‘যুদ্ধাপরাধ ও জামায়াত বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম সচেতন’

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ টাইমস-এর সাথে কথা বলেছেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ এস. এম. মারুফ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলাদেশ টাইমস-এর নিউজরুম এডিটর হেলাল উদ্দিন।  

বাংলাদেশ টাইমস: কেমন আছেন?

এস. এম. মারুফ: ভালো আছি। আপনি নিশ্চয়ই ভালো আছেন।

বাংলাদেশ টাইমস: হ্যা, আমিও ভালো আছি। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কিভাবে দেখছেন?

এস. এম. মারুফ: যেহেতু আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন, তাই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ। সকল অনিশ্চয়তাকে পিছনে ফেলে সব দলই এখন নির্বাচনমুখী, যা গনতন্ত্রের জন্য খুবই প্রয়োজন। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলে গনতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

বাংলাদেশ টাইমস: রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

এস. এম. মারুফ: নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ- এই তিন অবস্থার মধ্যে সামঞ্জস্য/মিল ও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। একই সাথে সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবায়নযোগ্য হওয়া উচিত। এসব দিক বিবেচনায় আমি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারকে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার থেকে এগিয়ে রাখব। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর  প্রতি প্রতিশ্রুতি।  

বাংলাদেশ টাইমস: ইশতেহারে আর কি কি বিষয় থাকা উচিত ছিল বলে আপনি মনে করেন?

এস. এম. মারুফ: কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধি করে বেকার সমস্যা সমাধানের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে আসতে পারত। পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার উপায় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকা উচিত ছিল। যেহেতু প্রবীণ মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, তাই তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি আরো সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিত ছিল।     

বাংলাদেশ টাইমস: বিরোধী দলগুলো প্রতিনিয়ত হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের অভিযোগ করে যাচ্ছে। তারা বলছে দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই, সেটাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

এস. এম. মারুফ: দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই এ কথাটি একেবারেই ভুল। সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনমুখী, সবাই নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে । হামলা-মামলা নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধী দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আছে। তবে অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করা উচিত নয়।

বাংলাদেশ টাইমস: আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ করছে বিরোধী দলগুলো। সেটাকে কিভাবে দেখছেন?

এস. এম. মারুফ: বিভিন্ন অভিযোগ করে নির্বাচন কমিশন ও সরকারি দলকে চাপে রাখা বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনী কৌশল। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে নির্বাচন কমিশনের উচিত খতিয়ে দেখা।  

বাংলাদেশ টাইমস: সুষ্ঠু নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

এস. এম. মারুফ: রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করা উচিত।

বাংলাদেশ টাইমস: স্বাধীনতার এতো বছর পরেও আমাদের দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। এর পিছনে কি কারণ আছে বলে মনে করেন?

এস. এম. মারুফ: সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ কখনও গড়ে উঠবে না। সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে না উঠার পিছনে প্রধান কারণ হচ্ছে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম বৈরী মনোভাব। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শিক পার্থক্য এই বৈরী মনোভাবকে আরও উস্কে দিচ্ছে । সুষ্ঠু রাজনৈতিক ও নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির করার জন্য দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে পুরোপুরি বাদ দিতে হবে।

বাংলাদেশ টাইমস: দেশে বর্তমানে যে উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রয়েছে, সরকার পরিবর্তন হলে তার উপর  কি ধরণের প্রভাব পড়তে পারে?

এস. এম. মারুফ: সরকার পরিবর্তন হলে দেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হতে পারে। অসমাপ্ত উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য বর্তমান সরকারের আবারও ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ টাইমস: বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ড. কামাল হোসেনের অবস্থান নিয়ে কি বলবেন?

এস. এম. মারুফ: ড. কামাল হোসেন ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. কামাল হোসেনকে এদেশের জনগন আওয়ামী ঘরনার রাজনীতিবিদ হিসেবেই জানত। বর্তমানে তিনি এমন দলের সাথে রাজনৈতিক জোট গড়েছেন যেখানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী রয়েছে। ড. কামাল হোসেন তাদের সাথে যোগ না দিয়ে তিনি যদি আওয়ামী লীগের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতেন তাহলে দেশের জনগণ অনেক খুশি হত এবং দেশের রাজনীতির জন্যও মঙ্গলজনক হত। 

বাংলাদেশ টাইমস: ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধপরাধীদের বিচার চলমান থাকবে, ঐক্যফ্রন্টের এই কথার সাথে আপনি কি একমত?

এস. এম. মারুফ: এই বিষয়ে একমত হওয়া কঠিন। কারণ যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে বিষয়টি অস্বাভাবিক।

বাংলাদেশ টাইমস: ক্ষমতায় গেলে উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং কোনো ধরণের প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে না, বিএনপি’র এই প্রতিশ্রুতি কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন?

এস. এম. মারুফ: এটি একটি নির্বাচনী কৌশল। বিএনপি‘র পক্ষে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।

বাংলাদেশ টাইমস: জামায়াত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, সেটাকে কিভাবে দেখছেন?

এস. এম. মারুফ: এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, দেশের ভেতরে এবং বাইরে অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও বিএনপি তাদের জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়নি। জামায়াত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করায় বিএনপির জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ যুদ্ধাপরাধ ও জামায়াতের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম অনেক সচেতন। এই ইস্যুতে বিএনপি তরুণদের অনেক ভোট হারাতে পারে।

বাংলাদেশ টাইমস: সুষ্ঠু নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য কি কি পদক্ষেপ প্রয়োজন?

এস. এম. মারুফ: রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতা বাড়াতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক বিষয়সমূহে সব রাজনৈতিক দলকে এক জায়গায় পৌঁছাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ দলের মধ্যে দুর্নীতির বিরূদ্ধে কার্যকর অর্থে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।

বাংলাদেশ টাইমস: বর্তমান রাজনৈতিক ও নির্বাচনী মাঠে কোনে দলকে এগিয়ে রাখবেন?

এস. এম. মারুফ: কিছু যৌক্তিক কারণে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে রাখব। এক. দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সম্মোহনী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব। দুই. পদ্মাসেতু নির্মাণসহ আওয়ামী লীগ সরকার কতৃর্ক গৃহীত দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। তিন. জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বর্তমান সরকারের সফলতা। চার. বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ইতিবাচক পরিবর্তন। পাঁচ. আওয়ামী লীগের কৌশলী নির্বাচনী প্রচারণা। 

বাংলাদেশ টাইমস: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এস. এম. মারুফ: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সাতক্ষীরায় ১ দিনে পানিতে ডুবে কিশোরসহ প্রাণ হারাল ৪ Sep 16, 2025
img
চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরুর আগে সুসংবাদ পেল রিয়াল মাদ্রিদ Sep 16, 2025
img
৩ জেলার ডিসিকে প্রত্যাহার Sep 16, 2025
img
৩ চাকার যানবাহনগুলো সঠিক গবেষণার মাধ্যমে সমাধানের তাগিদ Sep 16, 2025
img
খুলনায় আড়াই মণ হরিণের মাংসসহ আটক ১ Sep 16, 2025
img
ভালুকায় শ্রমিকলীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার Sep 16, 2025
img
বিপিসির অভিযানে মানিকগঞ্জে ৩ ফিলিং স্টেশনের ৮টি ডিসপেন্সিং ইউনিট জব্দ Sep 16, 2025
img
কাপাসিয়ায় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব লিয়ন বহিষ্কার Sep 16, 2025
img
জামালপুরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আটক ৬ Sep 16, 2025
img
আরাকান আর্মি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকায় চোরাচালান বেড়েছে : বিজিবি Sep 16, 2025
img
চাঁদপুরে সরকারি চাল মজুতের দায়ে বিএনপি নেতাকে জরিমানা Sep 16, 2025
উত্তাল ফরিদপুর! থানা ও উপজেলা পরিষদে হামলা, অফিসার্স ক্লাবে আগুন Sep 16, 2025
আমি তুষার বলছি - বাংলাদেশকে এখানেই আসতে হবে Sep 16, 2025
এই যে ভণ্ডামি, প্রতারণা কেন করছেন আপনারা? Sep 16, 2025
তরুণদের সক্রিয়তায় সব সমস্যার সমাধান সম্ভব: প্রধান উপদেষ্টা Sep 16, 2025
অর্থ পাচার রোধে যে কঠোর নীতিতে হাঁটছে সরকার Sep 16, 2025
img
নুরের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে রাজধানীতে মশাল মিছিল Sep 16, 2025
img

ডিআইজি রেজাউল করিম

যারা ফ্যাসিস্ট তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব Sep 16, 2025
img
আর্থিক সুবিধা নেওয়ায় কর কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানকে বরখাস্ত Sep 16, 2025
img
পেলেকে ছাড়িয়ে রেকর্ড দামে বিক্রি হলো মেসির রুকি কার্ড Sep 16, 2025