৪৪ মিটার দূর থেকে পিএসজির মাঠে প্যারিস এফসি লিখলো নতুন গল্প

প্যারিসের ফুটবলে চলছে এক নিঃশব্দ বিপ্লব। আর সেটি ঘটছে শহরের ফুটবলের তীর্থস্থান প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর ঘরের মাঠ পার্ক দেস প্রিন্সেসের মাত্র ৪৪ মিটার দূরে! পিএসজির স্টেডিয়ামের গায়ে লেখা সেই বিখ্যাত স্লোগান, ‘প্যারিস ইজ ম্যাজিক’, বহু বছর ধরে দেশের রাজধানীর ফুটবলে একচেটিয়া রাজত্বে ক্লাবের প্রতীক। প্যারিস মানেই পিএসজি। কিন্তু এই সমীকরণ আর কতদিন টিকে থাকবে?

পিএসজির মাত্র ৪৪ মিটার দূরের মাঠ ‘স্টেদ জিন বুইনে’ নবাগত প্যারিস এফসি বুনছে অন্য গল্প।

সেখানেই তাদের নতুন ঘরে শুক্রবার ২-০ গোলে লরিয়েন্তেকে হারিয়েছে দলটি। লিগ আঁর নবাগত এই ক্লাব এখন পয়েন্ট টেবিলের অষ্টম স্থানে, আর শীর্ষে থাকা তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী পিএসজির থেকে পিছিয়ে মাত্র ছয় পয়েন্টে। যদিও এখনই পিএসজিকে চ্যালেঞ্জ করার বাস্তবতা নেই, তবে রাজধানীর ফুটবলে যে এক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের হাওয়া বইছে—তা আর অস্বীকার করা যায় না।

মজার বিষয়, আজকের পিএসজি ও প্যারিস এফসি কিন্তু একই ক্লাব ছিল।

ইতিহাস বলছে, ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘স্তেদ সেইন্ট জার্মেইর’ সঙ্গে ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘প্যারিস এফসি’ ১৯৭০ সালে একীভূত হয়ে গঠন করে আজকের দিনের ফরাসি জায়ান্ট ‘প্যারিস সেইন্ট জার্মেই’।

তবে শেষ পর্যন্ত সে চুক্তি মাত্র ২ বছর পর ভেস্তে গেলে ১৯৭২ সাল থেকে আলাদা ক্লাব হিসেবে নিজেদের পথ চলা শুরু করে প্যারিস এফসি। যদিও তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বীর মতো নাম কামাতে পারেনি কখনই।

তবে সম্প্রতি এই রূপান্তরের নেপথ্যে রয়েছেন আরনো পরিবার।

লুই ভিতো, ডিওর, টিফানির মতো বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল ফ্যাশন জগতের কর্ণধার ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধনী পরিবারটি গত বছরের শেষে ক্লাবটির মালিকানা কিনে নেয়। তবে তাদের কৌশল ধীর ও স্থিতিশীল।

লিগ আঁতে টিকে থাকা এবং ধীরে ধীরে ভিত্তি মজবুত করাই এখন তাদের লক্ষ্য।

প্যারিস এফসির প্রেসিডেন্ট পিয়ের ফেরাচ্চি বলেছেন, ‘আগামী কয়েক বছর আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। আমরা লিগ আঁতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তাই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দেরই দলে টানছি।

দীর্ঘমেয়াদে অবশ্য তাদের পরিকল্পনা আরও বড়। বার্সেলোনার একাডেমি মডেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, ফ্রান্সের সমৃদ্ধ যুব প্রতিভাদের ঘিরে নিজেদের একাডেমি গড়ে তুলতে চায় প্যারিস এফসি। সেই লক্ষ্যে বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মার্কো নেপ্পেকে নতুন ক্রীড়া পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ফেরাচ্চি পরিবারের প্রভাব ধীরে ধীরে কমছে। প্রেসিডেন্ট পিয়ের ফেরাচ্চি ২০২৭ সালে দায়িত্ব ছাড়তে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার আগে সিইও হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আতোয়ান আরনোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জঁ-মার্ক গালো। স্পষ্টতই এখন ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি আরনো পরিবারের হাতে।

মাঠে অবশ্য এখনো দলের মূল তারকারাই জ্বলে উঠছেন। শুক্রবার রাতে ২-০ গোলের জয়ে গোল করেছেন ফিলিপ ক্রাসো ও ইলান কেব্বাল। ছোট গড়নের জন্য একসময় যিনি পেশাদার ফুটবল খেলতে পারবেন না বলা হয়েছিল, সেই কেব্বাল এখন লিগ আঁর সেরা মিডফিল্ডারদের একজন।

অন্যদিকে, ক্রাসোও দুর্দান্ত ফর্মে। নতুন স্ট্রাইকার গ্যুবেলস আসার পরও তিনি নিজের জায়গা ফিরে পেয়েছেন এবং ধারাবাহিকভাবে গোল করছেন। মাঝমাঠে ম্যাকসিম লোপেজের পারফরম্যান্সও নজর কাড়ছে। গোলপোস্টে তরুণ ওবেদ নকামবাদিও দুর্দান্ত, যার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী পিএসজির সাবেক অভিজ্ঞ গোলরক্ষক কেভিন ট্র্যাপকে বসে থাকতে হচ্ছে বেঞ্চে।

এদিকে নতুন সাইনিংয়ের মধ্যেও সবচেয়ে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছেন মজেস সাইমন ও হামারি ট্রাওরে। অভিজ্ঞতা ও স্থিতিশীলতা—এই দুইয়ের মিশেলে প্যারিস এফসির দলটি এখন লিগ আঁতে টিকে থাকার মতো শক্তিশালী রূপ নিচ্ছে।

আর তাদের এমন পরিকল্পনার পেছনে হাত আছে সাবেক লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপেরও! কারণ ক্লাবের ছোট অঙ্কের শেয়ারের মালিক এখন রেড বুল। আর কোম্পানিটির গ্লোবাল সকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই কিংবদন্তি।

যদিও এখনই পিএসজির রাজত্ব নড়বড়ে হচ্ছে না, তবে গেলো শুক্রবার ‘স্টেদ জিন বুইনে’ দর্শক পূর্ণ দেখে মনে হয়েছে—প্যারিসে আর একক রাজত্ব নেই। ‘প্যারিস ইজ ম্যাজিক’ বা ‘হেয়ার ইজ প্যারিস’-এর মতো পিএসজির চিরচেনা স্লোগানে ভাগ বসাতে এসেছে নবাগতরা। 

আইকে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সামছুর রহমানের বিদেশ যাত্রায় বাধা Oct 07, 2025
img
অতীত প্রেমের গুঞ্জন আবারও আলোচনায় Oct 07, 2025
img
হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার মাস্টারমাইন্ড নিয়ে মন্তব্য রনির Oct 07, 2025
img
আ. লীগের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন হাদী Oct 07, 2025
img
জনের সঙ্গে ফের যৌথ প্রয়াস অরুণের Oct 07, 2025
img
আমের পর এবার কমলালেবু কাণ্ডে জড়ালেন অক্ষয় কুমার Oct 07, 2025
img
আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগে ছাত্রদল-শিবিরের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি Oct 07, 2025
img
চার দিনেই কেজিএফকে ছাড়িয়ে গেল কান্তারা এক Oct 07, 2025
img
বড়দিনে আসছে না ডাকাত, অপেক্ষায় ভক্তরা Oct 07, 2025
img
মালদ্বীপে বাংলাদেশিদের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ! Oct 07, 2025
img
কেউ যদি বাহুবলে কথা বলে তার পরিণতি হাসিনার মতোই হবে : সালাহউদ্দিন Oct 07, 2025
img

চাকসু নির্বাচন

ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে সরে দাঁড়ালেন ২ প্রার্থী Oct 07, 2025
img
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের নতুন সূচি প্রকাশ করল বিসিবি Oct 07, 2025
img
নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে : মির্জা ফখরুল Oct 07, 2025
img
ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে তীব্র ব্যঙ্গ থুনবার্গের Oct 07, 2025
img
ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭১৫ Oct 07, 2025
img
ডাকসুর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছাত্রদলের হামিম Oct 07, 2025
img
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার নেদারল্যান্ডসের Oct 07, 2025
img
বদলি ও পদায়ন নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা Oct 07, 2025
img
দেশে তিন পরাশক্তির প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ Oct 07, 2025