প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আজকে এই দিনটি যে পেলাম, এটা মহান দিন। এটার কথা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে। এমন একটি দিন সেটা শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায় যেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে, সেটার ক্লাসরুমে আলোচনা হবে। রাজনৈতিকবিদদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে বিভিন্ন দেশে। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, তারা কী বলল, আমরা কী চাই। তারা সেটা পারে কিনা, সেটা চেষ্টা করে দেখবে তাদের দেশে এটা সম্ভব কিনা। যেই উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনৈতিকবৃন্দ সৃষ্টি করেছেন, সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর মনে মনে আশা ছিল যে হয়তো দুই একটা বিষয়ে দলগুলোকে একমত করতে পারবো। রাজনৈতিক দলের বক্তব্য শুনলে মনে হয় কেউ কারো কথা শুনবে না। কাজেই ভয়ে ভয়ে এটা শুরু হয়েছিল। প্রফেসর আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। উনি একজন গুণীজন। যে উনি বুঝে বুঝে যদি অগ্রসর হতে পারেন। অবাক কাণ্ড! সারাদেশ দেখলো সমস্ত রাজনৈতিক দল শুধু আলাপে বসলো না, চমৎকার আলাপ করলো। এতো গভীরভাবে, এতো গভীর জ্ঞানের সঙ্গে তাদের মধ্যে আলোচনা হলো, এত সৌহার্দ্যের সঙ্গে আলোচনা হলো- এটা না দেখলে আমাদের বিশ্বাস হতো না।
রাজনৈতিক নেতাদের তিনি বলেন, আপনারা যারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আছেন, বিভিন্ন জায়গায় আছেন, তারা প্রত্যেকে দেখেছেন; কারণ টেলিভিশনে এটা প্রচার হচ্ছিল ক্রমাগতভাবে। কিভাবে তারা তাদের যার যার নীতিগুলো তুলে ধরছেন, বক্তব্যগুলো তুলে ধরছেন- সেটা সব মানুষ শুনতে পেয়েছে। শুনতে পেয়েছে শুধু নয়, তারা অংশগ্রহণ করেছে। মনে মনে অংশগ্রহণ করেছে। ঘরের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক করেছে- কার কথা ঠিক, কার কথা উচিত, কোনটা মানলে ভালো হবে, কোনটা গ্রহণ করা উচিত হবে? এবং সেটা নিজেদের মধ্যে লেখালেখি করেছে, তর্ক-বিতর্ক করেছে।
সারা জাতিকে এটার মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেছে। আপনারা শুধু সীমাবদ্ধ কামরাতে বসে আলাপ করেননি। আপনারা সারা জাতিকে এটার মধ্যে আলোচনার মধ্যে শরিক করেছেন।
তিনি আরও বলেন, কেউ তাৎক্ষণিকভাবে কেউ রাজি হয়ে গেছে এমন ছিল না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল বেশি দূর বোধহয় অগ্রসর হবে না।
কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়ে বোধহয় সমাপ্ত হবে। কিন্তু ক্রমে ক্রমে যত জটিল বিষয় হোক না কেন, ঐক্যমতে এসেছেন। আজকে আমরা একটা দীর্ঘ তালিকা নিয়ে এই সনদ প্রণয়ন করতে পারছি। আমরা রাজনৈতিক দলের সদস্যদের জন্য এবং আমাদের ঐক্যমত কমিশনের সহসভাপতি এবং সদস্যবৃন্দের জন্য জোরে একটা হাততালি দেই- অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য। তারা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে। তাদের নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে। লোকে চিন্তা করবে যে তারা কিভাবে এটা করেছিল।
এমআর/টিএ