জুলাই অঙ্গীকারনামা চূড়ান্ত, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের শেষ সংলাপ আজ

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর অঙ্গীকারনামা চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে কমিশনের বৈঠকে জুলাই সনদের খসড়ায় অঙ্গীকারনামার ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া মতামত এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পর্যালোচনা শেষে তা চূড়ান্ত করা হয়।

এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংলাপ হবে। সংলাপে অংশ নিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে কমিশন। 

দলগুলোর সঙ্গে এটিই কমিশনের শেষ সংলাপ। সংলাপে পাওয়া মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে।

অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে,

>> জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন স্বেচ্ছাশ্রম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তেপ্রক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক ঐকমত্যের দলিল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব।

>> জনগণ এই রাষ্ট্রের মালিক; তাদের অভিপ্রায়ই হবে সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে।

এমতাবস্থায় আমরা রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ গ্রহণ করেছি বিধায় এই সনদ পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করব।

>> আমরা জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করব না; উপরন্তু উক্ত সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করব।

>> আমরা ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি যে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের দীর্ঘ ১৬ বছরের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করব।

>> আমরা সম্মিলিতভাবে ঘোষণা করছি যে, গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও গুম-খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।

>> জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ বাংলাদেশের মৌলিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করব।

>> আমরা এই মর্মে একমত যে, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।

জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

এমআর 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বৈঠক Dec 22, 2025
img
১০ হাজার রিজার্ভ সেনার বাড়িতে অস্ত্র রাখার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল Dec 22, 2025
img
ঢাকায় বাড়ছে শীত, তাপমাত্রা নামল ১৬ ডিগ্রির ঘরে Dec 22, 2025
img
ইন্দোনেশিয়ায় বাস উল্টে ১৬ জনের মৃত্যু Dec 22, 2025
img
বাফুফের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন Dec 22, 2025
img
১৫ বছর পর বিশ্বের বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র আবারও চালু করছে জাপান Dec 22, 2025
img

বিবিএস-এর জরিপ

৯৫.৪% শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৮৭.৫% স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নত পানির উৎস Dec 22, 2025
img
রিমান্ডে নেয়ার সময় কারাগারের গেটে প্রাণ গেল আ. লীগ নেতার Dec 22, 2025
img
মরুভূমির দেশে তুষারের ছোঁয়া, বিরল দৃশ্য দেখল সৌদি আরব Dec 22, 2025
img
নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা Dec 22, 2025
img
২০২৫ কাঁপিয়েছে যেসব বলিউড সিনেমা Dec 22, 2025
img
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩২৩ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতল নিউজিল্যান্ড Dec 22, 2025
img
শরীয়তপুর ও চাঁদপুর নৌরুটে সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল স্বাভাবিক Dec 22, 2025
img
পশ্চিম তীরে নতুন ১৯টি বসতি অনুমোদন দিলো ইসরায়েল Dec 22, 2025
img
কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের তীব্রতা, বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ Dec 22, 2025
img
ম্যানইউকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা ৭ জয় অ্যাস্টন ভিলার Dec 22, 2025
img
বিশ্ব প্রতিযোগিতায় শুধু ডিগ্রি নয়, প্রয়োজন সক্ষমতাও : আসিফ নজরুল Dec 22, 2025
img
গ্রিস উপকূলে নৌকা থেকে ৪৩৭ জন বাংলাদেশি অভিবাসী উদ্ধার Dec 22, 2025
তারেক রহমানকে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে ফেনীতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা Dec 22, 2025
নারীদের লেখা গল্পে আবেগের সত্যতা আলাদা হয়: কৃতিকা কামরা Dec 22, 2025