জয়া আহসান এখন শুধু একটি নাম নয়, ব্র্যান্ড!

জয়া আহসান নামটির সাথেই মিশে আছে এক ধরণের আবেগ- অনুভূতি। ছোটো পর্দা দিয়ে অভিনয় শুরু করলেও নিজের কঠোর অধ্যবসায় তাকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শীর্ষে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী শুধু বাংলাদেশেই নয় ওপার বাংলায় ও একজন সফল অভিনেত্রী।

সম্প্রতি বেসরকারি এক পডকাস্টে উপস্থিত হয়েছিলেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। পডকাস্টটিতে অভিনয় জগতের বাহিরে ব্যক্তি জয়া আহসানের জীবনের প্রতি দর্শন, চিন্তাভাবনা ও অনন্য ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে আসে।

জয়া আহসানের সাবেক স্বামী ফয়সাল আহসানকে নিয়ে যখন উপস্থাপক প্রশ্ন করেন তখন জয়া অত্যন্ত সরল ভঙ্গিতে বলে,’ আমি তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ছোটো পর্দায় যখন আমার ক্যারিয়ার শুরু হয় তখন সে আমার পাশে থেকেছে। সে আমাকে শিখিয়েছে গুরুজন সহ জীবনের প্রত্যেকটি মানুষকে কীভাবে শ্রদ্ধা করতে হয়। বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও আমরা দুজনই ম্যাচিউর মানুষ হিসেবে একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে পারি।’

কেন নিজের নামের সাথে এখনো আহসান রেখেছেন জয়া এই প্রশ্নটির উত্তর জানতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তরা মুখিয়ে থাকে – এরকম প্রশ্নে জয়া বলেন,” জয়া আহসান আসলে এখন একটি নাম নয় এটি একটি ব্র্যান্ড আর আমি লোক দেখানোর জন্য কোনো ড্রামা একদমই পছন্দ করিনা। একটা মানুষের সাথে বিচ্ছেদ হয়েছে বলে আমি আমার রুট পরিবর্তন করে ফেলবো এরকম উন্মাদ না আমি।”

দুজন তারকার কি একসাথে থাকা উচিত এমন প্রশ্নে জয়া বলেন ‘ আমি আসলে সো কলড দাম্পত্য জীবনে একদম সফল না । দুজন সাধারণ মানুষের একসাথে পথ চলাই অনেক বিশাল ব্যাপার সেখানে তারকা দম্পতিরা অত্যন্ত আবেগী হয়ে থাকে সেটি হয়তো আরো কঠিন ব্যাপার হতে পারে। আর আমি এমনিতই বিয়ে, সংসার ,সম্পর্ককে চালিয়ে নিয়ে যাওয়াকে ভয় পাই।’

সংসার জীবন প্রসঙ্গে জয়া বলেন, ’কে বলেছে আমার সংসার নেই । আমার মা, বোন, গাছ, পৌষ্য এরাই আমার সংসার । আমার মা এখন সন্তানের মতো । মা এর ছোটোবেলার ছবি দেখে মনে করি আমার মেয়ে এখন বড় হয়ে গেছে।’

অতীতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জয়া বলেন, ‘আমি পুরনোতে বাঁচি। পুরনো শুধু অতীত নয়, বর্তমান আর ভবিষ্যতের সেতুবন্ধ।’ তিনি জানান, তার বাসায় এখনও সংরক্ষিত রয়েছে প্রায় ২০০ বছর পুরনো একটি আলমারি। এমনকি যে খাটে তার জন্ম, সেটিও এখনো রয়ে গেছে বাড়িতে।

অভিনেত্রী জয়ার ছোটোবেলা কেটেছে খুব সাধারণ। একটি সাধারণ মুসলিম পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। ছোটোবেলা থেকেই নিজের কাজ নিজে করতেন ।তার পরিবার থেকে তিনিই প্রথম যে অভিনয় জগতে পা রেখেছেন। ছোটোবেলার কথা বলতে গিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি খুব কৃতজ্ঞ আমার ছোটোবেলার প্রতি কারণ মানুষ আসলে ছোটোবেলাতেই তৈরি হয়।’

পডকাস্টটিতে উঠে আসে জয়ার পৌষ্যদের প্রতি অত্যধিক ভালোবাসা । বাড়িতেই তিনটি পৌষ্য আছে তার – কিলওপেট্রা, নিমকি, ডিও। যাদেরকেই ঘিরে তার শরীর ও মন বাঁচে । তিনি বলেন, ওরা আমার বাচ্চা। এছাড়াও তিনি ও কিছু সহকর্মী মিলে বয়স্ক গরু, ঘোড়া, বাজপাখি, কুকুর এদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করেছেন। কারণ সব প্রাণীরাই তার হৃদয়ের খুব কাছে।

শুধু পশুদের প্রতি নয় বৃক্ষদের প্রতি ও রয়েছে জয়ার অসম্ভব টান। তিনি বলেন, ’ আমার ঐশ্বরিক আনন্দ হয় যখন আমি মাটি থেকে গাছ বের হতে দেখি। মাটি আমার কাছে থেরাপিটিক । যত নেচারের কাছে থাকা যায় ভেতরটা তত পরিষ্কার হয়। মানুষের সাথে কথা বলে যতো না আনন্দ পাই গাছের সাথে কথা বলে তার থেকে বেশি আনন্দ পাই , করোনার সময় গাছকে গান শোনাতাম।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক নেগেটিভ কমেন্ট শুনতে হয় অভিনেত্রীকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ’আসলে এসব আমাকে কখনোই প্রভাবিত করে না তাই এটা নিয়ে কথাই বলতে চাইনা। ’
পডকাস্টটির শেষে তার দর্শকদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আপনার বাবা মা দের যত্ন নিন, সময় দিন কারণ বাবা মার ছায়া যখন মাথার উপর থেকে চলে যায় তখনই মানুষ সব হারিয়ে ফেলে।’

আমরা যখন কোনো বই পড়ি তখন আমরা লেখকের জীবন দর্শন থেকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হয়। জয়া আহসানের ব্যক্তিত্ব ও জীবন দর্শন সেই আলো ছড়ানো বইয়ের মতো যার প্রতিটি পাতায় সংগ্রামের সাথে আছে গভীর ভালোবাসা, মমতা, মুগ্ধতা যা কখনো শেষ হবার নয় ।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নিজের এক্স প্রোফাইল থেকে পিএসএল টিমের নাম মুছে ফেললেন রশিদ Oct 20, 2025
img
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক Oct 20, 2025
img
জুলাই সনদে যারা সই করেছে তারা এই দেশকে ধারণ করে না : হান্নান মাসউদ Oct 20, 2025
img
রিশাদকে নিয়ে নান্নুর মন্তব্যে Oct 19, 2025
img
তিনি যা বানাচ্ছেন তা কেউ কখনো করেননি : রণবীর সিং Oct 19, 2025
img
প্রয়োজন শেষে রূপ বদলালেন ড. ইউনূস : জিল্লুর রহমান Oct 19, 2025
img
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির আভাস Oct 19, 2025
img
চাকসুতে নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণের সম্ভাব্য সময় বৃহস্পতিবার! Oct 19, 2025
img
৪৯তম বিশেষ বিসিএসের ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১২১৯ জন Oct 19, 2025
img
জয়া আহসান এখন শুধু একটি নাম নয়, ব্র্যান্ড! Oct 19, 2025
img
যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল ৫১ জনের , আহত অন্তত ১৫০ Oct 19, 2025
img
নতুন বাড়িভাড়া গ্রহণ করে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে যাবেন: প্রত্যাশা শিক্ষা উপদেষ্টার Oct 19, 2025
সকাল বরকত পূর্ণ করার ৫টি উপায় | ইসলামিক টিপস Oct 19, 2025
দীর্ঘ বিরতির পর শূণ্য রানে ফিরলেন কোহলি Oct 19, 2025
পূর্ণিমা সতর্ক করেছেন, সব মানুষ বিশ্বাস করার যোগ্য নয়! Oct 19, 2025
পরীমনির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ইমরান! Oct 19, 2025
img
ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন থেকে সরে আসায় উদ্বেগ জামায়াতে ইসলামীর Oct 19, 2025
img
দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজারের কাছাকাছি Oct 19, 2025
img
শাপলা প্রতীক নিয়ে নীলা ইস্রাফিলের ফেসবুক পোস্ট Oct 19, 2025
img
নোয়াখালীতে বিএনপি ও শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৪০ Oct 19, 2025