং নীল নকশার রহস্য নামে একটি আর্টিকেল লিখেন।
তিনি বলেন, প্রথমত অনেকেই তিনটাকে গুলিয়ে ফেলছেন , কারণ গ্রাজুয়েটদের অনেকেই জানেন না আসলে এগুলো কী। আসলে জানাটাও কঠিন ।
১৯৭২ সালে ছাত্রলীগ দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। শেখ মুজিবুর রহমানকে বিরোধিতা করে গঠিত হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ( লাল লোগো). আরেকটা বাকশালে থাকে যেটা কালো লোগো। পরে লাল লোগোর ছাত্রলীগ জাসদ গঠন করে। যেখানে ছিলেন আহমদ ছফা, পরে সলিম খান এবং খালেদ মহি্উদ্দীনের মতো ব্যক্তিরাও।
১৯৯২ এর পর জাসদ খন্ড খন্ড হতে শুরু করে, এবং সবশেষ এখন তিনটি অংশ হয়ে আছে - ১. হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে থাকা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( জাসদ) এবং তাদের ছাত্র সংগঠন জাসদ ছাত্রলীগ যা আওয়ামী লীগের ১৪ দলের অংশ ছিল ২. জেএসডি যেটির নেতৃত্বে আছেন আসম আব্দুর রব যেটির ছাত্র সংগঠন যেটি ৩. শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ জাসদ যাদের ছাত্র সংগঠন BCL not BSL , প্রসঙ্গত এই সংগঠন ১৪ দলের নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং তা প্রত্যাখান করে । তাদের বন্দনা করাও আমার কাজ নয় তাই আমি নিচে স্ক্রিনশট দিলাম ।
নিজের সম্পৃক্ততার কৈফিয়ত দিয়ে শামীম বলেন, BCL এর সাথে আমার যে সম্পৃক্ততার অভিযোগ করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা আগেও দিয়েছি । তবুও BCL কে BSL হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ না বুঝে তা বিশ্বাস করা শুরু করেছে।
সম্প্রতি ২১ ফ্রেব্রুয়ারিতেও এই বিভ্রাট নিয়ে রিউমার স্কানার তথ্য প্রকাশ করেছে , তার লোগো আলাদা , লীগেরটা তিনটা স্টার , BCL এরটা ১ টা স্টার । যাহোক আমার সম্পৃক্তার যে ছবি ছড়ানো হচ্ছে , তার কৈফয়ত দেয়া দরকার । ২০২০ সালে আমি জাসদের উত্থান পতন বইটা পড়ে বিমোহিত হই এবং শেষের দিকে আমার আগ্রহ জাগে আসলে আওয়ামী ন্যারেটিভের উল্টা বয়ান তো জাসদে আছে এটা কী করে জানা যায়। research gate এ আমি এই টপিক অ্যাড করি যে Misrepresentation of history as a tool of political hegemony in Bangladesh?, তারপর আমি খুজঁতে থাকি রাজনীতির রহস্যপুরুষ এই সিরাজুল আলম খানের কাছে যেতে হবে। যেভাবে হোক। আমার ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে থাকে এবং আমি যথেষ্ট টাকা পয়সা ইনকাম করি জীবনে। ফলে আমার দলীয় রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। আমার বন্ধু রামীমের মাধ্যমে মাহফুজুর রহমান রাহাত ভাই যিনি তখন BCL এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কেন্দ্রে সম্ভবত।
শামীম বলেন, ঢাবিতে তাদের দুজন ছিলেন সভাপতি এবং সেক্রেটারি। আমি ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করি যে আমি সিরাজুল আলম খান আর রব ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চাই। উনি বলেন ব্যবস্থা করবেন। উনার দলে লোকবল কম থাকায় আমাকে নানা প্রোগ্রামে হাজির থাকতে বলতেন, উনাদের কার্যক্রম আওয়ামী বিরোধী বলে আমি কয়েকটাই দাঁড়িয়ে থেকেছি। এমনকি আসম আব্দুর রব ভাই ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঢাবির শহীদ মিনারে আসবে জেনে আমি উনাদের অনুরোধ করি উনাদের একটা পাশ কার্ড আমাকে দিতে। ফলে উনি দিয়েছিলেন। যেসব ছবি এখন ভাইরাল করে আমার নামে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
রাজনীতি করলে ছাত্রদল বা ছাত্রলীগ করতেন জানিয়ে বলেন, আমি রাজনীতি করলে ছাত্রদল করতাম , অথবা লীগ করতাম BCL কেন করব? আর তাদের রাজনীতির নিয়ম হচ্ছে ফর্ম পূরণ করতে হয় প্যাডে নাম থাকতে হয়। সেই পার্টির ততকালীন নেতারাও বিবৃতি দিয়েছেন যে আমি সদস্যই ছিলাম না। তারপরও আমার কথাগুলো যখন জনসমর্থন পেয়েছে আমার কথাগুলি তখনই এগুলো মিথ্যা আকারে ছড়ানো হয়েছে , একটি কোচিং এর টিসার্স গ্রুপ থেকে। যার প্রমাণ নিচে দেয়া হলো এবং লোগোর বিভ্রাটের প্রমাণ ও দেয়া হলো–
২. জুলাই নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগই নাই । আমি শুরু থেকেই আন্দোলনে ছিলাম এবং সেসব ছবিও আছে। ১৪ জুলাই রাতে আমি ঢাবিতে আসি এবং গণজোয়ার দেখে বলি হাসিনার পতনের সময় এসে গেছে। ১৫ জুলাই হামলা হলে আমি পোস্ট করে যাদের সাথে পরিচয় আছে তা ছিন্ন করি। ১৬ তারিখ ঢাবির প্রথম ব্যক্তি হিসেবে হাসিনার পতন আসন্ন তা পোস্ট করি এবং টার্গেটেড হই। আপনারা অনেকেই জানেন ১৫ তারিখ লীগ আমাকে আর আমার ছোটভাই ঢাকা কলেজের তানভীরকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
ধারাবাহিকভাবে বলেন, রাতে হল থেকে পালিয়ে উত্তরা যাই আমার বাসাতে ।এবং আমার কোর্স শুরুর কথা ছিল ১৮ তারিখ কারণ আমরা ৭-১০ দিন আগে ভর্তি শেষ করি । কোর্স বন্ধ করে দেই । ছাত্রলীগের হামলাকারীদের ভবিষ্যতে না পড়ানোর ঘোষণা করি । তারপর আমার আইডিটি ডিজেবল করা হয় । ৫ আগস্টের পর আইডি ফেরত পাবার চেষ্টা করি এবং ওপেন হয়েই তা বন্ধ হয়ে যায় । ফলে অনেকে জেনেশুনে প্রোপাগান্ডা শুরু করেছেন স্রেফ প্রার্থী হয়েছি বলে । আমার ওইসময় বিকাশে অনেক টাকাই ছিল ১০০০ এর মতো ছাত্র ছিল কোর্সে সকলকে আমি আন্দোলনে যেতে বলি এবং আমার বন্ধুবান্ধব যারা বিভিন্ন জায়গায় আটকা ছিল তাদের টাকা পাঠাতে শুরু করি । উত্তরায় পুলিন বকশী লেখক, জামী ভাইদের সাথে আন্দোলনে অংশ নেই ।
স্ক্রিনশট
৩. সম্প্রতি ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষিকা ক্লাসে জুলাইকে মব আখ্যা দেয় এবং ফেসবুকে সব আন্দোলনকারীদের রাজাকার বললে, আমি সবার মতোই তার প্রতিবাদ করি এবং ডিন ও প্রোভিসি ম্যামকে স্মারক লিপি দিই এবং সময় বেধে দেই । জুলাই এর অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা করি ফলে নীল দলের অনেকে রুষ্ঠ হোন । ভবিষ্যতে আমি ভিপি হলে তাদের রাজনীতি বিগড়ে যেতে পারে, পলিটিক্যাল বন্দোবস্ত ভেঙে যাবার ভয়ে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে ফ্রেম করতে উদ্ধত হয় । এর আগে তারা আমাকে শিবির ছানা, মব গুরু আখ্যা দেয় । এখন তারা আমাকে দমাতে উল্টা পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।
শামীম বলেন, বলা যায় রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আমি আজকে সব পক্ষের শত্রুতার বলি হচ্ছি ,এখনই । কিন্তু তারা আমাকে দমাতে পারবে না, ঢাবির ছেলেমেয়েরা অন্তত এটুকু বুঝতে পারে যে কোনটা সত্য আর কোনটা প্রোপাগান্ডা । আর কে বা কাহারা এটার প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন আপনারা দেখলে বুঝতে পারবেন।
কেএন/টিকে