শিক্ষায় বাজেট বাড়াতে হবে, মর্যাদা দিতে হবে শিক্ষকদের: বাউবি উপাচার্য

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য ড. এ. বি. এম. ওবায়দুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষকদের অবস্থার উন্নতি না হলে জাতি বাঁচবে না। আর ভালো ও মেধাবীদের শিক্ষকতায় আনতে হলে তাদের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।


তার মতে, শিক্ষাকে টিকিয়ে রাখতে হলে আগে শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়ন করতে হবে। কারণ শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, তবে শিক্ষকই সেই মেরুদণ্ডের ভিত্তি। বর্তমান বাস্তবতায় দেশের শিক্ষকরা সীমিত বেতন ও সুবিধায় জীবিকা চালিয়ে যাচ্ছেন— যা মানসম্মত শিক্ষা ও জাতি গঠনের পথে বড় অন্তরায়। তাই শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো এবং শিক্ষকদের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা সময়ের সবচেয়ে জরুরি কাজ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শিক্ষক দিবস কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি পুরো পৃথিবীর জন্যই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। কারণ শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আর সেই শিক্ষার মূল উৎস হচ্ছেন শিক্ষক। আমরা যদি শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না দিই, তাহলে তাদের কাছ থেকে উচ্চমানের শিক্ষা আশা করা যায় না।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা পোস্টকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষক দিবস কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি পুরো পৃথিবীর জন্যই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। কারণ শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আর সেই শিক্ষার মূল উৎস হচ্ছেন শিক্ষক। আমরা যদি শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না দিই, তাহলে তাদের কাছ থেকে উচ্চমানের শিক্ষা আশা করা যায় না।’

বাউবি উপাচার্য বলেন, একজন শিক্ষককে যদি আমরা মর্যাদার আসনে না রাখি, তাহলে তিনি তার পেশায় প্রাণ দিতে পারবেন না। শিক্ষকদের যত বেশি সম্মান ও সহায়তা দেওয়া হবে, তারা তত বেশি নিষ্ঠা নিয়ে জাতি গঠনে কাজ করবেন।

‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের অবস্থান এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি’— উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষকরা চরম আর্থিক সংকটে দিন কাটান। অনেকে প্রাথমিক স্তরে মাত্র ৯-১২ হাজার টাকা বেতন পান। সংসারের টানাপোড়েনে তারা পাঠদানের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। এভাবে ভালো জাতি গড়া সম্ভব নয়।’

যার পেটে ভাত নেই, তার কাছ থেকে জ্ঞান আশা করা যায় না। আমরা শিক্ষকদের এমন অবস্থায় রেখেছি, যেখানে তারা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতেও পারেন না। এতে শিক্ষার মান নষ্ট হচ্ছে।
অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষকরা যে বেতন পান, তা একেবারেই অপ্রতুল। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো অর্থাৎ ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান— সবখানেই শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল ও মর্যাদা নির্ধারিত। অথচ আমরা শিক্ষায় জিডিপির মাত্র ২ শতাংশেরও কম ব্যয় করি। জাতিসংঘের সুপারিশ অনুযায়ী এই খাতে অন্তত ৬ শতাংশ ব্যয় করা উচিত।’

‘যার পেটে ভাত নেই, তার কাছ থেকে জ্ঞান আশা করা যায় না। আমরা শিক্ষকদের এমন অবস্থায় রেখেছি, যেখানে তারা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতেও পারেন না। এতে শিক্ষার মান নষ্ট হচ্ছে।’

উপাচার্য বলেন, গ্রামীণ অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা ভয়াবহ কম। একটি স্কুলে ছয়জন শিক্ষক থাকার কথা, সেখানে দুজন শিক্ষক দিয়ে পুরো স্কুল চালানো হচ্ছে। আমি নিজে সরকারি হাইস্কুলে গিয়ে দেখেছি, ১৮ জনের পোস্টে মাত্র ছয়জন শিক্ষক আছেন। এ অবস্থায় মানসম্মত শিক্ষা কীভাবে সম্ভব?

তার মতে, সরকার ও নীতিনির্ধারকদের কাছে শিক্ষা এখনও অবহেলিত খাত। যারা নীতিনির্ধারণ করেন, তাঁরা শিক্ষা খাতকে এখনও অগ্রাধিকার হিসেবে দেখেন না। অথচ জাতি গঠনের মূল উপকরণ এই শিক্ষা।

জাতীয়করণ দাবির পক্ষে নিজ অবস্থান ব্যক্ত করে অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি একেবারেই যৌক্তিক। জাতীয়করণ মানে শুধু স্থিতিশীলতা নয়, তাদের বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা। শিক্ষকরা যেন অন্তত অবসরের পরও সুরক্ষিত জীবন পান, সেই ব্যবস্থাটা করতে হবে।’

শিক্ষক সমাজের কল্যাণে জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা আজও বাংলাদেশের শিক্ষার অঙ্গনে আলোকবর্তিকা হয়ে আছে।

অবসরের (রিটায়ারমেন্ট) পর একজন শিক্ষক হাতে কত পান? খুব অল্প। আগে তো কিছুই পেতেন না। এখন কিছুটা আছে, তবে তা যথেষ্ট নয়। শিক্ষকদের জীবনমানের উন্নয়ন না ঘটলে শিক্ষার মানও উন্নত হবে না।’

নিজের ছাত্রজীবনের কথা স্মরণ করে বাউবি উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন নয়, তবে স্কুলজীবনে কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন, যারা আমার জীবনে দাগ কেটেছেন। এখনও গ্রামে গেলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আজও আমার কাছে আদর্শ শিক্ষক। তাদের কাছ থেকেই শিখেছি নীতি, নৈতিকতা, ভালোবাসা এবং কীভাবে ভেতর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়।’

শিক্ষক দিবসে দেশের সব শিক্ষকের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘আজ শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার সাহস হয় না, কারণ আমরা তাদের এতটাই অবহেলা করেছি...। তবে, আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব যেন শিক্ষা ও শিক্ষকদের দিকে নতুন করে নজর দেওয়া হয়।’

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকদের মর্যাদা ও সুবিধা বৃদ্ধির ইতিহাসে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভূমিকা অনন্য। তিনিই প্রথম শিক্ষক সমাজের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার সময়েই শিক্ষকরা পেশাগত স্থিতি পান। তাদের সম্মান বৃদ্ধির নীতিগত ভিত্তি দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সেই ধারাবাহিকতা আরও দৃঢ় ও বিস্তৃত হয়। তার সরকার শিক্ষকদের জাতীয়করণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে, যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনে। সেই সিদ্ধান্ত শুধু শিক্ষকদের জীবনে স্থিতিশীলতা এনে দেয়নি, বরং শিক্ষার মানোন্নয়ন ও প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

‘শিক্ষক সমাজের কল্যাণে জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা আজও বাংলাদেশের শিক্ষার অঙ্গনে আলোকবর্তিকা হয়ে আছে।’

উপাচার্য আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, “আগামীর সরকার শিক্ষকদের মর্যাদা ও সুবিধা বাড়াবে। একই সঙ্গে ভালো ফলধারী মেধাবী শিক্ষার্থীরাও যেন শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়, সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কারণ, ‘শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে, শিক্ষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে’।”


আইকে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের নগরাঞ্চলের টেকসই উন্নয়নে বদ্ধপরিকর: প্রধান উপদেষ্টা Oct 05, 2025
img
ওটিটি পেরিয়ে এবার বড় পর্দায় আসছে মির্জাপুর Oct 05, 2025
img
ব্রাজিলের বেলেমে নভেম্বরে আয়োজিত হচ্ছে ৩০তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন Oct 05, 2025
img
বিসিবির নির্বাচন পৃথিবীর সেরা ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন: আমিনুল ইসলাম বুলবুল Oct 05, 2025
img
উপদেষ্টাদের দায়িত্ব ছাড়ার আগে তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা উচিত : মাসুদ কামাল Oct 05, 2025
img
অ্যাঙ্কেলের ইনজুরিতে ভুগছেন এমবাপ্পে Oct 05, 2025
img
রংপুরে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব, ৮০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত Oct 05, 2025
img
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসহ আরও ৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Oct 05, 2025
img
কুমিল্লার হোমনায় বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু Oct 05, 2025
img
প্রীতি ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনা পেল দুঃসংবাদ Oct 05, 2025
img
ডেঙ্গুতে একদিনে ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৪২ Oct 05, 2025
img
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ঐকমত্য না হলে আরেকটি অভ্যুত্থান অনিবার্য : মঞ্জু Oct 05, 2025
img
ওএসডিতে থাকা ৬৯ উপসচিবকে পদায়ন Oct 05, 2025
img
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমন গ্রেপ্তার Oct 05, 2025
img
জীবনটা আসলে আয়নার মতো, আয়নায় আমি ভেংচি কাটলে আয়নাও ভেংচি কাটবে : জাহিদ হাসান Oct 05, 2025
img
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় এনসিপি Oct 05, 2025
ভালো বন্ধু যেভাবে নির্বাচন করবেন | ইসলামিক টিপস Oct 05, 2025
img
সচিবালয় দিয়েই একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধের যাত্রা শুরু: পরিবেশ উপদেষ্টা Oct 05, 2025
৫০ টাকায় থাকা যায় যে হোটেলে! Oct 05, 2025
"হাসিনা শুধু মেট্রোরেল আর উড়াল সেতুর গালগপ্পো শুনিয়েছে" Oct 05, 2025