ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন নগরী বালি রূপকথার দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। সারা বছর লাখো পর্যটকে মুখরিত থাকে এই দ্বীপ। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা মুষলধারে বৃষ্টি সেই দ্বীপকে পরিণত করেছে মৃত্যুপুরীতে। অতি ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে শুধু বালিতেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। পুরো দেশজুড়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। গত এক দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
বন্যার ভয়াবহতায় বালিতে এক সপ্তাহের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। নদীর পানি উপচে পড়া, পাহাড়ি ঢল আর ভূমিধসে দ্বীপজুড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিধ্বস্ত হয়েছে বহু বাড়িঘর, হাসপাতাল, অফিস ও আদালত। ভেঙে পড়েছে একাধিক সেতু, প্রধান সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা।
রাজধানী দেনপাসারেই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, নিখোঁজ আরও দুজন। গিয়ানইয়ার এলাকায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বাদুং কাউন্টিতে প্রাণ হারিয়েছেন একজন। এছাড়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে অন্তত দুজনের। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, পানির তোড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
উদ্ধার কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে প্রবল স্রোত আর পানির উচ্চতায়। বালির উদ্ধার সংস্থার প্রধান নিয়োমান সিদাকার্যা জানিয়েছেন, প্লাবিত এলাকায় প্রবেশ করতে গিয়ে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ছেন তারা। এমনকি ভারী ট্রাকও ডুবে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এখন পর্যন্ত হাজারো মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শুধু বালিই নয়, পাশের নুসা তেঙ্গারা প্রদেশেও একইসঙ্গে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত তিনজন। বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে দিন কাটাচ্ছেন। রাজধানীতে দুটি ভবন ধসে পড়ে গৃহহীন হয়েছেন প্রায় ৮৫ জন।
প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নিখোঁজদের খুঁজে বের করা, বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসন এবং ত্রাণ কার্যক্রম দ্রুততর করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোও এই বন্যার আঘাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হোটেল মালিকরা বলছেন, তাদের ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে নর্দমা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় পানিনিষ্কাশন প্রক্রিয়াও স্থবির হয়ে গেছে।
আবহাওয়া দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বালিতে রেকর্ড ৩৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যদিও শুক্রবার বৃষ্টিপাত কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে, তবু এখনো রাজ্যজুড়ে জারি আছে তীব্র আবহাওয়ার সতর্কতা।
ইকে/টিকে