এশিয়া কাপে ব্যর্থতার পর দ্বিপাক্ষিক সিরিজে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। যেখানে টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানদের ধবলধোলাই করলেও, ওয়ানডেতে উল্টো চিত্র দেখেছে টাইগাররা। বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাতে দেশে ফিরে বেশ বাজে অভিজ্ঞতাই হয়েছে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় দর্শকদের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েন কয়েকজন ক্রিকেটার।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে বের হওয়ার সময় ক্রিকেটারদের কেউ শুনেছেন দুয়ো, কেউ–বা পরিবারের সামনে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। নাঈম শেখ-তাওহীদ হৃদয়দের দেখে দর্শকরা যেন মেজাজ ঠিক রাখতে পারেননি। তাদের গাড়ির পেছনে দর্শকরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় কিছু লোক ওপেনার নাঈম শেখের গাড়ির খুব কাছে গিয়ে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে দুয়ো দিচ্ছেন, গালাগাল করছেন। একই দৃশ্য দেখা গেছে তাসকিন আহমেদ বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় তার গাড়ির আশপাশেও। এসব ভিডিওতে ক্রিকেটারদের উদ্দেশে করা গালাগালও স্পষ্ট শোনা গেছে।
বিসিবির একজন দায়িত্বশীল পরিচালক জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে অসদাচরণ করা ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ দেখে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া এক ফেসবুক পোস্টে মিরপুরে শনিবার থেকে শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের খেলা দেখতে গেলে দর্শকদের ‘শায়েস্তা’ করার হুমকিদাতাকেও খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির ওই পরিচালক দেশের প্রথম সারির একটি পত্রিকাকে বলেছেন, ‘দুটি বিষয়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর নজরে আনা হয়েছে। তারা এই দুই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। সরকার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।’
এশিয়া কাপে সুপার ফোর থেকে বিদায়ের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতেই আফগানিস্তানকে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজে ৩–০তে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তিন ম্যাচের ওয়ানডে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ উল্টো ধবলধোলাই হয়েছে। বিমানবন্দরে ক্রিকেটারদের প্রতি সে কারণেই ক্ষোভ জানিয়েছেন কিছু লোক। তবে তাদের ক্ষোভের প্রকাশ ছিল আক্রমণাত্মক।
বাংলাদেশ দল খারাপ খেলায় ক্ষোভ জানিয়ে দেওয়া এক ব্যক্তির ফেসবুক পোস্টের ভাষাও একই রকম আক্রমণাত্মক। তার বাসা মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের খুব কাছে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘মিরপুরের কিছু ভাই ব্রাদার মিলে একটা টিম গঠন করতেসি, যারা এই অবস্থায়ও মাঠে এই দলের খেলা দেখতে আসবেন, তাদের শায়েস্তা করার জন্য।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রিয় দলের খেলা দেখতে এসে কেউ বেধড়ক মার খেলে বা highly Injured হলে মিরপুরবাসীকে দায় দিতে পারবেন না।’
এ ধরনের ফেসবুক পোস্টকে বাংলাদেশ দলের দর্শক–সমর্থক এবং ক্রিকেটারদের জন্যও নিরাপত্তার হুমকি মনে করেন বিসিবির ওই পরিচালক। তিনি ওই পত্রিকাকে আরও বলেন, ‘খেলায় খারাপ ফল হতে পারে। সে জন্য সমালোচনাও হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের উসকানিমূলক হুমকি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা স্টেডিয়ামকে ক্রিকেটার ও দর্শকদের জন্য নিরাপদ রাখতে চাই।’
বিসিবির অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা মনে করে, এ ঘটনার পেছনে একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধন থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটিও খতিয়ে দেখবে।
বিমাবন্দরের এই ঘটনায় মনক্ষুণ্ন হয়েছে নাঈম শেখের। তাই নিজের হতাশা প্রকাশ করে এক ফেসবুক পোস্টে এই বাঁহাতি ব্যাটার দাবি করেন, ব্যর্থ হলেও ক্রিকেটাররা সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেন। নাঈম শেখ লিখেছেন, ‘আমরা যারা মাঠে নামি, আমরা শুধু খেলি না। আমরা দেশের নামটা বুকে নিয়ে নামি। লাল-সবুজ পতাকাটা শুধু শরীরে নয়, রক্তে মিশে থাকে। প্রতিটা বল, প্রতিটা রান, প্রতিটা শ্বাসে চেষ্টা করি সেই পতাকাটাকে গর্বিত করতে। হ্যাঁ, কখনো পারি, কখনো পারি না। জয় আসে, পরাজয়ও আসে, এটাই খেলাধুলার বাস্তবতা। জানি, আমরা যখন হেরে যাই, তখন আপনাদের কষ্ট হয়, রাগ হয়। কারণ আপনারাও এই দেশটাকে আমাদের মতোই ভালোবাসেন।’
‘কিন্তু আজ যেভাবে আমাদের প্রতি ঘৃণা, গাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছে, তা সত্যিই কষ্ট দেয়। আমরা মানুষ, ভুল করি, কিন্তু কখনও দেশের প্রতি ভালোবাসা-চেষ্টার ঘাটতি রাখি না। প্রতিটা মুহূর্তে চেষ্টা করি দেশের জন্য, মানুষের জন্য, আপনাদের মুখে হাসি ফোটাতে।’
সমালোচনা যৌক্তিকভাবে করা হোক বলেও সমর্থকদের প্রতি আহবান করেছেন নাঈম, ‘ভালোবাসা চাই, ঘৃণা নয়। সমালোচনা হোক যুক্তিতে, রাগে নয়। কারণ আমরা সবাই একই পতাকার সন্তান। জয় হোক, পরাজয় হোক, লাল-সবুজ যেন আমাদের সবার গর্ব থাকে, ক্ষোভের নয়। আমরা লড়ব, আবার উঠব, দেশের জন্য, আপনাদের জন্য, এই পতাকার জন্য।’
এমকে/এসএন