বাংলাদেশের বৃহত্তম বিমানবন্দরের একটি কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রপ্তানির ভরা মৌসুমে পোশাক রপ্তানিকারকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
শনিবার (১৮ই অক্টোবর) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো আমদানি এলাকায় এই আগুন লাগে।
এতে রপ্তানিকারকদের বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল, পোশাক এবং পণ্যের নমুনা রাখা গুদামগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, 'আমরা ভেতরে একটি বিধ্বংসী দৃশ্য দেখেছি।'
'পুরো আমদানি বিভাগটি ছাই হয়ে গেছে,' উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষতির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
রোববারও (১৯শে অক্টোবর) স্থাপনাটির পোড়া ধ্বংসাবশেষ থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। দমকলকর্মী ও বিমানবন্দর কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করছিলেন।
বিজিএমইএ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান যোগ করেছেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত পণ্যের মধ্যে 'জরুরি আকাশপথে পাঠানো চালান', পোশাক, কাঁচামাল এবং পণ্যের নমুনা রয়েছে।
তিনি সতর্ক করে দেন যে, নমুনার এই ক্ষতি দেশের বার্ষিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের গুরুত্বপূর্ণ পোশাক শিল্পের ভবিষ্যত ব্যবসাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। 'নতুন ক্রেতা এবং অর্ডার বাড়ানোর জন্য এই নমুনাগুলি অপরিহার্য। এগুলো হারানোর অর্থ আমাদের সদস্যরা ভবিষ্যতের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে,' বলেন তিনি।
বিমানবন্দরের যে কার্গো ভিলেজটিতে আগুন লেগেছে, সেটি বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ততম লজিস্টিকস হাব। এখানে প্রতিদিন ৬০০ মেট্রিক টনেরও বেশি শুকনো কার্গো হ্যান্ডেল করা হয়, যা অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের ব্যস্ত মৌসুমে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
খান বলেন, 'প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি কারখানা আকাশপথে তাদের পণ্য পাঠায়। সেই হিসাবে, আর্থিক প্রভাব ব্যাপক।'
অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো জানা যায়নি এবং একটি তদন্ত চলছে।
উল্লেখ্য, এটি এই সপ্তাহে বাংলাদেশে রিপোর্ট হওয়া তৃতীয় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। মঙ্গলবার (১৪ই অক্টোবর) ঢাকায় একটি পোশাক কারখানা ও সংলগ্ন রাসায়নিক গুদামে আগুনে অন্তত ১৬ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। বৃহস্পতিবার (১৬ই অক্টোবর) চট্টগ্রামের একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে আরেকটি আগুনে একটি সাত তলা পোশাক কারখানার ভবন পুড়ে যায়।
সরকার জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী সব ঘটনা 'পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে' তদন্ত করছে এবং সতর্ক করে দিয়েছে যে 'নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে দ্রুত ও নিষ্পত্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
চীনের পর বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক। এই খাতটি ওয়ালমার্ট, এইচঅ্যান্ডএম এবং গ্যাপের মতো প্রধান বৈশ্বিক খুচরা বিক্রেতাদের পণ্য সরবরাহ করে, প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করে এবং দেশের জিডিপির দশ শতাংশের বেশি অবদান রাখে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে চালান বিলম্বিত হবে এবং আন্তর্জাতিক ডেলিভারির সময়সীমা পূরণে অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
সূত্র: আল জাজিরা