বাংলাদেশের ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান ও সম্প্রতি নেপালের আন্দোলনের পর উভয় দেশের সরকার গঠন ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল। আলোচনার শেষের দিকে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, নেপালিরা আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান, নেপালিরা আমাদের চেয়ে কম লোভী, নেপালিরা আমাদের চেয়ে কম মতলববাজ- সেই কারণে তারা ছয় মাসে নির্বাচন দিতে পারে। আমরা দেড় বছরে পারব কি না এখনো জানি না।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এসব কথা বলেন তিনি।
মাসুদ কামাল বলেন, নেপালে আন্দোলন করেছে ইয়াং জেনারেশন, তার সঙ্গে দেশের মানুষ যুক্ত হয়েছে। আমাদের এখানেও আন্দোলনের শুরুতে ইয়াং জেনারেশনই ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে পুরো দেশের মানুষ যুক্ত হয়েছে। এটুকু মিল।
কিন্তু মিল নেই কোথায়? মিল নেই হলো- উনাদের যিনি প্রধান নির্বাহী, যিনি সরকার প্রধান হয়েছেন যে প্রধান বিচারপতি, উনি বলেননি যে এই তরুণরাই তার এমপ্লয়ার। আর আমাদের এখানে বলা হয়েছিল যে এমপ্লয়ার। এখন যেহেতু এমপ্লয়ার মানে নিয়োগকর্তা, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ছিল এবং সেই কৃতজ্ঞতার জন্য তাদের সাতখুন মাফ হয়ে গেছে। তারা এসেছে, তারা এসে যারা না কি একটা নরমাল চাকরির জন্য ধরনা দিচ্ছিল, একটা বিসিএসের চাকরির জন্য আন্দোলন করছিল, যারা চাকরি পাচ্ছে না- তাদেরকে এনে আপনি মন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছেন।
উনারা এখনো সেটা করছে কি না জানি না, করবে কি না তাও জানি না। সম্ভবত করবে নামমাত্র। নেবেই মাত্র তিনজন। উনারা যে কাজটা এখনো করেননি, করবেন কি না জানি না, মনে হয় করবেন না যে সেটা হলো যারা উনাদের এমপ্লয়ার, তাদেরকে বলেন নাই যে তোমরা একটা পার্টি করো, তোমাদের সারা দেশের লোক চেনে, তোমরা একটা পার্টি করো। এটা বলে নাই, তোমাদের পার্টিতে সময় লাগবে, কোনো সমস্যা নাই, আমি রিসেট বাটন টিপে দিব, এতে সব নতুন করে হবে।
তিনি বলেন, এমনকি নেপালের আরেকটা সমস্যা ছিল। নেপালের ওখানে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। আমাদের এখানে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল আজ থেকে ৫২-৫৩ বছর আগে। এখন সেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তো ভুলাতে হবে। আপনি ভুলাবেন কিভাবে? রিসেট বাটন দেন টিপে। ওদের মুক্তিযুদ্ধ কিছু ভুলানোর ব্যাপার নাই। ওরা কিন্তু বেঁচে গেছে একদিক দিয়ে। আরেকটা জিনিস ওদের নাই, সেটা হলো ওদের এখানে কোনো নোবেল বিজয়ী নাই। সেটা একটা বাড়তি সুবিধা যুক্ত হয়েছে তাদের। কারণ ওনারাতো খুব মেধাবী হন, বুদ্ধিমান হন- উনার মুখের উপরে কেউ কিছু বলতেও পারে না। কাজেই উনারা (নেপালিরা) বেঁচে গেছে।
এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, নেপাল বেঁচে গেছে আরো অনেক কারণে। ছোট প্যাকেজ, বড় প্যাকেজ এ সমস্ত ওদের এখানে ধরাতে হয় না। বড় প্যাকেজ হলে দুই বছর, ছোট প্যাকেজ হলে দেড় বছর- একটা সিস্টেমের মধ্যে ফেলে দেওয়া গেছে কিন্তু। আমরা ছোট প্যাকেজের মধ্যে আছি। দেড় বছরের মাথায় হয়তো নির্বাচন হবে বলা হচ্ছে। যদি না হয়, তাহলে বড় প্যাকেজে যাব। ওরা আরেকটা কাজ করেনি। যে কারণে ওরা ছয় মাসের মধ্যে পারছে। সেটা হলো- ওরা বিদেশ থেকে কিছু ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী নিয়ে আসেনি, যারা এসে সংস্কারের মুলা ঝুলিয়ে ছয় মাস পার করে দেবে। আমাদের এখানে কিছু বুদ্ধিজীবী ভাড়া আসছে বিদেশ থেকে, তারা মহাজ্ঞানী, তাদের ছাড়া দেশ উদ্ধার হবে না, তাদেরকে ছাড়া কেউ সংস্কার বুঝেই নাই। এদেশের এই ভূখণ্ডের বাদবাকি যত লোক আছে, বুদ্ধিজীবী আছে- এরা সবাই ঘাস-খড় এগুলো খেয়ে বড় হয়েছে। সব জ্ঞানী লোক বিদেশী। হ্যাঁ, তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যেয়ে পড়ায়, অতএব তাদেরকে আনতে হবে।
তিনি আরো বলেন, তারপর একটা সংস্কার হবে, যদি সেটা ছোট প্যাকেজ হয়, তাহলে হয়তো ফেব্রুয়ারিতে ইলেকশন হবে। আর বড় প্যাকেজ হলে আগামী জুন পর্যন্ত যেতে পারে। কিন্তু এখনো কেউ জানে না, কবে হবে। যদিও একটা রাজনৈতিক দল বলতেছে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে হোক, ইলেকশন অবশ্যই ফেব্রুয়ারিতে হবে। কী হবে আমরা এখনো জানি না। ওদের এখানে ওটাও বোধয় নাই যে আমাদের এখানে যেমন যদি কেউ না মানে এ সমস্ত বন্দোবস্ত, তাহলে তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য মব আছে আমাদের এখানে। মুক্তিযুদ্ধ ভুলিয়ে দেব মব দিয়ে কোনো সমস্যা নাই। যে সমস্ত স্থাপনার দিকে তাকালে মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে হতে পারে কারো, সে স্থাপনাগুলোই ভেঙে ঘুড়িয়ে দিব। সেটাও কোনো সমস্যা নাই। কাজেই নেপালিদের অনেক সুবিধা।
মাসুদ কামাল আরো বলেন, ওদের একটা মুক্তিযুদ্ধ না থাকার কারণে, ওদের এখানে নোবেল বিজয়ী না থাকার কারণে, ওদের এখানে সরকারের কোন ইয়াং এম্প্লয়ার না থাকার কারণে- ওরা আসলেই বেঁচে গেছে। সেজন্য তারা ছয় মাসের মধ্যে একটা নির্বাচন বেঁচে যাচ্ছে। আমার মাঝে মাঝে নেপালিদের ঈর্ষা হয়। আইকিউতে নেপালের অবস্থান না কি আমাদের চেয়ে নিচু, মানে এই উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নস্তর আইকিউ হলো নেপালের। কিন্তু আমার মনে হয়েছে হিসাবটা আসলে ভুল। নেপালিরা আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান, নেপালিরা আমাদের চেয়ে কম লোভী, নেপালিরা আমাদের চেয়ে কম মতলববাজ- সেই কারণে তারা ছয় মাসে নির্বাচন দিতে পারে। আমরা দেড় বছরে পারব কি না এখনো জানি না।
ইউটি/টিএ