প্রজেক্ট হিলশা: ভাল-খারাপ যত দিক

স্যোশাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এই রেস্টুরেন্ট নিয়ে নানা রকম নিউজ পড়লাম। ফুড ব্লগার, ফুডি, তরুণ সমাজ থেকে শুরু করে অনেকেই এটি সম্পর্কে নানা রকম রিভিউ দিচ্ছেন। আলোচিত রেস্টুরেন্টটি দেখতে একটি মাছের মতো। আপনি যা মনে করছেন সেটাই, 'প্রজেক্ট হিলসা'। এই রেস্টুরেন্ট নিয়ে যে নিউজগুলো দেখলাম তার সবগুলো নিউজ যে নেগেটিভ, তা নয়। তবে বেশিরভাগই নেগেটিভ।

পজিটিভ নিউজগুলোই আগে বলি। যেমন কেউ কেউ বলেছেন 'ধনীদের জন্যই এটি, গরীবরা কেন যায়'? কেউ কেউ বলেছেন 'দাম রিজনেবল'। সুদূর চট্টগ্রাম থেকেও নাকি কেউ কেউ এখানে খাওয়ার জন্য এসেছেন। এটির পরিবেশ নাকি খুবই ভালো। এই রেস্টুরেন্টের সাথে লা মেরিডিয়ান, রেডিসান ব্লু, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল কিংবা ওয়েস্টিনের তুলনাও করেছেন কেউ কেউ।

এবার কয়েকটি নেগেটিভ নিউজ দেখা যাক। খাবারের দাম অতিরিক্ত, মশা ও মাছির উপদ্রব মাত্রাতিরিক্ত, ম্যানেজমেন্ট লেভেল যাচ্ছেতাই, আড়াই কেজির ইলিশের কথা বলে মেপে দেখা গেলো এক কেজির একটু বেশি, ইলিশের লেজের ভর্তায় শুঁটকি মাছের গন্ধ, খিচুড়ি বা পোলাও অর্ডার করার পরও ভাত দেয়া হয়েছে, মানে ওগুলো শেষ কিন্তু জানানোর প্রয়োজনবোধ করেনি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এবার চলুন আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে ক্ষুদ্র বিশ্লেষণে দেখি, আসলে এই প্রজেক্টটি এখন পর্যন্ত কতটুকু সফল। প্রথমে বলি এর বাহিরের যেই আকৃতি দেখা যায়, নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসার দাবিদার। তারপর এর ভেতরটাও মোটামুটি সুন্দর। অর্থাৎ একটু ভালো মনোরম পরিবেশ বলা যায়। তাছাড়া এটি কোনও স্টার মানের (লা মেরিডিয়ান বা ইন্টারকন্টিনেন্টালে যে ধরনের রেস্টুরেন্ট থাকে) রেস্টুরেন্ট কিনা, এই ধরনের কোনও তথ্য আমি কোথাও খুঁজে পাইনি (কেউ পেয়ে থাকলে জানাবেন)। তাছাড়া এর আসবাবপত্রগুলো কিন্তু খুবই সাধারণ মানের। এই রেস্টুরেন্টে যারা ওয়েটার, তারা কতোটা প্রফেশনাল? তাদের ভাষা, জ্ঞান, আচার-আচরণ কি স্টার মানের রেস্টুরেন্টের সাথে কোনও ভাবে তুলনীয়? একটি স্টার মানের রেস্টুরেন্টের যেসব সুবিধা থাকে, সেগুলোর কি কি আছে এখানে?

তারপর আসি এটি নাকি ধনীদের জন্য। ভাই একজনের খাবারের খরচ মোটামুটি এক হাজার টাকা। এর জন্য ধনী হতে হবে? প্রশ্ন রেখে গেলাম। ধনীরা কি এরকম মশা, মাছির সাথে সহবস্থান নিয়ে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন? এক হাজার টাকায় খেয়েই ধনী, তাহলে বোঝাই যাচ্ছে ধনীদের মধ্যেও শ্রেণীবিন্যাস আছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই রেস্টুরেন্টে খাবারের যেই দাম রাখা হচ্ছে, সেটা খাবারের মান ও সার্ভিসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা। যেমন এক টুকরো ভাজা বেগুনের দাম ৫০ টাকা, সাথে সার্ভিস চার্জ ১০%, মানে ৫ টাকা। তাহলে হলো ৫৫ টাকা। তারপর ভ্যাট ১৫%, তার মানে আরও ৮.২৫ টাকা। তাহলে সর্বমোট ৬৩.২৫ টাকা। একটি বেগুন দিয়ে ৫ টুকরো অনায়াসেই হয়ে যাবে। চিন্তা করে দেখুন ১ কেজি বেগুন মানে ৪ টি বেগুন, যা দিয়ে হচ্ছে ২০ টুকরো বেগুন (ভাজা)। অর্থাৎ ১ কেজি বেগুনের মূল্য ২০*৬৩.২৫ = ১২৬৫ টাকা। অথচ বর্তমানে বেগুনের কেজি ৫০-৬০ টাকার মধ্যে। আচ্ছা তাহলে কি ধরে নিবো এগুলো 'বিশেষ বেগুন' এবং 'অরিজিনাল দেশি ষাঁড়ের (গাভীর নয়) দুধের' তৈরি একদম 'খাঁটি গাওয়া ঘি' দিয়ে ভাজা? আমি অন্তত এতোটুকু বলতে পারি, 'হয় সয়াবিন তেল না হয় পাম অয়েল জাতীয় তেল' দিয়েই ভাজা হয়েছে। ধনীরা সয়াবিন তেল বা পাম অয়েল খায়? যারা খায় তারা নিশ্চয়ই শ্রেণীবিন্যাসের অন্তর্ভুক্ত ধনী কিংবা নতুন ধনী। তাই হয়তো তাদের রাজকীয় অভ্যাসটা বদলাতে পারেননি। আর রেস্টুরেন্টটির সার্ভিসের কথাটিতো আগেই উল্লেখ করেছি।

যাইহোক, অনেক কথা বলে শেষ হবে না অনেক কিছুই। তারপরও কিছুতো হবে। আর নাহলেই ক্ষতি কী? মননশীল বলেতো কিছু আছে। প্রত্যেকটি জিনিস যেগুলো মানুষের তৈরি, স্বাভাবিক ভাবেই সেগুলোর পজিটিভ এবং নেগেটিভ দিক থাকবে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে এখন পর্যন্ত এই প্রজেক্টটির সফল হওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ এটির বিজ্ঞাপন যেভাবে হয়েছে, একদম ফ্রী অব কস্ট্ বলা যায়। যদিও সেগুলোর বেশির ভাগই নেগেটিভ কিন্তু অপ্রত্যাশিত নয়।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি), মিরপুর, ঢাকা।

Share this news on: