অ্যাজমা রোগীদের অবশ্যই করণীয়

হাঁপানি বা অ্যাজমা হলো একটি প্রধান অ্যালার্জিক শ্বাস-প্রশ্বাসসংক্রান্ত রোগ। অ্যাজমায় আক্রান্ত হলে রোগীর ব্রঙ্কিয়াল টিউব ফেঁপে ওঠে। ফলে শ্বাসনালির বাতাস চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, তার মানে, ফুসফুসে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। এতে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তার কর্মশক্তিও কমে যায়।

আপনার যদি অ্যাজমা থেকে থাকে, তাহলে অ্যাজমার আক্রমণ থেকে বাঁচতে এর ট্রিগারগুলো সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। ট্রিগার হলো সেসব বিষয়, যা হঠাৎ করে আপনার অ্যাজমা বাড়িয়ে তোলে। অ্যাজমা ট্রিগার অ্যাজমার উপসর্গগুলি বাড়িয়ে দেয়। ফলে শ্বাসকষ্ট, কফ, সর্দি প্রভৃতি দেখা দেয়।

যেহেতু অ্যাজমা রোগী কখনোই পুরোপুরি সুস্থ হয় না, তাই আপনাকে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং অ্যাজমা অ্যাটাক থেকে বাঁচতে হবে।

চলুন অ্যাজমা রোগীদের করণীয় সম্পর্কে জেনে নিই-

অ্যাজমা ট্রিগার চিহ্নিত করুন
ব্যক্তি ভেদে অ্যাজমার ট্রিগার ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে কিছু সাধারণ অ্যাজমা ট্রিগার হলো- বায়ু দূষণ, অ্যালার্জি, ঠাণ্ডা বাতাস, ঠাণ্ডা বা ফ্লু ভাইরাস, সাইনোসাইটিস, ধোঁয়া ও সুগন্ধি। আপনাকে আপনার অ্যাজমা ট্রিগার সম্পর্কে জানতে হবে। যেসব কারণ আপনাকে অ্যাজমা অ্যাটাক করে, সেগুলিকে পরিহার করতে হবে।

আপনার নিজস্ব অ্যাজমা ডাইরি গড়ে তুলুন। সেখানে কয়েক সপ্তাহ ধরে আপনার উপসর্গের ধরণ লিখতে থাকুন। যখন আপনার অ্যাজমা অ্যাটাক হবে, তখন তার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। যে এক বা একাধিক ট্রিগারের কারণে এটি হচ্ছে তা ডাইরিতে লিপিবদ্ধ করুন। পরবর্তীকালে সেসব অ্যাজমা ট্রিগার এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন।

অ্যালার্জি হয় এমন কিছু থেকে দূরে থাকুন
যদি আপনার অ্যালার্জি ও অ্যাজমা থাকে, তাহলে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী সব ধরনের জিনিস এড়িয়ে চলুন। কারণ, এসব জিনিসের সান্নিধ্যের ফলে শ্বাসনালীতে প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। ফলে অ্যাজমা অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ধোঁয়া পরিহার করুন
ধোঁয়ার সঙ্গে অ্যাজমার সম্পর্ক খুবই বাজে। সেটা সিগারেটের ধোঁয়াই হোক বা মোমবাতির, সব ধরনের ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুন। আপনার ঘরে বা গাড়িতে ধূমপান করতে দেবেন না এবং যেসব স্থানে ধূমপান করা হয়, সেসব স্থান এড়িয়ে চলুন। কারণ, ধোঁয়া সব সময় অ্যাজমাকে আরও বাজে পরিস্থিতিতে নিয়ে যায়।

ঠাণ্ডা থেকে বেঁচে থাকুন
সুস্থ থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই ঠাণ্ডা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। যাদের ঠাণ্ডা বা ফ্লু রয়েছে তাদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। এমনকি, যদি এমন কারও ব্যবহৃত জিনিস আপনি ধরে থাকেন, তাহলে কাজ শেষে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।

ফ্লুয়ের টিকা গ্রহণ করুন
ফ্লুয়ের হাত থেকে বাঁচতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিবছর প্রয়োজনীয় টিকা গ্রহণ করুন। কারণ ফ্লু আক্রান্ত হলে অ্যাজমা মারাত্মক হয়ে উঠবে এবং সপ্তাহ বা মাসের জন্য আপনাকে ভুগতে হবে।

অ্যালার্জির টিকা গ্রহণ করুন
ডাক্তার যদি বলে আপনার অ্যালার্জি আছে, তাহলে অ্যালার্জির টিকা গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ অ্যালার্জি আক্রান্ত হলে অ্যাজমা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

অ্যালার্জির টিকার ক্ষেত্রে ডাক্তার নিয়মিত আপনার চামড়ার নিচে স্বল্প মাত্রার অ্যালার্জি উৎপাদক প্রবেশ করিয়ে দিতে থাকবেন। এর ফলে সময়ের সঙ্গে আপনার দেহে ওই অ্যালার্জিগুলো সয়ে যাবে। ফলে অ্যালার্জির সংস্পর্শে এলেও খুব একটা ভুগতে হবে না।

ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অ্যাজমার ওষুধ গ্রহণ করুন
দীর্ঘ মেয়াদের অ্যাজমার ওষুধগুলি এর উপসর্গ ও আক্রমণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে নির্মিত। আপনাকে প্রতিদিন তা গ্রহণ করতে হবে। যদি কোনো উপসর্গ দেখা না দেয় তবুও ওষুধ বাদ দেয়া যাবে না। এগুলি আপনার শ্বাসনালীর প্রদাহ কম করে। ফলে অ্যাজমা আক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়। তবে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

পিক ফ্লো মিটার ব্যবহার করুন
এই মিটারটির মাধ্যমে ঘরে বসেই আপনার ফুসফুসের কার্যকারিতা ও সক্ষমতা নির্ণয় করা সম্ভব। আপনার ফুসফুসে কতটা বাতাস ঢুকছে তা নির্ণয় করে এই মিটারটি। অ্যাজমা অ্যাটাকের সময় শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়। এই মিটারটি ব্যবহার করলে আপনি কয়েক ঘণ্টা আগেই জানতে পারবেন যে আপনার ফুসফুসে বাতাস প্রবাহ কমে গেছে এবং অ্যাজমা অ্যাটাক হতে চলেছে। ফলে আপনি আপনাকে দেয়া ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক ওষুধ সেবন করতে পারবেন। এতে করে অ্যাজমা অ্যাটাক শুরু হবার আগেই তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সংবর্ধনা মঞ্চে তারেক রহমান Dec 25, 2025
img
রাব্বুল আলামিনের দোয়ায় মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছি : তারেক রহমান Dec 25, 2025
img
ইউক্রেনের পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা দখলের দাবি রাশিয়ার Dec 25, 2025
img
নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান : তারেক রহমান Dec 25, 2025
img
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে রাজনৈতিক শূন্যতা কাটবে : প্রেস সচিব Dec 25, 2025
img
কালিয়াকৈরে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১২ Dec 25, 2025
img
গণ অধিকার পরিষদ নেতাদের পদত্যাগ Dec 25, 2025
img
গণসংবর্ধনাস্থলের খুব কাছাকাছি তারেক রহমান Dec 25, 2025
img
আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সে মাঠে বসে ছেলের জয় দেখলেন জিদান Dec 25, 2025
img
হাদি হত্যাকাণ্ড : ফয়সালের স্ত্রীসহ আদালতে ৩ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি Dec 25, 2025
img
ছুটিতে মদ্যপান দোষের নয়; আমি নিজেও একই কাজ করেছি: মাইকেল ভন Dec 25, 2025
img
তার মনের নেক আশাগুলো আল্লাহ পূর্ণ করুন : কনকচাঁপা Dec 25, 2025
img
বড়দিনে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা বিনিময় Dec 25, 2025
img
হঠাৎ রেগে গেলেন সুজন, থাকতে চান না নোয়াখালীর কোচের দায়িত্বে Dec 25, 2025
img
২৫ ডিসেম্বরে তারেক রহমানের দেশে ফেরার কারণ জানালো বিএনপি Dec 25, 2025
img
আত্মগোপনে থাকা নায়ক রিয়াজের মৃত্যুর গুঞ্জন, মুখ খুললেন স্ত্রী Dec 25, 2025
img
ঢাকা-১৫ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র নিলেন জামায়াতের আমির Dec 25, 2025
img
তারেক রহমানের সঙ্গে মান্নার পুরোনো ছবি হঠাৎ আলোচনায় Dec 25, 2025
img
সাইবেরিয়ান বিড়াল জেবু, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খাপ খাওয়া ও যত্ন Dec 25, 2025
তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঢাকায় পৌঁছেছে পিরোজপুরের ৩০ হাজার নেতাকর্মী Dec 25, 2025